প্রাথমিক সমাপনী ও বৃত্তি কিছুই এ বছর থাকছে না

শুধু এ বছরের জন্য পিইসি বাতিলের প্রস্তাবসহ সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে

স্টাফ রিপোর্টার: চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ দুটি পরীক্ষা শুধু এ বছরের জন্য বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে এই সারসংক্ষেপে। করোনা পরিস্থিতির কারণে সাড়ে ৫ মাস বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় পাঠদান ব্যাহত হওয়ায় এবং কবে নাগাদ বিদ্যালয় খোলা সম্ভব হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় এই প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বলা হয়, পিইসি পরীক্ষা নেয়ার কারণে বার্ষিক মেধাবৃত্তিও দেয়া সম্ভব হবে না। তবে উপবৃত্তি কার্যক্রম চালু থাকবে। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা না নেয়ার প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন মিললে পিইসির পরিবর্তে বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে। মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এবং মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেনের স্বাক্ষর শেষে এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের উপরই নির্ভর করছে পিইসি ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন মঙ্গলবার তার দফতরে সাংবাদিকদের বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের পরীক্ষা গ্রহণ না করার প্রস্তাবসংক্রান্ত সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে বলা হয়, গত ৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে পিইসি পরীক্ষা না নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার সিদ্ধান্ত হয়। সার্বিক পর্যালোচনা করে ২০২০ সালের পিইসি পরীক্ষা না নিয়ে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন করে ষষ্ঠ শ্রেণীতে উন্নীতকরণের কার্যক্রম নেয়া যেতে পারে। এছাড়া ২০২০ সালে পিইসি অনুষ্ঠিত না হলে সমাপনী পরীক্ষার ভিত্তিতে দেয়া মেধাভিত্তিক বৃত্তি দেয়া সম্ভব হবে না। তবে উপবৃত্তি কার্যক্রম চলমান থাকবে। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ২০২০ সালের পিইসি ও ইবতেদায়ি পরীক্ষা গ্রহণ না করার বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সঙ্গে অনুষ্ঠিত একই বৈঠকে চলতি বছরের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাও না নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সারসংক্ষেপ আগামী দু’একদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর কথা রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গত সোমবার বলেন, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। অ্যাপ্রোপ্রিয়েট অথরিটির অ্যাপ্রুভাল এবং অ্যাপ্রোপ্রিয়েট অথরিটির মাধ্যমেই এ ব্যাপারে ঘোষণা দেয়া হবে। মঙ্গলবার পাঠানো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরিস্থিতি বিবেচনায় কিছু কিছু দেশে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় খুলেছে। জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বিদ্যালয়গুলো খুললেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে আবার তা বন্ধ করা হয়েছে। সংক্রমণের পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশে এখনও বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যালয় খুলে দেয়া হলেও অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে নাও পাঠাতে পারেন। এতে যারা বিদ্যালয়ে যাবে এবং যারা যাবে না, তাদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হবে। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) কর্তৃক প্রণীত সংশোধিত পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা নিতে হলে আরও প্রায় ৫০ কার্যদিবস পাঠদান করা প্রয়োজন। সেপ্টেম্বর মাসে বিদ্যালয়সমূহ খোলা না গেলে যে কার্যদিবস পাওয়া যাবে, তাতে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণীর অবশিষ্ট পাঠদান সম্ভব হবে না।

 

সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, পঞ্চম শ্রেণির পাঠ পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৩১ কর্মদিবস নির্ধারণ করা হয়। গত ১৬ মার্চ পর্যন্ত বিদ্যালয় বন্ধের আগে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পাঠদান সম্ভব হয়েছে। গত ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, যা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে মোট ৭১ কার্যদিবস বিদ্যালয়সমূহ বন্ধ থাকবে এবং পঞ্চম শ্রেণীর ৪০৬টি স্বাভাবিক পাঠদান সম্ভব হবে না। তবে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে পঞ্চম শ্রেণীর ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং রেডিওর মাধ্যমে ৯৭.৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে পৌছানো যাবে। এছাড়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষকরা

Comments (0)
Add Comment