বাতাসে নিভে গেছে কেরোসিনের সিগন্যাল ল্যাম্প : ভূতুড়ে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকলো ট্রেন

স্টাফ রিপোর্টার: অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে স্টেশনে ঢুকবে ট্রেন। কিন্তু বাতাসে নিভে গেছে কেরোসিনের সিগন্যাল ল্যাম্প। পয়েন্টম্যান তাড়াহুড়ো করে সিগন্যাল ল্যাম্পে উঠে পুনরায় তা জ্বালিয়ে দিলেন। আর যথাসময়ে সিগন্যাল দেখতে না পাওয়ায় স্টেশন ইয়ার্ডে প্রবেশ না করে অন্ধকার ভূতুড়ে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকলো ট্রেনটি।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মোবারকগঞ্জ স্টেশনের প্রতিদিনের চিত্র এটি। সামান্য বাতাস হলেই নিভে যায় কেরোসিনের সিগন্যাল বাতি। ব্রিটিশ আমলের এই সিগন্যাল বাতির ওপর ভর করেই বহুকাল ধরে চলছে এ অঞ্চলের রাতের ট্রেন। পুরাতন সিগন্যাল ব্যবস্থা, অপারেটিং ত্রুটি, চালকদের অসচেতনতাসহ নানা কারণে প্রায়ই ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা এড়াতে সিগন্যাল ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ জরুরি বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলায় ৪৫ কিলোমিটার রেল সড়কে পাঁচটি স্টেশন রয়েছে। এরমধ্যে সুন্দরপুর রেলস্টেশনটি বর্তমানে বন্ধ। তবে সচল বাকি চারটি স্টেশন এলাকায় সিগন্যাল বাতি রয়েছে ৪২টি। এরমধ্যে ৩০টি কেরোসিন বাতির আলো এবং ১২টি সোলার সিস্টেমে চলে। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন খুলনা, ঢাকা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন রুটে আপ ও ডাউন মিলিয়ে গড়ে ৩০টি ট্রেন যাতায়াত করে।
মোবারকগঞ্জ রেলস্টেশনের পয়েন্টম্যান মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, প্রতিদিনই সন্ধ্যার আগে বাতি জ্বালিয়ে দিলেও বেশিরভাগ বাতির আলো বাতাস কিংবা নানা কারণে নিভে যায়। ট্রেন আসার আগে রাতে সেগুলো আবার জ্বালিয়ে দেওয়া হলেও আবার নিভে যায়। ফলে প্রায়ই সিগন্যাল দেখতে না পাওয়ায় স্টেশন ইয়ার্ডে প্রবেশ না করে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে ট্রেন। কখনও লাইনচ্যুতি কিংবা অন্য দুর্ঘটনাও ঘটে।
কোটচাঁদপুর স্টেশনের পয়েন্ট অপারেটর সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, ব্রিটিশ আমলের এসব সিগন্যাল অপারেট করতেও সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় বাতিগুলো জ্বলে না, বিভিন্ন স্থানে সিগন্যালের তারে ত্রুটি থাকে। তাই সঠিকভাবে সিগন্যাল পরিচালনা করতে ও ট্রেন দুর্ঘটনা এড়াতে রঙিন বাতি ও আধুনিক কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম খুবই জরুরি। ট্রেনের চালকদের ভাষ্য, সিগন্যাল সমস্যার কারণে রাতে দূর থেকে কিছু দেখা যায় না। সিগন্যাল না পেয়ে প্রায়ই স্টেশনে প্রবেশের আগে ট্রেন মাঠের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়। আর রাতে মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে পড়লে যাত্রীরা অনিরাপদ বোধ করেন। মালবাহী ট্রেনের চালক আমিরুল ইসলাম বলেন, যেসব স্টেশনে সিগন্যাল বাতি রঙিন না সেসব স্টেশনে ট্রেন থামাতে হলে ৪৪০ গজ জায়গা লাগে। কিন্তু দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিগন্যাল ঠিকমতো জ্বলে না। ফলে নির্দিষ্ট জায়গা না পাওয়ায় ট্রেন ঠিকমতো থামাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে ঝামেলা হয়। যে কারণে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটছে। কালীগঞ্জ মোবারকগঞ্জ স্টেশন মাস্টার শাজাহান শেখ বলেন, সিগন্যাল ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো আছে। এটি আধুনিক হলে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান হবে। এ বিষয়ে অচিরেই কাজ হবে বলে আমরা আশা করছি।

 

Comments (0)
Add Comment