বিজিবি নামলেও ফেরিঘাটের অবস্থা আগের মতোই

স্টাফ রিপোর্টার: ফেরি বন্ধ ও বিজিবি মোতায়েন করেও ফেরি ঘাটে ঘরমুখী মানুষের স্রোত ঠেকানো যাচ্ছে না। করোনার সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেও লোকজন বাড়ি ছুটছেন। কোনো বাধাই মানছে না। মানছে না স্বাস্থ্যবিধিও। এদিকে শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে গতকাল সকাল থেকে দক্ষিণের জেলাগুলোতে যাওয়ার জন্য হাজার হাজার মানুষ আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে ভিড় আরও বাড়ে। তবে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ কিছুটা কম ছিলো। অন্যদিকে লকডাউনে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকার কথা, কিন্তু ঈদ যাত্রায় মানুষের গ্রামে ফেরার তীব্র আকাক্সক্ষাকে পুঁজি করে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও কৌশলে বিভিন্ন রুটে চলছে দূরপাল্লার বাস। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে। ঈদকে সামনে রেখে গত দুই দিন ধরেই ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। এ কারণে শনিবার সকাল থেকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার টাঙ্গাইলের ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এছাড়া ঘরমুখী মানুষ প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও পণ্য পরিবহনের গাড়িতে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। বিআইডব্লিউটিসি রাতভর ১৫টি ফেরি দিয়ে পারাপার করলেও ভোর থেকে তা বন্ধ করে দেয়। তবে সকাল পৌনে ৮টার দিকে আটটি অ্যাম্বুলেন্সসহ ‘ফেরি ফরিদপুর’ ১ নম্বর ঘাট থেকে ছেড়ে যায়। বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দিনের বেলায় ফেরি বন্ধ। শুধু জরুরি পরিষেবার কিছু যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। সেই ফেরিতেই লোকজন স্রোতের মতো উঠে যাচ্ছে। সকালে শিমুলিয়া ১ নম্বর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ফেরি ফরিদপুরে ওঠার জন্য যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। পুরো ফেরি মানুষে ভর্তি হয়ে যেতে সময় লাগে কয়েক মিনিট। লোকজনের চাপে ফেরির ডালা ওঠানো যাচ্ছিলো না। পুলিশ তখন লাঠিপেটা করে ফেরির ডালা ওঠানোর ব্যবস্থা করে। পরে গাদাগাদি করে ছোট ফেরিটিতে করে প্রায় দেড় হাজার মানুষ ওপারের কাঁঠালবাড়ি ঘাটের দিকে রওনা দেয়। ফেরি ঘাটের আশপাশে জেলে নৌকা ও ট্রলারে করেও অনেকে পদ্মা পার হওয়ার চেষ্টা করেন। পদ্মা নদীর মাওয়া মৎস্য আড়ত সংলগ্ন ঘাট এলাকা, পদ্মা নদীর লৌহজং চ্যানেল এলাকা এবং শিমুলিয়া ঘাট এলাকা থেকে নৌপুলিশ সেসব ট্রলার আটক করে। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় ঈদে ঘরমুখো না হওয়ার জন্য অনুরোধ দেয়া হচ্ছে। তারপরও লোকজনের ভিড় হচ্ছে, এ এলাকায় দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। জেলার বিপুল পরিমাণ পুলিশও কাজ করছে। পুলিশ সুপার মো. আবদুল মোমেন বলেন, শিমুলিয়া ঘাট এলাকাসহ ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আইনশৃঙ্খলা জোরদার করা হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যেন কেউ করতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশ সোচ্চার রয়েছে। মাওয়া নৌ-পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ জেএম সিরাজুল কবির বলেন, ফেরি বন্ধের নির্দেশনার পরও রবিবার প্রচুর যাত্রী শিমুলিয়া ঘাটে আসছে। ফেরিতে উঠতে না পেরে অনেকে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট ট্রলারে করে পদ্মা পার হওয়ার চেষ্টা করে। এসব ট্রলারে এক থেকে দেড়শ যাত্রী উঠেছিলো। ট্রলারের ১২ জন চালককেও আটক করা হয়েছে। লকডাউনে দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকার কথা, কিন্তু ঈদ যাত্রায় মানুষের গ্রামে ফেরার তীব্র আকাক্সক্ষাকে পুঁজি করে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও কৌশলে বিভিন্ন রুটে চলছে দূরপাল্লার বাস। আবার জেলার বাস এবং বিভিন্ন ছোট যানবাহন, এমনকি পণ্যের ট্রাক বা পিকআপে চড়েও অনেকে ঢাকার দিক থেকে ভেঙে ভেঙে শিমুলিয়ায় আসছেন। পদ্মা পার হয়ে দক্ষিণের বিভিন্ন জেলায় যেতে চান তারা। ঢাকা থেকে দক্ষিণের লঞ্চ বন্ধ থাকায় সেসব পথের যাত্রীরাও নিষেধ না মেনে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি হয়ে বাড়ি যেতে চাইছেন।

Comments (0)
Add Comment