স্টাফ রিপোর্টার: দেশজুড়ে চলছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। গতকাল শুক্রবার তাপপ্রবাহের তীব্রতা বৃহস্পতিবারের চেয়ে বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে চলতি বছরে দুই দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ২৮ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় এবং ২৩ এপ্রিল যশোরে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটাও এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর মধ্যে আবহাওয়া অফিস তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি করেছে। তারা বলেছে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাপপ্রবাহ আরও বাড়তে পারে। মৃদু ও মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে দেশের কোনো কোনো এলাকায়। তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা শুক্রবার বেলা ২টায় অধিদপ্তরের পক্ষে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি করেন। সেখানে বলা হয়, ‘দেশের ওপর দিয়ে চলমান মৃদু থেকে মাঝারি তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের চোখ রাঙানি বাড়তে থাকে। ফলে তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালকরা কাজ করতে না পেরে অলস সময় পার করছেন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠা-া পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজনেও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচ- তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন। তীব্র রোদের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালকরা কাজ করতে না পেরে অলস সময় পার করছেন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠা-া পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে স্বল্প আয়ের মানুষরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা ঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচ- দাবদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গায় মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহের পর গতকাল শুক্রবার চলতি মরসুমে প্রথম তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা চলতি মরসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গত বৃহস্পতিবার একই সময়ে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিােল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা বেড়েছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২৮ মার্চ জেলায় এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৪০ শতাংশ। গতকাল শুক্রবার আর্দ্রতা ছিলো ২৪ শতাংশ। প্রচ- তাপপ্রবাহে জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে। চরম গরম অনুভূত হওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। সাধারণ মানুষ ছাতা মাথায় অথবা রিকশায় চলাচল করছেন। এই গরমে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষেরা। তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে তারা মাথায় ক্যাপ অথবা গামছা পরে চলাচল করছেন। কৃষিশ্রমিকেরা বাঁশের তৈরি মাথাল মাথায় দিয়ে খেতে কাজ করছেন। তবে একটু পরপরই অনেককেই ক্লান্ত দেহ নিয়ে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব সোহরাব হোসেন (৬৫) প্রায় ৫০ বছর ধরে গামছা বিক্রি করেন। পাড়া-মহল্লায় ফেরি করে বিক্রির পাশাপাশি শহরের বড়বাজার শহীদ হাসান চত্বরে ফুটপাতে বসেও বেচাকেনা করেন। কাঠফাটা রোদের মধ্যেই শুক্রবার দুপুরে ফুটপাতে গামছা বিছিয়ে তাকে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। মাথায় একটি গামছা দিয়ে বসলেও সমানে ঘামছিলেন। আলাপকালে সোহরাব বলেন, ‘গামছা বিক্রি কইরে চার সদস্যের সংসার চালাতি হয়। আইজ খুবই তাপের দাপট। গরমে গা পুড়ে যাচ্চে। মনডা বলচে না রোদির ভিতরে বসি। প্যাট তো শোনে না।’ জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া বাজারে কথা হয় ভ্যানচালক আবদুল মজিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গরমে তো ভাই গা ঝলসি যাচ্চে। সংসারের খরচ মিটাতি গিয়ে হিমশিম। শরীলির দিকি তাকাইনোর সুমায় কনে?’ চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, ১৩ মার্চ থেকে চুয়াডাঙ্গায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। ওই দিন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ দশমিক ডিগ্রি সেলসিয়াস। পর্যায়ক্রমে ১৬ মার্চ ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৭ মার্চ ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৮ মার্চ ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৯ মার্চ ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩০ মার্চ ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১ এপ্রিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এভাবে ২৩ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৪ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৫ এপ্রিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৬ এপ্রিল ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চলতি মাসের ৭ মে ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গতকাল ৮ মে ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদেরা জানান, ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। সে হিসাবে চলতি মরসুমে জেলায় ১৮ দিন ধরে তাপপ্রবাহ চলছে। এর মধ্যে ১২দিন মৃদু, ৫দিন মাঝারি এবং শুক্রবার একদিন তাপমাত্রা তীব্র তাপপ্রবাহের অঙ্ক ছুঁয়েছে জেলায়।
স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, সকাল থেকেই আকাশ মেঘমুক্ত পরিষ্কার, কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। পশ্চিম থেকে গরম হাওয়া প্রবেশ করায় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। আগামী দুই দিন তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি অব্যাহত থাকবে। এই গরমে রোগব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে কীভাবে চলতে হবে, সে বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, তাপপ্রবাহ চলাকালে প্রয়োজনীয় কাজ দিনের প্রথমার্ধে সেরে নিতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের না হওয়াই ভালো। প্রত্যেককেই পানিসহ বেশি বেশি তরল খাবার ও ফলমূল খেতে হবে। ভাজাপোড়া ও চা-কফি এড়িয়ে চলতে হবে। গরমজনিত রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ শনিবার অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের এবং রাতের তাপামাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। সারা দেশে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা (১-২) ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। সারা দেশে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সোমবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা (১-২) ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। কিছু কিছু জায়গা থেকে তাপপ্রবাহ প্রশমিত হতে পারে।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো/বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।