রমজানে পণ্যের দামের স্থিতিশীলতা নিয়ে সংশয়

স্টাফ রিপোর্টার: আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডাল ও ছোলার দাম টনে ২৫০ থেকে ৫০০ ডলার বাড়তি থাকায় আমদানিকারকরা ধীরগতিতে পণ্য আমদানি করছে। আমদানি হওয়া পণ্য সঙ্গে সঙ্গেই বন্দর থেকে সরবরাহ হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামের গুদামে কোনো পণ্য মজুত নেই। আবার সরকারিভাবে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা পণ্য দেশীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফলে রমজান মাসে এসব পণ্যের দাম ক্রেতাদের সহনীয় পর্যায়ে থাকবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বিক্রেতারা জানান, রমজানে ছোলা, চিনি, ভোজ্য তেল, মসুর ডাল, মটরের বাড়তি চাহিদা থাকে। এবার ছোলা প্রচুর মজুত ও আমদানি হচ্ছে। ফলে ছোলার দাম বাড়বে না। তবে মসুর ও মটর ডালের দাম বাড়তে পারে। এসব পণ্য আমদানি খরচ বেশি পড়ছে। এরই মধ্যে কিছু পণ্য দেশে পৌঁছেছে। আর পাইপলাইনে রয়েছে প্রচুর পণ্য।
ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক সোলায়মান বাদশা বলেন, ‘আমদানি করা পণ্য বন্দর থেকে কন্টেইনারে করে বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে গুদামে কোনো পণ্য মজুত নেই। আর ১৫ দিন পরে রমজানের বেচাকেনা শুরু হবে। তখন বাজারে চাহিদা অনুপাতে পণ্যের সরবরাহ না থাকলে দাম বেড়ে যাবে। বর্তমানে যা আমদানি হচ্ছে তা সরবরাহ হয়ে যাচ্ছে।’
জানা যায়, দেশে চিনির বার্ষিক চাহিদা ১৮ লাখ টন। তার মধ্যে রোজায় চাহিদা থাকে ৩ লাখ টনের। ভোজ্য তেলের বার্ষিক চাহিদা ২১ লাখ টন। তার মধ্যে রমজানের চাহিদা ৪ লাখ টন। মসুর ডালের বার্ষিক চাহিদা ৫ লাখ টন। তার মধ্যে রোজার চাহিদা ৮০ হাজার টন। ছোলার বার্ষিক চাহিদা প্রায় দেড় লাখ টন। এর মধ্যে রোজার চাহিদা ৮০ থেকে ৯০ হাজার টন। পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৫ লাখ টন। এর মধ্যে রোজার চাহিদা ৫ লাখ টন।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার ভোগ্যপণ্যের বাজার বাড়তি মূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে। গত এক মাস যাবত ছোলা, মসুর ডাল, চিনি ও ভোজ্য তেলের মধ্যে ছোলা ছাড়া বাকি পণ্যের দাম কয়েক দফায় বেড়েছে। বিশেষ করে ভোজ্য তেলের দাম বেশি বেড়েছে। দেশের শীর্ষ স্থানীয় ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডাল ও মটর ডালের দাম টনে ২৫০ থেকে ৫০০ ডলার বাড়তি। ফলে দেশীয় বাজারে সামনে তার প্রভাব পড়তে পারে। ছোলার দাম বাড়বে না। তবে পণ্য প্রচুর আমদানি হচ্ছে। বাজারে চাহিদার ঘাটতি হবে না। টিসিবি স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ না করে সরাসরি আমদানি করলে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী নিয়ন্ত্রণ সহজ হতো।’
ডালজাতীয় পণ্য আমদানিকারক আশুতোষ মজুমদার বলেন, ‘ছোলা পাইকারি বাজারে কেজি ৫০/৫২ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। ছোলা এরই মধ্যে প্রচুর আমদানি হয়েছে এবং আরো পাইপলাইনে রয়েছে। আমার ১ হাজার টন ছোলা পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে দেশে পৌঁছবে। অন্য আমদানিকারকদের পাইপলাইনে রয়েছে। তবে মসুর ও মটর ডালের আমদানি খরচ বেশি পড়ছে। তাই এই দুটি পণ্যের দাম সামনে কিছুটা বাড়তে পারে।’ তবে খুচরা বাজার নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে। পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে দ্বিগুণ বেশি দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে চিনি কেজি ৬৬/৬৭ টাকা, ছোলা কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্য তেল নিয়ে সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত্ সাহা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকার বাজার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেই দামে আমরা বিক্রি করছি। ১৫ দিন পর আবার সরকারের সঙ্গে আমরা বসব। ভোজ্য তেল প্রচুর মজুত আছে এবং আমদানিও হচ্ছে। ফলে বাজারে সংকট হবে না।’
টিসিবি সূত্র জানায়, রমজান মাসে যাতে ভোগ্যপণ্যের বাজার বাড়তে না পারে সেই লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আড়াই কোটি লিটার ভোজ্য তেল, ৬০০ টন ছোলা, ১৭ হাজার টন মসুর ডাল ও ১৩ হাজার টন চিনি কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ডিলারদের মাধ্যমে খোলা বাজারে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে। টিসিবি চট্টগ্রাম কার্যালয়ের প্রধান কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকারিভাবে ছোলা ও মসুর ডাল আমদানি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৭২০ টন ছোলা বন্দরে পৌঁছেছে। আরো পাইপলাইনে রয়েছে। চিনি ও ভোজ্য তেল স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করা হবে। সামনে খোলা বাজারে ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রি বাড়ানো হবে।’
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার টন ছোলা, ৩০ হাজার টন মসুর ডাল ও ১০ হাজার টন খেজুর আমদানির আইপি নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তবে ঢাকায় প্রধান কার্যালয় থেকেও আইপি ইস্যু করা হচ্ছে। বর্তমানে ১ লাখ টন ছোলা বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে।’
পেঁয়াজের বাজার এখন ক্রেতাদের সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। দেশীয় পেঁয়াজ বাজার দখল করে আছে। নতুন করে মেহেরপুর এলাকা পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, গত দুই-তিন মাস যাবত দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। মিশরীয় ও তুরস্কের পেঁয়াজও সীমিত পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে কেজি ২৮ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে ৪০/৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আড়তদার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘দেশীয় পেঁয়াজ বাজার দখল করে আছে। দাম বেশি হওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে আসছে না। টিসিবিও খোলা বাজারে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। রমজানে দেশীয় পেঁয়াজের সংকট হলে ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তখন দাম বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।’

Comments (0)
Add Comment