রাজধানীর দিকে ছুটছেন রোগী

শয্যা খালি নেই : করোনা রোগী সামলাতে ডাক্তারদের হিমশিম

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশ থেকে রাজধানী অভিমুখে ছুটছেন রোগীরা। ঢাকার সরকারি কোন হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি নেই। বাইরে থেকে ঢাকায় এসে রোগীরা ঘুরছেন অ্যাম্বুলেন্সে অ্যাম্বুলেন্সে। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। কোথাও ঠাঁই নেই। হাসপাতালগুলো রোগীতে ঠাসা। পুরাতন রোগী ছাড়পত্র পেলেই কেবল নতুন রোগী ভর্তি সম্ভব। এই সংখ্যাটাও খুবই কম। তাই করোনাসহ অন্যান্য রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। চিকিৎসকরাও রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ঢাকার বাইরের রোগীদের অবস্থা একটু জটিল হলেই উপজেলা বা জেলা হাসপাতালগুলো থেকে রোগীদের ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। অথচ ঢাকায় এসে এসব রোগী হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি হতে পারছেন না।
অন্যদিকে রোগীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্বাভাবিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়ে কেউ কেউ মারাও যাচ্ছেন। বাইরে থেকে আসা রোগীদের চাপে ঢাকার হাসপাতালগুলো বেসামাল হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ হাসপাতাল বাইরের রোগীতে ঠাসা। ঢাকার বাইরে থেকে প্রতিদিনই রোগী আসছে। বাইরে চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার কারণে বর্তমানে ঢাকামুখী রোগীর স্রোত। উপরন্তু করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে। গতকাল পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৩২ দশমিক শূন্য ৫৫ শতাংশ। অর্থাৎ করোনা পরীক্ষায় প্রতি তিন জনে একজন পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হচ্ছেন। সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে রোগীর বাড়তি চাপ সামলাবেন কিভাবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকরা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, দেশের অর্ধেক জেলায় আইসিইউ নেই। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা বিরাজ করছে। বিভাগীয় হাসপাতালগুলোতে সক্ষমতার বাইরে চলে গেছে রোগী। অনেক হাসপাতালে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে। রোগীরা জেলা-উপজেলায় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ঢাকায় ছুটছে। সারাদেশ থেকে এভাবে ঢাকায় রোগী আসা অব্যাহত থাকলে সামনে মহাবিপদ অপেক্ষা করছে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, করোনা রোগীরা আইসিইউ পর্যন্ত যাবে কেন। সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবার যে ব্যবস্থা আছে, তাতে করোনা রোগীরা সঠিক সময়ে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা পেলে আইসিইউয়ের প্রয়োজন হতো না। সারাদেশে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যন্ত চিকিৎসা সেবার পর্যাপ্ত অবকাঠামো আছে। কিন্তু জনবলের তীব্র সংকট। করোনার আসার পর প্রায় দেড় বছর সময় পেয়েছি। তবে সময় পেয়েও আমরা সঠিকভাবে তা কাজে লাগাতে পারিনি। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
করোনার শুরুতে আমেরিকার মতো দেশও সামাল দিতে পারেনি। দিশা হারিয়ে ফেলেছিল। পরে তারা টিকা দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা সেবার সক্ষমতাও বাড়িয়েছে। কিন্তু আমরা চিকিৎসা সেবার সক্ষমতা বাড়াতে পারেনি। এখন ফিল্ড হাসপাতালের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফিল্ড হাসপাতালের কোন দরকার নেই। অস্থায়ী ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ নিয়ে ইউনিয়ন পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা যে অবকাঠামো আছে সেগুলো সচল রাখা গেলে এক থেকে দেড় মাসে কন্ট্রোল করা সম্ভব। এছাড়া বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোকে সরকারের উদ্যোগে কাজে লাগানো যেতে পারে। কিন্তু এসব না করে মন্ত্রণালয় কোন পথে হাঁটছে? হয়তো অজ্ঞতা, নয়তো অন্য কিছু। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ রোধে শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে একা দায়ী করা ঠিক হবে না। অন্যান্য মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব রয়েছে। তারাও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না।
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান বলেন, এই হাসপাতালকে পুরোপুরি কোভিড হাসপাতাল করা হয়েছে। ৩০০ শয্যা থেকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। গতকাল ৫০টি বেড বাড়ানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও দেড়শ’ বেড বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, প্রতিদিন হাসপাতালে করোনার রোগীর চাপ বাড়ছে। এদিকে রাজধানীর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালসহ রাজধানীর অধিকাংশ হাসপাতালে প্রতিদিন করোনার রোগীর চাপ বাড়ছে।

Comments (0)
Add Comment