রোজার পণ্যমূল্য বৃদ্ধি দুই মাস আগেই

 

স্টাফ রিপোর্টার: প্রতিবছর রমজান মাসকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। রোজার কয়েক মাস আগেই নীরবে বাড়িয়ে দেয় নিত্যপণ্যের দাম। যাতে রমজানের শুরুতে অথবা কয়েকদিন আগে এসব পণ্যের দাম বাড়াতে না হয়। অন্যদিকে ভোক্তারাও যেন বলতে না পারেন-‘রমজান ঘিরে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে।’ আবার রমজানের ঠিক আগমুহূর্তে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যবসায়ীরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো কোনো পণ্যের দাম সামান্য কমিয়েও দেন। বছরের পর বছর চলছে তাদের এই অপকৌশল। আর এর মাধ্যমে ওইসব ব্যবসায়ী প্রতিবছর নিরীহ ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার কোটি টাকা। এবারও সেই চক্রটি একই কৌশল অনুসরণ করছে। রমজাননির্ভর পণ্যের দাম দুই মাস আগেই বাড়ানো হচ্ছে। আগামী মার্চে শুরু হচ্ছে রমজান। কিন্তু অসাধুদের এই কারসাজির কৌশল ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও সব সময়ই রহস্যজনক কারণে ‘নীরব দর্শকের ভূমিকায়’ থাকে কর্তৃপক্ষ। নেয়া হয় লোক দেখানো কিছু পদক্ষেপ। কিন্তু আসে না কোনো কার্যকর ফল। কোনো বছরই ওইসব ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং নির্বিঘেœ চালিয়ে গেছেন তাদের অপকর্ম। তাদের জাঁতাকলে কোনো কারণ ছাড়াই পিষ্ট হচ্ছেন সাধারণ ভোক্তা। এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, বরাবর দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা রমজানে পণ্যের দাম খুব কম বাড়ায়। রমজান আসার আগেই তারা কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দেয়। অসাধুরা পরিকল্পিতভাবে কয়েক বছর ধরে এমনটা করছেন। এ কারণে সংস্থাগুলোর মনিটরিংও আগেভাগেই করতে হবে। কঠোর তদারকির মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যা আগে কখনোই নেয়া হয়নি। তিনি জানান, অযৌক্তিক মুনাফা করতে ব্যবসায়ীরা সময় ও সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়ায়। তাই দাম নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। রোববার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে এবং খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ নভেম্বর থেকে শুরু করে চলতি মাসের ১৫ তারিখ রোববার পর্যন্ত দুই মাসের ব্যবধানে রমজাননির্ভর পণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি ছোলায় ৫ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা। যা দুই মাস আগে ৮৫ টাকা ছিলো। প্রতিলিটার বোতল সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা, আগে ছিলো ১৮০ টাকা। দাম বেড়েছে লিটারে ৫ টাকা। প্রতিকেজি চিনি ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। যা দুই মাস আগে ছিলো ১১০ টাকা। কেজিপ্রতি ছোট দানার মসুর ডালে ১০ টাকা বেড়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগে ১৩০ টাকা ছিলো। প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুরে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা। যা দুই মাস আগে ৪০০ টাকা ছিলো। পাশাপাশি প্রতিকেজি গুঁড়াদুধের দাম দুই মাসে বেড়েছে ৩০-১০০ টাকা। বর্তমানে ব্র্যান্ডভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮২০-৯০০ টাকা। যা আগে ৭৯০-৮০০ টাকা ছিলো। সম্প্রতি সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, বাজারে পর্যাপ্ত পণ্যের সরবরাহ আছে। মূলত বাজার ব্যবস্থাপনায় সমস্যা বলেই সেটা নিয়ে প্রথম পর্যায়ে পণ্যের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, সেই দামটা বাজারে কার্যকর হচ্ছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। তৃতীয়ত, কেউ উচ্চ লাভের আশায় মজুতদারি করেছে কিনা এসব আমরা মনিটরিং করছি। তিনি আরও বলেছেন, এ কথা ঠিক যখন একটু সংকট হয় তখন অনেক সময় বড় করে সেটাকে দেখিয়ে কেউ কেউ সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করে। তবে বলতে চাই, পণ্য যথেষ্ট পরিমাণ মজুত রয়েছে। এলসি খোলার যথেষ্ট চেষ্টা চলছে। রমজান মাসে সমস্যা হবে না বলেই আমরা মনে করছি। কাওরান বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. আসলাম বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এতেই সাধারণ মানুষের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতির মধ্যে দুই মাস পর রোজা শুরু হবে। কিন্তু খেয়াল করে দেখলাম বাজারে রমজাননির্ভর পণ্যের দাম বিক্রেতারা নীরবে বাড়াতে শুরু করেছে। তাই এখন থেকেই বাজারে তদারকি করতে হবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। রমজানকে টার্গেট করে বিশেষভাবে তদারকি করা হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। দরকার হলে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেয়া হবে। কোনো ছাড় দেয়া হবে না।

Comments (0)
Add Comment