রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকা- ১১ জন নিহত

স্টাফ রিপোর্টার: কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ জনে দাঁড়িয়েছে। সময় আগুনে প্রায় ১০ হাজার বসতবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অগ্নিকা-ের কারণ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
কক্সবাজার ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ সচিব মো. মহসীন এই তথ্য জানান। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায় এই ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। সচিব জানান, মৃতদের মধ্যে ক্যাম্প-৮-এর ই-তে একজন, একই ক্যাম্পের ডব্লিউ ব্লকে পাঁচজন এবং ক্যাম্প-৯-পাঁচজন মারা গেছেন। নিহত রোহিঙ্গাদের ১১ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ। তারা হলেন সলিমউল্লাহ (৫৫), রফিক আল (২৫), আবদুল্লাহ (৮), আসমাউল (৭), মিজানুর রহমান (৪), বশির আহমদ (৬৫), খতিজা বেগ (৭০), মো. একরা (৩), এমদাদ উল্লাহ (২৪), তসলিমা (৪), মোশারফা (৩)। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রারেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সাতজনের মরদেহ উদ্ধার করার কথা জানান। তিনি বলেন, ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু-দৌজা নয়ন বলেন, আগুনে পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার ঘর পুড়ে গেছে। প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে গেছেন। কক্সবাজারের ডিসি মো. মামুনুর রশীদ জানান, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত সাত সদস্যের এই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন। অগ্নিকা-ের কারণ উদঘাটন এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তদন্ত কমিটিকে। এদিকে, মঙ্গলবার সকাল থেকে পুড়ে ছাই হওয়া জায়গায় ফিরে আসতে দেখা গেছে রোহিঙ্গাদের। দলে দলে পরিবারসহ পুরোনো ঠিকানায় ফিরছে তারা। অনেকেই ঘর করার নতুন কাঠ, বাঁশ নিয়ে ফিরছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে আহত মানুষের সেবা দিচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত আমির হোসেন ও গোলাহোসেন দুই ভাই জানান, তাদের বাড়িঘর ও খাবারসহ সব পুড়ে গেছে। তারা পরিবারসহ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন। রোহিঙ্গা মরিয়বেগ জানান, তার ঘর পুড়ে যাওয়ায় পরিবারসহ পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সোমবার অগ্নিকা-ের ঘটনা শেষে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। অনেকেই বিভিন্ন ক্যাম্পে তাদের স্বজনদের বাড়িতে চলে গেছে। এছাড়াও হাজারো রোহিঙ্গা নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে পরিবারসহ স্থানীয় গ্রামগুলোতে ঢুকে পড়েছে। তাদের মধ্য থেকে অনেকেই স্থান না পেয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করেছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহমদ নিজাউদ্দিন বলেন ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় ধারণা করা হচ্ছে অন্তত ১০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের বসতি পুড়ে গেছে। একইভাবে শতাধিক বাংলাদেশি পরিবারের বসতবাড়ি পুড়ে গেছে। সোমবার বিকেল ৪টায় বালুখালী ৮-ডব্লিউ নম্বর ক্যাম্পে প্রথআেগুন লাগে। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে লাগোয়া ৮-এইচ, ৯, ১০ ও ১১ নম্বর ক্যাম্পে। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাতাসের গতিবেগ বেশি হওয়ায় আগুন দ্রুত পার্শ্ববর্তী ক্যাম্পগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। সর্বশেষ রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুড়ে গেছে ১০ হাজারেও বেশি রোহিঙ্গাদের ঝুঁপড়ি ঘর। এছাড়াও পুড়ে গেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও অফিস ও পুলিশ ব্যারাক।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা বালুখালী কাসেমিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গার অনেকের স্বজন নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় বাংলাদেশিদের প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতি পুড়ে গেছে। উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক জানান, আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা তদন্তসাপেক্ষে বলা যাবে।

Comments (0)
Add Comment