র‌্যাবের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ফের আহ্বান

ঢাকা-ওয়াশিংটন প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংলাপ : সামরিক চুক্তি নিয়ে ‘গঠনমূলক’ আলোচনা

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে দুই দেশের নিয়মিত প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংলাপের অষ্টম পর্ব ওয়াশিংটনে সম্পন্ন হয়েছে। সংলাপে র‌্যাবের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ফের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। অপরদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি সামরিক চুক্তি-আকসা ও জিসোমিয়া সম্পাদন এবং বাংলাদেশে সমরাস্ত্র বিক্রি করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় বুধবার ওয়াশিংটনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহী। আকসা ও জিসোমিয়া নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।

জানা গেছে, আগামী বছর ঢাকায় পরবর্তী প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। এই এক বছর সময়ে চুক্তি দুটির কাঠামো তৈরি হবে বলে ঢাকার তরফ থেকে আশা করা হচ্ছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে অনুষ্ঠিত সংলাপে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র দপ্তরের আর্মস কন্ট্রোল ও ইন্টারন্যাশনাল নিরাপত্তা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি বনি ডেনসি জেনকিনস। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার উজ জামান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, জননিরাপত্তা বিভাগ, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রতিনিধি।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিকে বাংলাদেশ গভীরভাবে মূল্য দেয়। মার্কিন প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারকে উৎসাহ দিয়ে দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত সংলাপ হওয়ার উল্লেখ করেছে। দিনব্যাপী বৈঠকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহযোগিতা, প্রস্তাবিত সামরিক চুক্তি, প্রতিরক্ষা ক্রয়, সমুদ্রে নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা ইস্যু, সন্ত্রাসদমন, বেসামরিক মানুষের নিরাপত্তা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়।

বাংলাদেশ পক্ষ র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বিশদ আলোচনায় বাংলাদেশ পক্ষ সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ দমনে র্যারবের ভূমিকা তুলে ধরে।

অপরদিকে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে আগামীতে তা আরও জোরদার হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্যাপন উপলক্ষ্যে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেনের সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আশাব্যঞ্জক আলোচনা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে বাংলাদেশের কনসুলেট জেনারেল উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্যাপন উপলক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পক্ষ হতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রেরিত শুভেচ্ছা বার্তা অনুষ্ঠানে পড়ে শোনান ড. মোমেন। এ সময় জো বাইডেনের চিঠির ভাষ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জো বাইডেন লিখেছেন : “৪ এপ্রিল আমরা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্যাপন করছি, যা আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

ঈররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলতে বাংলাদেশের মানুষের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, দেশকে সমৃদ্ধ করা, উদ্ভাবনী কর্মপ্রচেষ্টায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য একটি মডেলে পরিণত হয়েছে।” তিনি বলেন, জো বাইডেন তার চিঠিতে দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারত্বের সম্পর্ক আগামী ৫০ বছরে নিঃসন্দেহে আরও শক্তিশালী হবে।

মায়ামিতে বাংলাদেশের কনসুলেট জেনারেল উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ফ্লোরিডায় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের অভিনন্দন জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফ্লোরিডায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী মায়ামিতে বাংলাদেশের এই কনসুলেট জেনারেল স্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন। এই কনসুলেট জেনারেল স্থাপনের ফলে এই অঞ্চলে আমাদের কনসুলার সেবা প্রদান আরও সহজ ও উন্নত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরপর কনসুলেটে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু কর্নারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে ফিতা কেটে কনসুলেট জেনারেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিশেষ ছিলেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা ও স্বাগত বক্তব্য রাখেন মায়ামিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদ। অনুষ্ঠানে মায়ামির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Comments (0)
Add Comment