শর্তসাপেক্ষে আজ থেকে চলবে বাস ট্রেন ও লঞ্চ

স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে চলমান ‘লকডাউন’র (বিধিনিষেধ) মেয়াদ আরও ৭ দিন বাড়ানো হয়েছে। ফলে ৩০ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ বহাল থাকবে। তবে একই সঙ্গে ৪৮ দিন পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস, লঞ্চ ও ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহণ চলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁয় আসন সংখ্যার অর্ধেক মানুষ বসে খেতেও পারবে। এসব শর্তে বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়িয়ে রোববার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। আদেশে বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের সঙ্গে দুটি নতুন শর্ত সংযুক্ত করে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হলো। এটা ২৩ মে মধ্যরাত থেকে ৩০ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। শর্ত দুটি হলো- ১. আন্তঃজেলাসহ সব ধরনের গণপরিবহণ আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। তবে অবশ্যই যাত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক পরাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ২. হোটেল, রেস্তোরাঁ ও খাবার দোকানে মোট আসনের অর্ধেক ফাঁকা রেখে গ্রাহক বসে খেতে পারবেন। ঈদুল ফিতরের আগে জেলার ভেতর অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলের অনুমতি দেয়া হলেও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিলো। ঈদের পর লকডাউনের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানো হলে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচলের বিধিনিষেধ বহালই ছিলো। এছাড়া এতদিন খাবারের দোকানে বসে খাওয়ার অনুমতি ছিল না, তবে খাবার বিক্রি বা সরবরাহ (টেকওয়ে বা অনলাইন) করার সুযোগ ছিলো। দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চালু হওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রোধে ৫ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে লকডাউন শুরু হয়। ওইদিন থেকেই মূলত বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহণ বন্ধ করে দেয় সরকার। তবে সেই শিথিল লকডাউন ছিলো অনেকটাই অকার্যকর। পরে ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ৮ দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। এ সময় পালনের জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়। পরে কয়েক দফায় সেই লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২৩ মে মধ্যরাতে। এই সময়ের মধ্যে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়। এই বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি- বেসরকারি অফিস আগের মতোই বন্ধ আছে। তবে উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি রয়েছে। ‘জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনা’য় নিয়ে রোজার আগে বিধিনিষেধ শিথিল করে দোকানপাট ও শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছিলো। এখনও সেই নিয়মই বহাল আছে। ৪৮ দিন পর চলবে ট্রেন-দূরপাল্লার বাস-লঞ্চ : করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে ৫ এপ্রিল থেকে সারা দেশে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভাইরাসটির সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় আজ (সোমবার) থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল শুরু করবে দূরপাল্লার বাস, ট্রেন ও লঞ্চ। রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন রোববার গণমাধ্যমকে বলেছেন, সোমবার (২৪ মে) থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হচ্ছে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল। সারা দেশে ২৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন এবং নয় জোড়া মেইল ও কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে। এক আসন ফাঁকা রেখে বিক্রি করা হবে টিকিট। ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হবে। কাউন্টারে কোনো টিকিট বিক্রি হবে না, সব টিকিট দেয়া হবে অনলাইনে। সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। লঞ্চ চলাচলের বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক জানান, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লঞ্চগুলোকে যাত্রী পরিবহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিষয়গুলো মনিটর করার জন্য আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।’ এক প্রশ্নের উত্তরে কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, ‘ডেকে (তৃতীয় শ্রেণি) ও চেয়ার আসনের যাত্রীদের বাড়তি ৬০ ভাগ ভাড়া কার্যকর থাকবে। কেবিনে আগের ভাড়া বহাল থাকবে।’ রোববারই দূরপাল্লার বাস চলাচলের বিষয়ে ৪ দফা নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- ১. মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রী গাড়িতে উঠানো যাবে না। বাসের চালক, সুপারভাইজার/কন্ডাকটর, হেলপার এবং টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদেরও অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। তাদের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান-পানি, হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। ২. গাড়িতে সিটের অর্ধেক যাত্রী নেয়া যাবে। এজন্য বিআরটিএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যাত্রীদের কাছ থেকে বর্তমান ভাড়ার চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি আদায় করা যাবে। ৩. যাত্রা শুরু ও শেষে গাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ৪. গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়াদি মেনে চলতে হবে।

Comments (0)
Add Comment