শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আরও দুসপ্তাহ বাড়লো : মিশ্র প্রতিক্রিয়া

স্টাফ রিপোর্টার: করোনা সংক্রমণ রোধে আরও ২ সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, সারা দেশে এখন করোনা সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। এই পরিস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আমাদের শ্রেণিকক্ষের পাঠদান যে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ আছে। সেই বন্ধের সময়সীমা আরও দুই সপ্তাহ বৃদ্ধি করা হবে। তিনি বলেন, আমি আশা করি, আমরা সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবো। তার মাধ্যমে আমাদের করোনা সংক্রমণের হার কমে আসবে। আমরা শিগগিরই শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের জায়গায় নিয়ে যেতে পারবো। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই ছুটি বৃদ্ধিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সব স্বাভাবিক রেখে এই ছুটি বৃদ্ধি হওয়ায় ক্ষুব্ধ অনেকেই।
রাইতুল ইসলাম ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকতে থাকতে মানসিক সমস্যায় ভুগছি। দম বন্ধ পরিবেশ। কয়েকদিন মাত্র গেলাম আবার বন্ধ। করোনা সংক্রমণ রোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।
স্বাভাবিকভাবে চলছে গণপরিবহন, শপিংমল সব। স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও। কড়াকড়িও নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবুও বন্ধ করে দেয়া হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আলতাফুর রহমান এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা দেড় বছর পিছিয়ে গেছে। ছোট শিক্ষার্থীরা অনেকে অক্ষর পর্যন্ত ভুলে গেছে। তিনি আরও বলেন, একটা নিয়ম চালু করা যেতে পারে শহরাঞ্চলে অনলাইনে ক্লাস আর গ্রামাঞ্চলে চলুক সশরীরে ক্লাস। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অবিলম্বে চালুর জন্য সুপারিশ করেছে ইউনিসেফ। ইউনিসেফ’র নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর এক বিবৃতিতে বলেন, স্কুল খোলা রাখুন। স্কুলগুলো পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ থাকার কারণে বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৬১ কোটি ৬০ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত। কোভিড-১৯ এর ওমিক্রন ধরনটি সারা বিশ্বে যখন ছড়িয়ে পড়ছে, এটি যাতে শিশুদের পড়াশোনাকে ব্যাহত করতে না পারে, সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে আমরা সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই।
অভিভাবক ফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, আমরা এই ভিন্ন পরিস্থিতিতে বাণিজ্যমেলা মাসব্যাপী করলাম। সেখানে নিশ্চিতভাবে গণজমায়েত হয়েছে। বাণিজ্যমেলা করা গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন বারবার আঘাত করা হচ্ছে? করোনার স্থবিরতায় ১০১ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। ‘এন্টি সুইসাইডাল স্কোয়াড’র সহ-সভাপতি আমানুল্লাহ আতিক বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যা করোনার থেকেও ভয়াবহ। এভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপে রাখার কোনো মানেই হয় না। আমি বলবো অতি দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক। আর শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে উদ্যোগ নেয়া হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখতেই হবে। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছি। শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। তারা অনলাইনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। হচ্ছে বাল্যবিয়ে। তাই স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে জোর দিয়ে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া প্রয়োজন।

Comments (0)
Add Comment