শিশু জন্মের একদিনের মধ্যে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার: শিশু জন্মের একদিনের মধ্যে নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের সংশোধন ছাড়াই শতভাগ জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে সমন্বিত বেশকিছু উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। আইনে শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে বাধ্যতামূলক নিবন্ধনের কথা বলা হয়েছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকে বিদ্যমান প্রক্রিয়ার ত্রুটিবিচ্যুতি চিহ্নিত করে নিবন্ধন কার্যক্রম আরও জোরদার ও নির্ভুল এবং ডুপ্লিকেশন বন্ধ করতে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানা গেছে। এ লক্ষ্যে নিবন্ধন সহজীকরণ ও সফটওয়্যার আপডেট করাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে রেজিস্ট্রার্ড কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেল মানিক লাল বণিক এ ব্যাপারে বলেন, একদিনের মধ্যে নিবন্ধন নিশ্চিত করা গেলে অনেক সমস্যাই সমাধান হবে। মুজিববর্ষের মধ্যেই শতভাগ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। দেশের সব নাগরিকের আইনগত পরিচিতি নিশ্চিত করতে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে ২০০৪ সালে প্রথম আইন প্রণীত হয়। ২০০৬ সালে আইনের বিধিমালা জারি করা হয়। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হলেও গত ১৬ বছরে এটি শতভাগ নিশ্চিত করা যায়নি। অনলাইনে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রম গতিশীল, ব্যবহারবান্ধব, সেবাধর্মী করতে দুই দফায় এ বিধিমালা সংশোধন করে সর্বশেষ ২০১৮ সালে যে বিধিমালা জারি করা হয়, তাতেও বড় ধরনের অগ্রগতি হয়নি। এর আগে ২০১৩ সালে হসর্বশেষ দফায় আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। ১৭টি সরকারি সেবাপ্রাপ্তি ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং ৪টি সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও সবার জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নিশ্চিত হয়নি বলে রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। ব্যাপকহারে জন্ম নিবন্ধন ডুপ্লিকেট হচ্ছে। ডুপ্লিকেশন রোধে সারাদেশের জন্য একটি ডাটাবেজ সফটওয়্যার গড়ে তুলতে জোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। রেজিস্ট্রার কার্যালয় ও সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ও বড় শহরেই ডুপ্লিকেশন বেশি হচ্ছে।
অন্যদিকে নিবন্ধন হচ্ছে না বা নিবন্ধনের বাইরে থেকে যাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্মগ্রহণকারী শিশুরা। নিবন্ধন ফি বাবদ আয়ের অর্থের সঠিক হিসাবও পাওয়া যাচ্ছে না। আয়ের খাত এবং আয়ের অর্থাৎ জন্ম নিবন্ধন ফি নিয়ে রয়েছে, নানা প্রশ্ন। কারণ দেশের একেক জায়গায় একেক ধরনের ফি নির্ধারণ করা হচ্ছে। স্থানীয় নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে এবং আদায়ও করে থাকেন। গ্রাম বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিবন্ধন ফি দিতে হত-দরিদ্র অভিভাবকরা আগ্রহী নন, অনেক ক্ষেত্রে সামর্থ্য-সঙ্গতিও নেই। যে কারণে নবজাতকের নিবন্ধন করাতেও তারা আগ্রহী হন না। মৃত্যু নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ফি নির্ধারণ, আদায় ও ব্যয়ের হিসাব পরিচালনা পদ্ধতি আধুনিকায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়। অঞ্চলভেদে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ফি নির্ধারণ করে দেয়া যায় কি না তা নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এখন থেকে পরবর্তী কিছু বছরের জন্য জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের ফি মওকুফ করার সুপারিশ করেছে। তাদের বক্তব্য ও সুপারিশ হচ্ছে সরকারকে সব কিছুতেই ফি আদায়ের মানসিকতা পরিহার করতে হবে। সরকারকে হতদরিদ্র মানুষের জন্য মানবিক ও উদার হতে হবে। সেবা প্রদানের মানসিকতা ফি আদায় করে নিশ্চিত করা যায় না। বিনামূল্যে সেবা দিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে আগে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়, পৌর এলাকায় পৌর মেয়র অফিস, সিটি করপোরেশন এলাকায় মেয়র কার্যালয় এবং দেশের ক্যান্টনম্যান্ট এলাকায় ক্যান্টনম্যান্ট বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তারা। দেশের বাইরে বিভিন্ন হাইকমিশন ও দূতাবাসে কর্মরতদের সন্তান জন্মের পর দূতাবাস কর্তৃপক্ষ নিবন্ধন করে থাকে। বিশ্বের ৫৫ দেশে ১৬২টি কেন্দ্র রয়েছে নিবন্ধনের জন্য।

Comments (0)
Add Comment