স্টাফ রিপোর্টার: নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। সাহিত্যের পাশাপাশি টিভি ও সিনেমা অঙ্গনেও তিনি রেখে গেছেন অমরত্বের ছাপ। তার হাত ধরেই তারকাখ্যাতি পেয়েছেন অনেক গুণী অভিনয়শিল্পী। যাদের মধ্যে অন্যতম ডা. এজাজুল ইসলাম।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এ অভিনেতা বিজ্ঞাপন, নাটক ও সিনেমায় সমানতালে অভিনয় করছেন। আজ হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে প্রিয় ব্যক্তিত্বের স্মৃতিচারণ করে যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন এ অভিনেতা।
ডা. এজাজ: স্যারের সঙ্গে আমি প্রথম কাজ করি ‘সবুজ সাথী’ নামে একটি নাটকে। এটি ১৯৯৮ সালের দিকে। ওই নাটকে ছোট একটি (স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠকর্মী) চরিত্র করেছিলাম। এরপর থেকেই স্যারের প্রতিটি নির্মাণে আমার থাকার সুযোগ হয়েছে। তার পরিচালনায় ১৯৯৯ সালে প্রথমবার ‘শ্রাবণ মেঘের দিনে’ নামে সিনেমায় পরান নামে একটি চরিত্রে অভিনয় করি।
ডা. এজাজ: নাট্যজগতে তিনি এমন এক নক্ষত্র ছিলেন যে, তার শূন্যস্থান কখনো পূরণ হবে না। স্যার যেভাবে নাটক লিখতেন ও পরিচালনা করতেন, এখনো এ পর্যায়ের কাছাকাছি কেউই নেই। বর্তমানে আসলে ওই ধরনের নাটকও হয় না। দর্শকের মধ্যেও একটা পরিবর্তন এসেছে। ব্যক্তি হিসাবেও তিনি ছিলেন অসাধারণ মানুষ। শুটিং ও এর বাইরে একই রকম মানুষ ছিলেন।
সব সময় সবার খেয়াল রাখতেন। কখনোই আত্মপ্রচার করতেন না। এমনও দেখেছি, কনকনে শীতে রাত, কোথাও মানুষ ঘুমিয়ে আছে, আস্তে করে গিয়ে গায়ের ওপর কম্বল দিয়ে আসতেন। মানবিক কাজ সব সময় করতেন। কখনো দেখানোর জন্য কিছু করতেন না। কোনো ক্যামেরায় ও সে দৃশ্য ধারণও হতো না। প্রচারের জন্য নয়, হৃদয় থেকেই কাজগুলো করতেন। এ বিষয়গুলো এখনো মানুষ জানে না।
তিনি বলছেন, এছাড়া তার বহু গুণের আরও একটি গুণ হচ্ছে তিনি ছিলেন নির্লোভ মানুষ। যা করতে ইচ্ছা হতো তা বিশাল করে করতেন। মনের আনন্দ ও প্রশান্তির জন্য তিনি সবই করতেন। খুব অল্পতেই খুশি হয়ে যেতেন। এমনও হয়েছে যে, আপনার কাছে এটি খুব ছোট কাজ বা সামান্য মনে হবে, কিন্তু দেখা যাবে এটির জন্যই স্যার অনেক খুশি হয়ে গেছেন, যা আপনি ভাবতেও পারেননি। একবার তো এক বৃষ্টির দিনে খাবারের তালিকায় ইলিশ মাছ রাখা হয়েছিল। ব্যাপারটি খুব স্বাভাবিক, কিন্তু তিনি যখন দেখলেন যে খাবারের টেবিলে ইলিশ মাছ, অনেক খুশি হয়ে গেছেন। তাকে খুশি করা খুব সহজ ছিল। তবে স্যার মিথ্যা বলা খুব অপছন্দ করতেন।
ডা. এজাজ: একবার স্যার আমার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে ‘গুড জব ডাক্তার’ বলে বাহবা দিয়েছিলেন। ওই সময় তার কাছে এমন সাধুবাদ পাওয়া ছিল আমার কাছে অমূল্য। স্যারের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার ফলে তিনি নির্মাণের নানা কাজে আমার ওপর ভরসা করতেন। ‘শ্যামল ছায়া’ নামে একটি সিনেমার শুটিংয়ে একটা ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল আমাকে। স্যারের ঠিক করে রাখা শুটিং লোকেশনে গিয়ে দেখি, সেখানে শুটিং করা সম্ভব নয়। ওই মুহূর্তে এটি স্যারকে জানাতেও পারছিলাম না। তাকে দুশ্চিন্তায় না ফেলে, আমি অন্যত্র শুটিং লোকেশন ঠিক করি। স্যার আমার কাজ দেখে অবাক হয়ে যান। তিনি খুব খুশি হয়েছিলেন ও আমার প্রশংসা করেছিলেন। এটি আমার সুখকর একটি স্মৃতি। এমন অনেক স্মৃতি রয়েছে তার সঙ্গে। যা বলেও শেষ হবে না। এক দিন নুহাশ পল্লীর জায়গা দেখতে যাই আমরা। সেদিন তার সঙ্গে রিকশায় চড়ে গ্রামের রাস্তায় ঘুরেছি। সে স্মৃতি তো কখনোই ভোলার নয়। ওইদিন জানতে পেরেছি স্যার বৃষ্টিতে ভিজতে খুব পছন্দ করতেন।
ডা. এজাজ: আমার লেখার অনুপ্রেরণা আসলে হুমায়ূন স্যার। পাঠক তার কোনো নতুন লেখা পাচ্ছেন না। আর পাবেনও না। কিন্তু তার রেখে যাওয়া বইগুলো এখনো সমানে বিক্রি হচ্ছে। স্যারের নতুন লেখা পাব না, ওই তাগিদটা কাজ করেছে আমার মধ্যে। সেই মানুষটার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। এ ছাড়া তার সম্পর্কে এখনো মানুষের অনেক কিছুই অজানা। আমার কাছে মনে হয়েছে এসব মানুষের জানা দরকার। তাকে নিয়ে ‘আমার হুমায়ূন স্যার’ নামে প্রথম স্মৃতিগন্থ প্রকাশ করেছিলাম। এখন থেকে নিয়মিত লেখালেখি করব। কারণ এক দুটি বইয়ে তাকে নিয়ে লেখে শেষ করা সম্ভব নয়।
ডা. এজাজ: ভালো লাগে। তবে অনেকেই আমাকে বলেন, আমি কেন আমার ভিজিট ৩০০ টাকার বেশি করছি না। আমার স্টাফরাও আমাকে বলে, আমার জুনিয়র ডাক্তাররাও আমার চেয়ে বেশি ফি’ নেয়, আর আমি বিশেষজ্ঞ হয়েও ভিজিট কম। এতে মানুষ আমাকে সন্দেহ করবে, আমার মানসম্মান থাকবে না। কিন্তু আমি এসব নিয়ে চিন্তা করি না। আমৃত্যু আমার ভিজিট ৩০০ টাকাই থাকবে। এত টাকার পেছনে ছুটে কী হবে? আমি মনে করি অপ্রয়োজনীয়ভাবে টাকার পেছনে ছোটা একটি মানসিক ব্যাধি। আমি খেতে পরতে পারছি, চিকিৎসা থেকে শুরু করে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচও আল্লাহ চালানোর সুযোগ দিয়েছেন। আমি তো ভালো আছি। এর চেয়ে বেশি টাকার তো আমার মনে হয় না প্রয়োজন আছে।
ডা. এজাজ: ‘দেনা পাওনা’ নামে একটি ধারাবাহিকে অভিনয় করছি। বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। এ ছাড়া কিছু খণ্ডনাটকও করছি। আগের মতো এখন অভিনয়ে এত ব্যস্ততা নেই। তবে অভিনয়ের মধ্যেই আছি। এটি আমার ভালোবাসা বলা যায়।