চুয়াডডাঙ্গা ও মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ উল্লাস : মিষ্টি বিতরণ
স্টাফ রিপোর্টার: ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে অবশেষে আওয়ামী লীগকে সাময়িক নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গতাকল শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে একাধিকবার ক্ষমতায় থাকা দলটিকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক শেষে রাত ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। আইন উপদেষ্টা লিখিত বক্তব্যে বলেন, শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। এদিকে, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ সারাদেশে আনন্দ মিছিল করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। একই সাথে মিষ্টি বিতরণের খবর পাওয়া গেছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। ড. আসিফ নজরুল বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেস-সহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে। উপদেষ্টা বলেন, এর পাশাপাশি আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকাকালে নানা অপকর্মে জড়িয়ে যায়। সবশেষ গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বল প্রয়োগের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে ঘৃণিত হয়। সেই আন্দোলন ঠেকাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই আন্দোলনে পঙ্গু হওয়া হাজার হাজার মানুষ এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা হারান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পালিয়ে যান ভারতে। এরপর থেকে দলটি কার্যত অস্তিত্বহীন। ছন্নছাড়া অবস্থায় রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। নেতাদের অনেকেই বিদেশে পালিয়ে গেছেন, কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। বেশির ভাগ নেতা দেশে গা ঢাকা দিয়ে আছেন। লাখো কর্মী প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বলে পরিচয় দেয়ার মতো পরিস্থিতিও নেই তাদের। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি উঠে আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধও ঘোষণা করা হয়। তবে বিএনপিসহ কোনো কোনো দল এবং সরকারের মনোভাব ছিলো কোনো দল আইন করে নিষিদ্ধ না করা। তবে গত ৭ মে গভীর রাতে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নতুন করে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন জোরদার হয়। জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা আবার এই দাবি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন। সেখানে দুই দিন আন্দোলন শেষে তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। একই দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানেও আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। অবশেষে শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার অনেকটা বাধ্য হয়ে আওয়ামী লীগের মতো অন্যতম বৃহৎ দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিলো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের আওতায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের খবরে চুয়াডডাঙ্গা ও মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়েছেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পথচারীদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করতেও দেখা গেছে। চুয়াডাঙ্গায় আনন্দ মিছিল করেছে ছাত্র জনতা। রাত পৌনে ১২ টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ থেকে বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ হাসান চত্বরে এসে মিছিলটি শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবির, হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ মুহূর্তে খবর এলো, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো; এই মুহূর্তে খবর এলো, সন্ত্রাসী লীগ নিষিদ্ধ হলো; হৈ হৈ রৈ রৈ, সন্ত্রাস লীগ গেলি কইসহ বিভিন্ন সেøাগান দিয়ে খুলনার শিববাড়ি মোড়ে আনন্দ মিছিল করেন। গতকাল শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবির, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ, ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন সংগঠন সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ মিছিলে অংশ নেন।