স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় আনুষ্ঠানিকভাবে আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আঁটি, গুটি ও বোম্বাই আম সংগ্রহের মধ্যদিয়ে পাকা আমের বাজারজাতকরণও শুরু হয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের এই জেলায়। এ ছাড়া তাপপ্রবাহের কারণে গাছে পেকে যাওয়ায় হিমসাগর আম সংগ্রহের সময়কাল দুই দিন এগিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বুজরুকগড়গড়িতে জেলা ফল ও আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল কুদ্দুস মহলদারের ‘মহলদার আম্রকাননে’ আম সংগ্রহের মধ্য দিয়ে এ বছর সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, জেলা মার্কেটিং বিভাগ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও আমচাষি সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘অনুকূল পরিবেশে এবার আমের ভালো ফলন হবে। আমের সরবরাহ ও বাজারজাতকরণে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, আমরা সেদিকে খেয়াল রাখব। তবে আমে কোনো ধরনের কীটনাশক বা রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা না হয় সে বিষয়ে আমচাষিসহ সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, চুয়াডাঙ্গা দেশের অন্যতম আম উৎপাদনকারী জেলা হলেও সেভাবে প্রচার-প্রচারণা নেই। এ জন্য মার্কেট প্লেস দরকার। মহাসড়কের পাশে একটি মার্কেট প্লেস তৈরির বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। এতে আমচাষি, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা খুব সহজে আম বেচাকেনা করতে পারবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘যেহেতু টেম্পারাচার বেশি এই কারণে আম সংগ্রহের সময়কাল কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে। আমরা সেদিকটা বিবেচনা করছি। চাষিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং প্রশাসনের অনুমতিক্রমে হিমসাগর আম সংগ্রহের সময় দুই দিন এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে তা লিখিতভাবে জানানো হবে।’ জেলা ফল ও আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল কুদ্দুস মহলদার বলেন, ‘যদি কোনো বাগানে আম আগাম পেকে যায় তাহলে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সঙ্গে আলাপ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা নির্ভয়ে ইচ্ছামতো চুয়াডাঙ্গার আম খাবেন। এই আমে ফরমালিন বা ক্ষতিকর কিছু মেশানো হয় না।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. শরীফুজ্জামান শরীফ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হাসান, প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা সেন দেবাশীষ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষ্ণ রায়, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিন বিনতে আজিজ ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজার তদারকি কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম। এছাড়া, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি ও সহ-সভাপতি রফাতুল্লাহ মহলদার ও আমচাষি আব্দুল কাদের সোহানসহ আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আজ আঁটি, গুটি ও বোম্বাই সংগ্রহ শুরু হলো। পর্যায়ক্রমে ২০ মে থেকে হিমসাগর, ২৮ মে থেকে ল্যাংড়া, আগামী ৫ জুন থেকে আম্রপালি (বারি আম-৩), ১৫ জুন থেকে ফজলি ও ২৮ জুন থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হবে। জেলায় এ বছর ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির আমবাগানে আমের চাষ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ১৫ মেট্রিক টন হিসেবে ৩৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার বাজার মূল্য ২০০ কোটি টাকা। চুয়াডাঙ্গার মাদরাসাপাড়ার আমচাষি আব্দুল কাদের সোহান বলেন, আম পরিবহনে সড়কে কোথাও যেন ভোগান্তি না হয় সেদিকে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা সহজে আম পরিবহন করতে পারেন। এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বাজার তদারকি কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম বলেন, কোন আমচাষি কিংবা ব্যবসায়ী যেই হোক না কেন সড়কে যদি কোনো অসুবিধার সম্মুখিন হন, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই জানাবেন। এ বিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা থাকবে।