চুয়াডাঙ্গায় টানা কয়েকদিনের তাপদাহের পর স্বস্তির বৃষ্টি বজ্রপাতে মেহেরপুরের গাংনীতে ও কুষ্টিয়ার মিরপুরে ২ জন নিহত

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় টানা ৯দিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ চলার পর গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে। বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে শুরু হয়ে প্রায় এক ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টি হয়। এ সময় বজ্রপাতও দেখা যায়। আকস্মিক এই বৃষ্টিতে দীর্ঘ তাপদাহে কষ্টে থাকা মানুষজন কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। এদিকে, বজ্রপাতে মেহেরপুরের গাংনীতে একজন ও কুষ্টিয়ার মিরপুরে একজন নিহত হয়েছেন। বৃষ্টির সময় বজ্রপাতে তারা মারা যান। চুয়াডাঙ্গায় টানা কয়েকদিনের তাপদাহের পর স্বস্তির বৃষ্টিতে জনজীবনে প্রশান্তি। ঝড় আর বৃষ্টিতে পাল্টে যেতে থাকে চুয়াডাঙ্গার গুমট আবহাওয়া। কয়েকদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়। তীব্র থেকে অতিতীব্র তাপদাহ অব্যাহত ছিলো। ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ট হয়ে ওঠে জনজীবন। বিকেল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিলো। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঝড়ো বাতাস আর বৃষ্টি শুরু হয়। একপসলা বৃষ্টিতে প্রকৃতিতে প্রাণ ফিরে পায়। নিমিষেই কমে যায় গরম। হাঁসফাঁস অবস্থায় ছিল জনজীবন। সূর্যের প্রখরতার কাছে অসহায় হয়ে পড়ে সব বয়সের মানুষ। গরমের কারণে দিনের বেশিরভাগ সময় মানুষ ঘরের বাইরে তেমন একটা বের হতো না। কয়েক দিনের প্রতীক্ষার পর বৃষ্টির দেখা মিললো। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, টানা কয়েকদিনের তাপ প্রবাহের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ ছিল ৫৪ শতাংশ। এ মরসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ঝড়ো বাতাসের সাথে বৃষ্টি শুরু হতে থাকে। বৃষ্টি নামার সাথে সাথে গরম কমতে থাকে। জনজীবনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করে। চুয়াডাঙ্গা গাড়াবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আনিসুজ্জামান বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা অনেক বেশি। গরমে খুব কষ্ট হচ্ছিল। বাইরে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছিল না গরমের কারণে। বৃষ্টি শুরু হলে গরম কমতে থাকে। একপশলা বৃষ্টিতে গরম কেটে গেছে। জীবননগর উথলি গ্রামের হাসান বলেন, সূর্যের প্রখরতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছিলাম অনেকদিন। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হলেও চুয়াডাঙ্গাতে বৃষ্টির দেখা মিল ছিল না। কষ্টে দিন যাপন করছিলাম। আজকের বৃষ্টিতে প্রশান্তি নেমে এসেছে। আবহাওয়া শীতল হয়েছে। গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরের গাংনীতে পৃথক দুটি স্থানে বজ্রপাতে এক নারী নিহত এবং আরেকজন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বজ্রসহ বৃষ্টি চলাকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তি হলেন, রায়পুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী কিয়ামুদ্দিনের স্ত্রী রিতা খাতুন। আহত নারী সাহারবাটি গ্রামের বাবলুর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাঠ থেকে বোরো ধান কেটে গাড়িতে করে বাড়ি আনা হচ্ছিল। রিতা খাতুন ওই গাড়ির পিছে পিছে বাড়ি আসছিলেন। বজ্রপাতে তিনি গুরুতর আহত হলে স্থানীয়রা তাকে নিয়ে আসে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই সময়ে সাহারবাটি গ্রামের বাবলুর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন বাড়ির টিউবয়েলে পানি তুলতে গিয়েছিলেন। বজ্রপাতে গুরুতর আহত হলে তাকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুষ্টিয়ায় রেফার করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন গাংনীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার জাহিদুল ইসলাম। এদিকে রিতার মৃত্যু নিশ্চিত করলে স্বজনরা মরদেহ বাড়িতে নিয়ে গেছে। কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুষ্টিয়ার মিরপুরে মাঠে তামাকের গাছ কাটার সময় বজ্রপাতে এক কলেজ ছাত্র নিহত হয়েছে। এ সময় আরেকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া ইউনিয়নের খাড়ারা মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ সময়ই বজ্রপাতে খাড়ারা এলাকার শামসুদ্দিনের ছেলে বিজয় (২১) নিহত হন এবং একই এলাকার আক্কাস আলীর ছেলে সুজন (৩০) আহত হন। নিহত বিজয় কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বেলা ৪টার মিরপুর উপজেলা জুড়ে তীব্র বজ্রপাতসহ বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় খাড়ার মাঠের মধ্যে বিজয় ও সুজন দুইজনই তামাক গাছের ডাটা কাটছিলেন। মেঘের শুরুতেই হঠাৎ তীব্র বজ্রপাতে দুইজন আহত হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিজয়কে মৃত ঘোষণা করেন এবং সুজনকে মুমূর্ষ অবস্থায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিলো বলে জানা যায়। মিরপুর থানার ওসি মমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।