দামুড়হুদার ছয়ঘরিয়া গ্রামে পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে নৃশংসতা প্রকাশ্যে দিবালোকে মা-বাবার সামনে স্কুলছাত্রকে কুপিয়ে খুন

দর্শনা অফিস: দামুড়হুদার ছয়ঘরিয়া গ্রামে পারিবারিক বিরোধের জেরে রিয়াদ হোসেন নামের স্কুলছাত্রকে দিনদুপুরে বাবা-মায়ের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার দর্শনা থানাধীন পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামে এ খুনের ঘটনা ঘটে। নিহত রিয়াদ হোসেন (১৩) ছয়ঘরিয়া গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমানের ছেলে এবং দর্শনা মেমনগর বিপ্রদাস (বিডি) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলো। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি একই গ্রামের হযরত আলী। স্কুলছাত্রের হত্যার পর অভিযুক্ত হযরত আত্মগোপনে চলে গেছেন। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী অভিযুক্ত খুনি হযরতের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে মোটরসাইকেলসহ আসবাবপত্র। হযরতের মা ও স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। খবর পেয়ে পুলিশ সুপার গোলাম মওলা, দামুড়হুদা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জাকিয়া সুলতানা ও দর্শনা থানার ওসি শহীদ মো. তিতুমীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বিকেলে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। স্কুলছাত্রের মৃত্যুতে গ্রামজুড়ে শোকাবহ পরিবেশ দেখা দিয়েছে। পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, দর্শনার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া ব্যাকপাড়ার বায়তুল্লাহ’র মেয়ে বিউটির বিয়ে হয় একই গ্রামের ডাঙ্গাপাড়ার আনোয়ার হোসেনের সাথে। মাসখানেক ধরে স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বের কারণে বিউটি পিতার বাড়ি চলে আসে। এ দিকে আনোয়ারের সাথে বন্ধুত্ব মোমিন কাজির ছেলে জিয়ারুল ইসলাম জিয়ার। বিউটির ভাই হযরত তার ভগ্নিপতি আনোয়ারের সাথে মিশতে নিষেধ করেন জিয়াকে। এ নিয়ে দু পরিবারের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে জিয়ারুল ইসলামের দর্শনা মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মাহমুদুল হাসান রিয়াদ বাড়ির পাশের মাঠ থেকে খেলাধূলা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় পথিমধ্যে হযরত অকথ্য গালাগালি করে রিয়াদকে। এক পর্যায়ে হযরতকেও গালি দিয়ে দৌড়ে বাড়ি ফেরে রিয়াদ। পরপরই দুপুর দুটোর দিকে হযরত ও তার ভাগ্নে বিদ্যুৎ ধারালো হেঁসো নিয়ে হামলা চালায় জিয়ারুলের বাড়িতে। দুপুরের ভাত খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো রিয়াদ। ঠিক সেসময় হামলা চালানো হয়। রিয়াদের বাবা-মা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তাদের মারধর করা হয়। ভয়ে পালানোর চেষ্টা করলে প্রকাশ্য দিবালোকে প্রধান সড়কে বাবা-মায়ের চোখের সামনেই স্কুলছাত্র রিয়াদের গলায় কোপ মারেন। এতে সঙ্গে সঙ্গেই রিয়াদ মারা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা কিছু বুঝে উঠার আগেই এ খুনের ঘটনা ঘটেছে বলেও জানায়। এ ঘটনার পরপরই গ্রামবাসী ক্ষব্ধ হয়ে হযরতের বাড়ি গিয়ে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে। একই সাথে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় হযরতের মা ফাহিমা বেগম কুকিয়া ও স্ত্রী সুমাইয়া পালানোর চেষ্টা করলে গ্রামবাসী তাদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে। পুলিশ হযরত ও আনোয়ার হোসেনের ছেলে বিদ্যুৎকে গ্রেফতারে জন্য কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) জাকিয়া সুলতানা, দর্শনা থানার ওসি শহীদ তিতুমীরসহ সঙ্গীয় ফোর্স। বেলা ৫ টার দিকে পুলিশ রিয়াদের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নিয়েছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে। দর্শনা থানার ওসি শহীদ তিতুমীর জানান, আটককৃত দুজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হযরত ও বিদ্যুৎকে গ্রেফতারে পুলিশি জাল বিস্তার করা হয়েছে। নিহত রিয়াদের পরিবারের পক্ষ থেকে চলছে মামলার প্রস্তুতি। এ দিকে অভিযুক্ত খুনি হযরত ও বিদ্যুৎসহ সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয়েছে গোটা গ্রামবাসী।