স্টাফ রিপোর্টার: জুলাই-আগস্টের আন্দোলন দমনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ১৫০০ মানুষকে হত্যা, মরণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে ২৫০০০ মানুষকে আহত, নারী ও শিশুদের টার্গেট করে আক্রমণ করাসহ নানা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। হেলিকপ্টার-মারণাস্ত্র দিয়ে গুলি করে আন্দোলনকারীদের নিশ্চিহ্ন করার নির্দেশসহ ৫টি অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে। এসব অপরাধ সংগঠনে শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশ ও বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লেলিয়ে দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গতকাল তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন পাওয়ার পর এক প্রেস ব্রিফিংয় এসব কথা বলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আনসার উদ্দিন খান পাঠানের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের তদন্ত দল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ প্রতিবেদন জমা দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই প্রথম কোনো মামলায় তদন্ত শেষ হলো। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, গণহত্যায় সরাসরি নির্দেশ দেয়ার বিষয়ে হাসিনার একাধিক ফোনালাপের সত্যতা পাওয়া গেছে। আমাদের তদন্ত সংস্থা শেখ হাসিনার কিছু টেলিফোনিক কনভারসেশন জব্দ করেছেন। এসব কনভারসেশনে সুস্পষ্টভাবে তদন্ত দল নিশ্চিত হয়েছে যে, তিনি রাষ্ট্রীয় সকল বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়াও হেলিকপ্টার, মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের নিশ্চিহ্ন করার নির্দেশসহ ৫টি অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে প্রায় ১৫০০ মানুষকে হত্যা এবং ২৫০০০ মানুষকে আহত করা হয়েছে। টার্গেট করে শিশু হত্যা, নারীদের ওপর হামলা, আহতদের হাসপাতালে নিতে ও চিকিৎসা নিতে বাধা, নিজে গিয়ে এসব রোগীকে চিকিৎসা দেয়া যাতে না হয় সেই নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। এমন সব তথ্য প্রমাণ মিলেছে। তিনি বলেন, হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসিসহ মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরস্ত্র, নিরীহ আন্দোলনকারী যে সিভিলিয়ান পপুলেশন, যারা বাংলাদেশে একটি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত ছিল, তাদেরকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন বা নির্মূল করার জন্য তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন। চিকিৎসক, ভুক্তভোগী, শহীদ পরিবারের লোক, ভিডিও, অডিও, নিহত আহতদের শরীর থেকে পাওয়া গুলি, হেলিকপ্টারের ফ্লাইট শিডিউল, অনেক সাক্ষীদের জবানবন্দি, আসামিদের জবানবন্দি এই তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে। জুলাইয়ে আন্দোলন চলাকালে গত ১৪ জুলাই রাজাকারের বাচ্চা বলে উস্কানি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের ওপর লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল। তার উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরই এসব অপরাধীরা আন্দোলন দমনে নৃশংস হামলা চালায়। তিনি বলেন- মূলত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৫টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলেও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ২টি অভিযোগের ব্যাপারে ব্রিফিং করেছে। এসব অভিযোগগুলো হচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনে শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশ দেয়া এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে গণহত্যায় লেলিয়ে দেয়া। বাকি অভিযোগগুলো পরে জানানো হবে। চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে কিনা, সে বিষয়ে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের যে সংশোধন হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠন যদি অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়, সে ক্ষেত্রে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা যাবে এবং বিচারে কি কি শাস্তি দেয়া যাবে, তা বলা হয়েছে। শনিবার রাতে মাত্র আইনটি করা হয়েছে। এখন আমরা ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নেবো যে, কোনো রাজনৈতিক দলের বিষয়ে তদন্ত করা হবে কিনা। বিচারের মুখোমুখি করা হবে কিনা। তাজুল ইসলাম বলেন, রাজপথের চাপের ভিত্তিতে কোনো বিচার হবে না, সুষ্ঠু বিচার করতে হলে সময় একটু প্রয়োজন। তাই তাড়াহুড়ো করে মামলা বিপথে নিতে চান না তারা। অঞ্চলভিত্তিক তদন্ত যেগুলো হয়েছে সেগুলোর তদন্ত চলছে।