নির্বাচন কমিশনের সভায় আচরণ বিধির খসড়া নীতিগত অনুমোদন নির্বাচনি প্রচারে পোস্টারের ব্যবহার বাতিলের প্রস্তাব

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের পোস্টার ব্যবহার বাতিলের বিধান যুক্ত করে ‘সংসদ নির্বাচনে দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা’র খসড়া সংশোধনী নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। খসড়া নীতিমালায় ইসির উদ্যোগে সব দলের প্রার্থীকে এক মঞ্চে প্রচারের ব্যবস্থা, প্রচারে টি-শার্ট ও জ্যাকেট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা শিথিল, সার্কিট হাউজ, ডাকবাংলো ও রেস্ট হাউজ ব্যবহারের ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। আচরণবিধি মানতে প্রার্থীর ও দলীয় অঙ্গীকারনামা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কড়াকড়ি এবং জরিমানা তিন গুণ বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’র সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সপ্তম সভায় এ বিধিমালা অনুমোদন দেয়া হয়। অবশ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আরপিও সংশোধনের ওপর ভিত্তি করে আচরণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। এর আগে কমিশনের ওয়েবসাইটে খসড়া বিধিমালা প্রকাশ করা হবে, যাতে মানুষ এর ওপর মতামত দিতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে কমিশনের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় চার জন নির্বাচন কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জাতীয় সংসদের সীমানা সংক্রান্ত বিষয় এজেন্ডায় ছিল। আচরণ বিধিমালা সংশোধনীর ওপর দীর্ঘ সময় আলোচনা হওয়ায় ঐ বিষয়টি নিয়ে আগামী সপ্তাহে কমিশনের আরেকটি সভা হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রধান আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)। ঐ আইনের অধীনে একটি বিধিমালা হচ্ছে ‘সংসদ নির্বাচনে দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা’। জুলাই সনদের অপেক্ষায় আরপিও সংশোধন চূড়ান্ত করছে না ইসি। তবে আরচণ বিধিমালার খসড়া কাজ এগিয়ে রাখল কমিশন। কমিশন সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে গুরুতর অপরাধ করলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের বিধান আরপিওর ৯১ ধারায় রয়েছে। এটা আচরণ বিধিমালাতেও সন্নিবেশ করা হচ্ছে। অতীতে নির্বাচনি প্রচারে বিলবোর্ড ব্যবহার ছিল না, সেটাকে যুক্ত করা হচ্ছে। পোস্টার ব্যবহার বাদ দেওয়ার ব্যাপারে সংস্কার কমিশনেরও যে প্রস্তাব ছিল, তাতে আমরাও একমত হয়েছি। আমরা পোস্টার ব্যবহার বাদ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছি। ব্যানার, ফেস্টুন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইত্যাদি বিষয়ে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে যারা বিবেচিত হন, সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাম-লীর সদস্যদেরকেও যোগ করা হয়েছে। সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যেমন সার্কিট হাউজ, ডাক বাংলো, রেস্ট হাউজ ব্যবহারের ওপরে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে। কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এ কমিশনার বলেন, নির্বাচনি প্রচারে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা হয়েছে। প্রচার প্রচারণায় পরিবেশবান্ধব সামগ্রীর ব্যবহারের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনি প্রচারের শব্দের মান সর্বোচ্চ ৬০ ডেসিবল করা হয়েছে। এছাড়া ভোটার স্লিপ ইন্ট্রোডিউস করার ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচনি প্রচারে টি-শার্ট, জ্যাকেট ইত্যাদির ব্যাপারে অতীতে যে বিধিনিষেধ ছিল, সেটার ব্যাপারে একটু শিথিল মনোভাব পোষণ করা হয়েছে। অস্ত্রের সংজ্ঞায় আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি দেশীয় অস্ত্রকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচনে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারের ওপর বিশদভাবে আলোচনা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না সেই বিষয়গুলোকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। প্রচারণার সময়সীমা আগের মতো তিন সপ্তাহ বহাল রাখা হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে থাকতে পারবে না জানিয়ে এ কমিশনার বলেন, যেসব প্রার্থী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা সদস্য হিসেবে পরিচালনা পর্ষদে থাকবেন বা মনোনীত হয়েছেন, তাদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর সেখান থেকে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আচরণবিধিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে কোনো ধরনের বৈদেশিক বিনিয়োগ ‘না’ করা হয়েছে। এতে অভিন্নভাবে একটি প্ল্যাটফরম থেকে সব প্রার্থী যাতে ইশতেহার ঘোষণা করতে পারেন বা করেন, সেটির বিধান করা হয়েছে। পাশাপাশি গণমাধ্যমের সংলাপে অংশগ্রহণ এবং আয়োজনে সম্মতি দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, খসড়ায় আচরণবিধি ভঙ্গ করলে আগের তুলনায় জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিধিমালা লঙ্ঘনে ছয় মাস কারাদ- এবং জরিমানা ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় লাখ টাকা করা হয়েছে। এটি সংস্কার কমিশনের একটা প্রস্তাব ছিলো। আর প্রার্থী ও দলের জন্য অঙ্গীকারনামা নতুনভাবে সংযোজিত করা হয়েছে। আরপিও সংশোধনের আগে আচরণ বিধিমালা সংশোধন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘আমরা একটি খসড়া আচরণ বিধিমালা নীতিগত অনুমোদন করেছি। আরপিওর সংশোধনের বিষয় আছে আবার রাজনৈতিক কনসেন্সাসের ভিত্তিতে যদি কিছু পরিবর্তন সংশোধন হয়, সেটাও করতে হতে পারে। সুতরাং এটা খসড়া আকারেই ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করব।