দর্শনা অফিস: এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত ও দেশের সর্ব বৃহত্তম ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান কেরুজ কমপ্লেক্স। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ চিনিকল ঐতিহ্যের দিকেই শুধু সেরা নয়, বরাবরই এগিয়ে মুনাফা অর্জনের দিকেও। দেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে কেরুজ চিনিকল সবদিক থেকেই এগিয়ে সর্বক্ষেত্রেই। ঐতিহ্যবাহী কেরুজ চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীরা আজ অবহেলিত। বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণসভায় যেমন পাননি নিমন্ত্রণপত্র, তেমনি ভোটাধিকার প্রয়োগেরও সুযোগ নেই কোনো নেতার। আগামী ২০ জুলাই শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণসভা। এ সভা থেকেই ভোটের সাম্ভাব্য দিন হতে পারে ২৮ জুলাই। প্রতি নির্বাচনে ফেডারেশনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদের একটি হলেও নির্বাচিত হয়ে থাকেন কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কোনো না কোনো নেতা। সে সুযোগ নেই এবার। যেহেতু ভোটার হতে পারছেননা, সেহেতু পদ-পদবি পাওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। ১৯৩৮ সালে কেরুজ চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হলেও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৮ সালে। সে থেকেই প্রতি ২ বছর পরপরই এ ইউনিয়নের নির্বাচন হয়ে আসছে সঠিকভাবেই। স্মরণকালের রেকর্ড ভেঙে কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হয়েছে এবার। সঠিক সময়ে যেমন হয়নি ভোট, তেমনি এ ভোট নিয়ে শুরু থেকেই চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। আইনি বেড়াজালে আটকে থাকা নির্বাচন একপক্ষ চাইলেও আরেকপক্ষ করছে তার বিরোধীতা। ফলে আটকে গেছে নির্বাচনি কার্যক্রম। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন দেখার অপেক্ষার পালা থাকলে বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারি ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সাধারণসভা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২০ জুলাই। ১৪ জুন গঠিত ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়নে সাধারণসভা থেকেই আগামী ২৮ জুলাই নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হতে পারে বলেও একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। কেরুজ, রাজশাহী, নাটোর, জয়পুরহাট, নর্থবেঙ্গল, ঠাকুরগাও, ঝিলবাংলা, মোবারকগঞ্জ, ফরিদপুর, রংপুর, পঞ্চগড়, কুস্টিয়া, পাবনা, শ্যামপুর, সেতাবগঞ্জ চিনিকল, রেইন উইক যজ্ঞেশ্বর ও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের শ্রমিক ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন। বছর কয়েক আগে রংপুর, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া, পাবনা, সেতাবগঞ্জ ও শ্যামপুর চিনিকল ততকালীন সরকার বন্ধ ঘোষনা করা হলে বাকি ১০টি চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে গঠিত হবে ফেডারেশন। ফেডারেশনের প্রতিটি নির্বাচনেই কেরুজ চিনিকলের কোনো না কোনো নেতাকে দেখা গেছে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বা গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে নির্বাচিত হতে। এবার ঘটতে যাচ্ছে তার পুরোটাই ব্যাতিক্রম। ২০ জুলাইয়ে ফেডারেশনের সাধারণসভায় নিমন্ত্রিত মেহমান নেই কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কোনো নেতা। যেহেতু কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন বিলুপ্ত, সেহেতু এবার কেরুজ চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী নেতৃবৃন্দ ছাড়াই হতে যাচ্ছে নির্বাচন।
সূত্র থেকে জানা গেছে, গত নির্বাচনে ফেডারশেনর মোট ভোটার সংখ্যা ছিলো ১৬৫। ৩১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি ছিলেন কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান। গত বছরের ১৭ অক্টোবর তিনি অবসর গ্রহণ করায় ওই পদ থেকে অব্যহতি নিয়েছেন। প্রত্যেক নির্বাচন ও সাধারণসভায় কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন থেকে অসংখ্য ভোটার ও নিমন্ত্রিত থাকতেন। সর্বশেষ গত নির্বাচনে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের ভোটার ছিলেন ১৫ জন। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচিত প্রতিনিধি না থাকায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই শ্রমিক-কর্মচারী নেতৃবৃন্দ অনেকটাই প্রকাশ্যে দুভাগে বিভক্ত রয়েছেন। এক পক্ষ প্রকাশ্যে ভোটের পক্ষে থাকলেও অপর পক্ষ গোপনে হলেও ভোটের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় আজ অবধি হয়নি ভোট। তবে কবে নাগাদ এ ভোট হবে তা অনেকটাই অনিশ্চিত। ফেডারেশনের এবারের নির্বাচনে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী নেতৃবৃন্দ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা।