স্টাফ রিপোর্টার: গত সোমবার চুয়াডাঙ্গায় আগের দিনের তুলনায় তাপমাত্রা একলাফে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যাওয়া এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার খবরে জনমনে স্বস্তির আশা দেখা দিয়েছিলো। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার দিনভর কাঠফাটা রোদে সে আশা ফিকে হয়ে গেছে। গত সোমবারেরর তুলনায় তাপমাত্রা দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমলেও স্বস্তি মেলেনি জনজীবনে। বরং কাঠফাটা রোদে হাঁসফাঁস অবস্থা। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার গতকাল মঙ্গলবার জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত সোমবার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে হিসাবে সামান্য কমছে তাপমাত্রা।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, ঝাঁজালো রোদ হলেও রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের কিছু এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ায় এখানে তাপমাত্রার পারদ সেভাবে ওঠেনি। এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘চলমান তাপপ্রবাহের কারণে ভূপৃষ্ঠ চরম উত্তপ্ত, যা শীতল করতে বা তাপমাত্রা কমানোর জন্য টানা বৃষ্টির প্রয়োজন। সেই সঙ্গে মেঘের কারণে যদি সূর্যর তাপ যাতে মাটিতে পড়তে না পারে, তাহলে তাপপ্রবাহ কমে যাওয়াসহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এ জন্য আমাদের ১৫ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’ চলমান তাপপ্রবাহের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। শহরের সোনালী ব্যাংকের ফটকের পাশে রিকশাস্ট্যান্ড। সেখানে সারি সারি কয়েকটি রিকশা। কথা হয় পৌর এলাকার কাহারপাড়ার বাসিন্দা রিকশাচালক রোকন আলীর সঙ্গে। রোকন বলেন, ‘রোদির খুউপ তেজ। রাস্তার বের হলিই মাতার মগজ যেন ফুটে যাচ্চে। দুটো ট্যাকার আশায় কষ্ট করে বাড়িততি বের হলিউ প্যাসেন্দার পাওয়া যাচ্চে না। মানুষ বের হতি চাচ্চে না।’ চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার পানের হাট বসে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। জেলার বাইরের মোকামগুলোতে তা পাঠাতে দুপুর থেকে শুরু হয় ট্রাক ভর্তির কাজ। বেলা দুইটার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, তিনটি ট্রাকে চলছে পানের ডোল (বাঁশের তৈরি বিশাল ঝুড়ি) ভর্তির কাজ। ঝাঁজালো রোদ আর ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করেই ছন্দে ছন্দে সুর তুলে রশি টেনে টেনে একের পর এক ডোল ট্রাকে তুলে চলেছেন শ্রমিকেরা। এই কাজে শ্রমিকদের সবাই গরমে ঘেমে একাকার। শ্রমিক সরদার রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘সবার মতো আমাগেরও শরীল। আমাগেরও য্যারাম শীত লাগে, সেরাম গরমও লাগে। গরমের দিকি তাকালি তো আর কাজ হবে না। আর কাজ না হলি ভাত জোটপে ক্যারাম করে।’ রশিদুলের কথায় সমর্থন করে আরেক শ্রমিকসরদার সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাগের কষ্টের কতা শুনেলিকে আর কী-ই বা হবে। সমাজে গরিপ মানুষির পাশে দাঁড়াইনো লোকের বড্ড অভাব।’ এদিকে শহরে পথচলতি তৃষ্ণার্ত মানুষের জন্য জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে মঙ্গলার সকাল থেকে চুয়াডাঙ্গা শহরের চারটি পয়েন্টে বিনা মূল্যে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি ও স্যালাইন বিতরণ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান সকালে বড়বাজার শহীদ হাসান চত্বরে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ সময় দলের তিন সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা ফরিদুল ইসলাম, খালিদ মাহমুদ মিল্টন, শফিকুল ইসলামসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।