ভ্যাপসা গরমে জীবননগরে বেড়েছে তাল শাঁসের কদর

সালাউদ্দীন কাজল: কালের বিবর্তনে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার পল্লী অঞ্চল থেকে অনেকটাই মøান হয়ে গেছে তালগাছ। তবুও বর্তমানে অনেকেই তালের আঁটি রোপণ করে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে জীবননগর উপজেলার হাট-বাজারে তালের শাঁসের বেশ কদর বেড়েছে। মরসুমি ফল হিসেবে তালের শাঁস গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে। জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ভ্যাপসা গরমে এবার তালের শাঁসের ব্যাপক কদর বেড়েছে। সেই সঙ্গে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। জীবননগর পৌ৫রশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় বেশ কিছুদিন ধরে সুস্বাদু তালের শাঁস বিক্রি করে যাচ্ছে বিক্রেতারা। এটি জনপ্রিয় সব মানুষের কাছে। তালের শাঁসে রয়েছে গুণও। শুধু শাঁস নয়, রস, গুড়, পাকা তাল, পিঠা এসব অত্যন্ত মজাদার খাবার। মরসুমি ফলের মধ্য তাল শাঁসেরও ব্যাপক কদর বেড়েছে। জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে, চৌরাস্তার মোড়ে, পৌর শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশে এবং ফুটপথসহ নানান জায়গায় চোখে পড়ে ধারালো ‘দা’ দিয়ে কেটে শাঁস বের করে দিচ্ছেন বিক্রেতারা। জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে দেখা মিললো তালের শাঁস বিক্রেতা রমিজ উদ্দীনের সাথে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি এ মরসুমে তাল সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করছেন। কিন্তু অন্য সময় পেশা হিসেবে বিভিন্ন কাজ করেন। রমিজ উদ্দীন জানান, কেউ একটু তরল, আবার কেউ একটু শক্ত শাঁস পছন্দ করেন। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ কাঁদি তাল বিক্রি হয়। এভাবেই তালের মরসুম আসলে তার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। বিক্রেতারা আরো জানান, প্রতিটি তালে ২-৩ টি শাঁস থাকে। এটি ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। গরমে শাঁসের কদর একটু ভিন্ন। এসব তালের শাঁস জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে এনে বিক্রি করা হয়। বৃহস্পতিবার জীবননগর উপজেলা শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, ছোট-বড় কাঁচা তালে ভরা বাজার। বাজারের ধারে, পাকা সড়কের পাশে, জনসমাগম বেশি এমন পথের ধারে এখন শোভা পাচ্ছে এ তাল ফল। আবার কোথাও কোথাও ভ্যানযোগে পাড়া-মহল্লাতেও ঘুরে ঘুরে তাল শাঁস বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তালের শাঁস সংগ্রহ করে বাজারে নিয়ে আসা হচ্ছে। আর পসরা সাজিয়ে বসছে ভ্রাম্যমাণ দোকানীরা। মৌসুমী ফল হিসেবে তালের শাঁসের বেশ চাহিদা থাকায় ক্রেতারা বেশ আগ্রহ ভরে কিনছেন। তালের শাঁস অতি সুস্বাদু হওয়ায় সকল শ্রেণির মানুষের মাঝে এটি জনপ্রিয় ফল। চাহিদা মাফিক সময় মতো শাঁস কেটে সারতে পারছেন না বিক্রেতারা, তাই তাদের ১-২জন সহকারীকে সাথে নিয়ে এ কাজ করেন। প্রায় দেড় থেকে দুই মাস চলে এই তালের শাঁস বিক্রি। ক্রেতাদের চাহিদা মফিক প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা এসব স্থানে বসে প্রতিজন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ শাঁস বিক্রি করেন। এতে গড়ে প্রায় ৩০০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত লাভ করে থাকেন। তাল শাঁস ক্রেতা কাশিপুর গ্রামের আবু তালেব বলেন, বছরের এ সময়ে তালের শাঁস খুবই ভালো লাগে। বিশেষ করে গরমের দিনে তালের শাঁস খুবই উপকারী। তবে এবার তাল শাঁসের দাম অনেক বেশি। জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এ বছর তালের ভালো ফলন হয়েছে। এছাড়া নতুন নতুন গাছ থেকে এই তাল সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এখন অনেকেই বজ্রপাত রোধে তালগাছ রোপণ করে থাকেন বিভিন্ন রাস্তার ধারে ও খালের পাড়ে। কৃষি অফিসসহ সামাজিক ও বিভিন্ন সংগঠনের আলাদা আলাদা দল হিসেবে এই তালের গাছ রোপণ করে আসছে।