হাইকমান্ডের মনিটরিংয়ে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা গ্রহণযোগ্য এবং ভোটের মাঠে জনপ্রিয়দের হাতে তুলে দেয়া হবে ধানের শীষ

স্টাফ রিপোর্টার: শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে স্বস্তিতে আছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে নির্বাচন করতে আগ্রহীরা আছেন ফুরফুরে মেজাজে। এতদিন নির্বাচনের সময় নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা থাকলেও সম্প্রতি লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে সম্ভাব্য সময় ঘোষণার পর দলটিতে নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সব জায়গায় একাধিক নেতা চালাচ্ছেন জনসংযোগ। অন্যদিকে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী এসব নেতার সার্বিক কার্যকলাপ ‘মনিটরিং’ করা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের আমলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ-বর্জনের মধ্যে থাকা বিএনপি আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। বিশেষ করে বিতর্কিতদের বিষয়ে পুরোপুরি নেতিবাচক অবস্থান নিয়েই প্রার্থী মনোনয়নের চিন্তা দলটিতে। দলের জন্য সত্যিকারের ত্যাগী, সৎ ও ব্যক্তি হিসেবে গ্রহণযোগ্য এবং ভোটের মাঠে জনপ্রিয়দের হাতে ধানের শীষ তুলে দেবে বিএনপি। এক্ষেত্রে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের বর্তমান অবস্থানও পর্যালোচনা করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের জন্য পরিশ্রমী ও মাঠে ছিলেন এমন নেতাদের পাশাপাশি অনেক আসনে ৫ আগস্টের পর ‘সুবিধাবাদী’ শ্রেণির আগমন ঘটেছে। আওয়ামী লীগের পুরো আমলে রাজপথে ছিলেন না, কোনো মামলা নেই, পুরো সময় সুবিধাজনক অবস্থায় ছিলেন, এমন লোকজনও নির্বাচনী জনসংযোগ শুরু করেছেন। ফলে প্রার্থী বাছাই করা চ্যালেঞ্জ হবে নীতিনির্ধারকদের জন্য। যে কারণে আগেভাগেই আসনভিত্তিক মনিটরিং করা হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে। দলের এমন সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হলে তরুণ নেতাদের মধ্যে অনেকের কপাল খুলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেক আসনে একদম নতুন কাউকে মনোনয়ন দিয়ে চমক তৈরি করা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
খুলনা বিভাগের একটি আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী সাবেক ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত দল প্রার্থী বাছাইয়ের যে মানদ-ের কথা বলছে তাতে স্থির থাকলে আমাদের বয়সী নেতারা অনেকে মনোনয়ন পাবেন। আমরা গত ১৫ বছর খেয়ে না খেয়ে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি মাঠে থাকতে। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে। একাধিকবার জেলও খেটেছি। অনেক সিনিয়র নেতার এলাকায় তরুণ অনেকে ভালো অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে আরও সময় নেবে বিএনপি। আগামী ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে নির্বাচন ধরে নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনের চূড়ান্ত রোডম্যাপের ঘোষণা এলে তখন প্রার্থী কারা হবেন তা দৃশ্যমান হবে। আপাতত সম্ভাব্য প্রার্থী কিংবা আগ্রহী যারা মাঠে আছেন তাদের প্রতি নজর রাখছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও দায়িত্বপ্রাপ্তদের মাধ্যমে ইতোমধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বিস্তারিত তথ্যও সংগ্রহ করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সময়ে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলেও ২০১৪ ও ২০২৪-এর নির্বাচন বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল বর্জন করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে অংশ নেয় বিএনপি। তবে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি এবং দিনের ভোট রাতেই হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে বিএনপি। সেই নির্বাচনে মাত্র সাতটি আসন পায় দলটি।
মামলা-সাজা দিয়ে ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে এমন আশঙ্কায় ২০১৮ সালের নির্বাচনে এক আসনের বিপরীতে একাধিক প্রার্থীকে চিঠি দিয়েছিলো বিএনপি। তবে এবারের নির্বাচনে এমন কোনো আশঙ্কা নেই। বিএনপির জন্য এখন ভোটের মাঠ অবারিত। এজন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজনকেই চূড়ান্ত বাছাই শেষে চিঠি দেয়া হবে বলে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘২০১৮ সালের মতো একাধিক প্রার্থী হবে না। এবার দলের সিদ্ধান্ত হলো একক প্রার্থী নির্ধারণ করা।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনের জন্য সবসময় প্রস্তুত। বড় দলে অনেকেই প্রার্থী হতে আগ্রহী থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। দল সবার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেবে, মাঠের পরিস্থিতি দেখে একজনকে চূড়ান্ত করবে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে।’