স্টাফ রিপোর্টার:এশিয়ার তরুণ সমাজে বেকারত্বের হার ক্রমেই উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে, যা নতুন করে সামাজিক অস্থিরতা এবং বিক্ষোভের ঝুঁকি তৈরি করছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এশিয়ার বিভিন্ন দেশেই তরুণরা ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য কঠোর প্রতিযোগিতার মুখোমুখি। চাকরির অভাবে অনেকে মানবেতর বা নিম্নমজুরির কাজ গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষের জন্ম দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে এশিয়ার সামাজিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে, যা তরুণদের বিক্ষোভ ও আন্দোলনের ঢেউ আরও প্রবল করবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় প্রতি সাত তরুণের মধ্যে একজন বেকার রয়েছে, যা উদ্বেগজনক একটি সূচক। এছাড়া, তরুণ ও অভিজ্ঞ কর্মীদের মধ্যে ‘স্থিতিশীল ব্যবধান’ তৈরি হওয়া অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশ্বব্যাংক আরও উল্লেখ করেছে, এশিয়ার মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো ক্রমেই আর্থিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে, কারণ সম্পদের মালিকানায় জনগণের অংশ কমে আসছে। যদিও সামগ্রিক কর্মসংস্থানের হার বেড়েছে, তরুণদের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ সীমিত থেকে যাচ্ছে। অধিকাংশ কর্মসংস্থান অনানুষ্ঠানিক খাতে, যেখানে কাজের গুণগত মান ও আয় কম। এছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নারীদের শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ এখনো সীমিত।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এশিয়ার কর্মসংস্থান ধীরে ধীরে উৎপাদনমুখী শিল্প থেকে সেবা খাতে সরে আসছে, যেখানে মজুরি তুলনামূলক কম। এই প্রবণতা উন্নয়নশীল অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। আফ্রিকা ও এশিয়াতে তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, যা দুর্নীতি, বেকারত্ব ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ফিলিপাইন, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, এবং বাংলাদেশের মতো দেশে এর প্রভাব স্পষ্ট, যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে সরকার পতনের ঘটনাও ঘটেছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গোলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও চীনে ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ তরুণ কর্মহীন, আর ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে কমপক্ষে ৫ শতাংশ বেকারত্ব রয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজন কার্যকর কর্মসংস্থান নীতি এবং তরুণদের জন্য সুযোগ তৈরি করা, যা সামাজিক শান্তি ও উন্নয়নের জন্য জরুরি।
তরুণ সমাজের এই বেকারত্ব ও সামাজিক অস্থিরতা শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি স্বরূপ। তাই সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।