স্টাফ রিপোর্টার:জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ভাষণ গাজায় লাউডস্পিকারের মাধ্যমে সম্প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও)। এ নির্দেশ নিয়ে সেনাবাহিনীর ভেতরে তীব্র আপত্তি থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে টাইমস অব ইসরাইল।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২ নিউজ ও হা’রেৎজ জানায়, পুরো গাজা উপত্যকায় লাউডস্পিকার বসিয়ে নেতানিয়াহুর বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করতে সেনাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী এ পরিকল্পনাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে, কারণ এর ফলে সেনাদের এমন এলাকায় প্রবেশ করতে হবে যেখান থেকে তারা হামাসের টার্গেটে পরিণত হতে পারে।
একজন জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা হা’রেৎজকে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ পাগলামি। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের বিভিন্ন পক্ষই বলছে, এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। এর সামরিক লাভ কেউ খুঁজে পাচ্ছে না।’ সেনাবাহিনীর একটি সূত্র একে ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের অংশ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
তবে সেনাবাহিনী স্পষ্ট করেছে যে তারা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ অমান্য করবে না। ইতোমধ্যে ৯৯তম ডিভিশনের সৈন্যরা গাজা সীমান্তে সামরিক গাড়ির ওপর লাউডস্পিকার বসিয়েছে বলে ইসরাইলি কান সম্প্রচার সংস্থার সামরিক প্রতিবেদক এক্স-এ একটি ছবি শেয়ার করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ভাষণ ইসরাইল সময় বিকেল ৪টায় শুরু হওয়ার কথা। এতে তিনি মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ক্ষুব্ধ বন্দিদের পরিবার
এ ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন গাজায় হামাসের হাতে বন্দি ইসরাইলিদের পরিবারের সদস্যরা।
লিশাই মিরান-লাভি, যার স্বামী ওমরি মিরান এখনও বন্দি, এক্সে লিখেছেন: ‘গাজাবাসীর বদলে আপনার উচিত সেইসব মানুষকে সম্বোধন করা যারা সত্যিকারের আশার প্রার্থনা করছে—বন্দিরা ও সেনারা। যদি লাউডস্পিকার বসান, তবে আমার রেকর্ডিং প্রচার করুন, যাতে ওমরি শুনতে পারে আমরা তাদের ফেরানোর জন্য লড়ছি।’
আনাত আংগ্রেস্ট, যার ছেলে মাতান আংগ্রেস্ট বন্দি রয়েছে, লিখেছেন: ‘আমার ছেলে হয়তো আপনাকে শুনতে পাবে। কিন্তু ‘‘আমি যুক্তরাষ্ট্রে এসেছি বন্দিদের ফিরিয়ে আনার চুক্তি করতে’’—এই বাক্য ছাড়া আপনার প্রতিটি শব্দই তাদের জন্য মানসিক নির্যাতন হবে।’
নিউইয়র্কে বিক্ষোভ
এদিকে কয়েকজন বন্দির স্বজন ও মুক্তিপ্রাপ্তরা নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরের বাইরে অবস্থান নিয়ে নেতানিয়াহুর ভাষণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের দাবি—একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তির মাধ্যমে সব বন্দিকে মুক্ত করতে হবে এবং যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে।
ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে গাজায় মোট ৪৮ জন বন্দি রয়েছেন। এদের মধ্যে ২৬ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। জীবিতদের অধিকাংশই ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় অপহৃত হয়েছিলেন।