ডিজিটাল আই স্ট্রেন এড়াতে সতর্কতার বিকল্প নেই

…………………..আনোয়ার হোসেন ……………..

করোনার কারণেই হোক, আর পেশাগত চাপেই হোক দীর্ঘ সময় একটানা মোবাইলফোন, টেলিভিশন, ল্যাবটপ- ডেস্কট্প বা আইপ্যাড ব্যবহার করলেই বিপদ। হারাতে হতে পরে চোখ। মনে রাখতে হবে চোখ অমূল্য সম্পদ।
করোনা সংক্রমণের কারণে অনেকে কাজও হারিয়েছেন। লডাউনের কারণে কর্মহীনতা আকৃষ্ট করেছে ডিজিটাল ডিভাইস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে থাকার কারণে ও কর্মহীন হয়ে পড়ায়, অনেকে মানসিক দিক থেকে্ও দুর্বল হয়ে পড়েছেন, ভুগছেন মানসিক সমস্যায়ও। আবার লকডাউনের দিন থেকে এখনও পর্যন্ত ঘরে বসে অফিসের কাজ করার ক্ষেত্রে টানা কম্পিউটার বা ল্যাপটপের ব্যবহার, নয়তো টিভি বা মোবাইলের পিছনে সময় দেওয়ায় মানুষকে শারীরিক দিক থেকে দুর্বল করে তুলছে। কোভিড-১৯ তথা করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে কাজের অবসরে বই পড়া, গান শোনা, খেতে যাওয়া, শপিং করতে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কিংবা পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার একটা প্রচলন ছিল। কিন্তু সংক্রমণ এড়াতে মানুষ এখনও আগের জীবনে পুরোপুরি ফিরতে পারছে না। অনেকেই সময় কাটাচ্ছেন মোবাইল, টিভি অথবা ল্যাপটপ নিয়ে। এতে কারও কারও চোখ জ্বালা, চোখ শুকিয়ে যাওয়া, চোখে অস্বস্তি, চোখ লাল হওয়া, ভারী ভাব, ঝাপসা দেখা, কপাল, ঘাড়, পিঠ, কোমর, মাথা ব্যথা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ছোট-বড় সবাই এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই ধরনের সমস্যাকে বিশেষজ্ঞরা কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম বা ডিজিটাল আই স্ট্রেন হিসেবে চিহ্নিত করছেন। এ ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে ও চোখের সুরক্ষায় কিছু বিষয় অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যেমন- ১. ডিজিটাল আই স্ট্রেন এড়াতে ঘন ঘন বিরতি নিন। প্রতি ২০ মিনিট পর অন্তত ২০ সেকেন্ড করে বিরতি নিন, ২০ ফুট দূরত্বে কোনও জিনিসের দিকে তাকান। আবার ৩০ মিনিট পর ৫ মিনিটের বিরতি নিন। এটি চোখকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেরও উপকার করবে। ২. কাজ করার মাঝে যখন বিরতি নেবেন তখন চোখের বিভিন্ন ব্যায়াম করুন। নিয়মিত চোখের ব্যায়াম করলে চোখের পেশিগুলি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এতে চোখের নানা ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ৩. স্ক্রিনে কোনও জিনিস লেখা বা দেখার সময় লেখার সাইজ বাড়িয়ে নিন, যাতে ডিভাইসগুলিকে দূরে রেখে সহজেই পড়তে বা কাজ করতে পারেন। এতে চোখে চাপ কম পড়বে এবং চোখ সুস্থ থাকবে। ৪. স্ক্রিন নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখুন। আইপ্যাড, ট্যাবলেট, টিভি, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় চোখের খুব কাছাকাছি রাখবেন না। কম্পিউটারের স্ক্রিনটি আই লেভেল থেকে ১৫-২০ ডিগ্রি নিচে রাখুন। সেই সঙ্গে ২০ থেকে ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত দূরত্ব বজায় রাখুন। এতে চোখের উপর চাপ কম পড়ার পাশাপাশি ঘাড়, কাঁধ, কোমর ব্যথা থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে। ৫. অ্যান্টি-গ্লার স্ক্রীন কম্পিউটার বা ল্যাপটপের স্ক্রিনের অতিরিক্ত আলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। কর্মক্ষেত্রে এই ফিল্টারের প্রয়োজন না হলেও, বাড়ি থেকে কাজ করার সময় এটি ব্যবহার করতে হবে। কারণ এই ফিল্টার চোখের চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং চোখকে সুস্থ রাখে। ৬. স্ক্রিনে আলোর মাত্রা ঠিক রাখুন। অতিরিক্ত বা কম আলো, চোখে বেশি চাপ সৃষ্টি করে এবং দৃষ্টির ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। তাই যে জায়গায় বসে কাজ করবেন সেখানে যথাযথ পরিমাণ আলোর ব্যবস্থা রাখুন। কখনই কম বা বেশি আলোতে কাজ করবেন না। ৭. কম্পিউটার চশমা ব্যবহার করুন । যারা মাত্রাতিরিক্ত কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করেন তারা অ্যান্টি রিফ্লেকটিভ লেন্সযুক্ত চশমা ব্যবহার করুন। এই চশমা চোখের চাপ কমাতে, ঝাপসা ভাব, মাথা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ৮. চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে, চোখের ক্লান্তি দূর করতে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার খান। শাকসবজি, গাজর, পেঁপে, খেজুর ইত্যাদি খাবার চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। চোখে আর্দ্রতা বজায় রাখতে ওমেগা-থ্রি অয়েল, ফ্ল্যাকসিড অয়েল, স্যামন ও সার্ডিনের মতো মাছ খেতে পারেন। ৯. প্রতি ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা পর চোখে পানির ঝাপটা দিন। ১০. চোখের কোনও সমস্যা দেখা দিলে দেরী না করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সুস্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল।

Comments (0)
Add Comment