অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৬ প্রতিষ্ঠানে জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় কাঁচাবাজার ও কাপড়ের মার্কেট মনিটরিং করেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের যৌথ দল। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। বাজার মনিটরিংকালে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা শহরের বড়বাজার, নিচের বাজার, পুরাতন গলির মার্কেট, ফেরিঘাট রোড, সমবায় নিউ মার্কেট ও আব্দুল্লাহ সিটিসহ শহরের ব্যস্ততম সড়কের দুপাশের ফুটপথ দখল অবমুক্ত করণের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৬ প্রতিষ্ঠানকে ২৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পবিত্র রমজানে বাজার মনিটরিং করায় কর্মকর্তাদের সাধুবাদ জানিয়েছেন সাধারণ জনগণ।

অভিযানে মাছ, মাংস (মুরগী, গরু, খাসি) ভোজ্য তেল, চিনি, খেজুর, চাল, সকল প্রকার সবজি, মসলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম হাতের নাগালে রাখতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মূল্য তালিকা প্রদর্শিত আছে কি-না, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের যেন কোনো মজুতদারি করা না হয় এবং অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি করে মানুষের হয়রানি করা না হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

অনিয়মের অভিযোগে ৬ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। জরিমানা করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করায় চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের রব্বুল স্টোরকে ২ হাজার টাকা, বেশি মূল্যে বিক্রির অভিযোগে মাছব্যবসায়ী কালু মিয়াকে ৫ হাজার টাকা, সমবায় নিউ মার্কেটের নন্দন এন্টারপ্রাইজকে ১০ হাজার, হৃদয় গার্মেন্টসকে ৫ হাজার, চুয়াডাঙ্গা শাড়ি হাউজকে ২ হাজার এবং আব্দুল্লাহ সিটির বিপুল গার্মেন্টকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের কাঁচা বাজারে মাছ-মাংসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যতেষ্ঠ সরবরাহ রয়েছে। দামও সহনীয়। রোজার শুরুতে দুই একটা আইটেমের (পণ্য) মূল্য বেড়ে গিয়েছিলো। এখন এই দামগুলো কমে গেছে। ক্রেতাদের সন্তোষ্টি দেখেছি। বড় ধরনের কোন অভিযোগ পাইনি। কাপড়ের মার্কেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেশ কয়েকটি মার্কেটের দোকানিরা মোটামুটি সহনীয় মূল্যে তারা বিক্রি করছেন। কয়েকটি দোকানে আবার পেলাম যে তারা সীমিত লাভে বিক্রি করছেন। আবার আমরা মিলিয়ে দেখলাম কিছু ব্যবসায়ীরা ক্রয় মূল্যের চেয়ে বিক্রি মূল্য অনেক নিচ্ছেন। আমরা বলেছি যে ২৫ শতাংশ বা তার কাছাকাছি পর্যায়ে লাভে বিক্রি করতে। তারা তার থেকেও অধিক মূল্যে বিক্রির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তিন কাপড় ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে। একই সাথে মুদি দোকান ও মাছ ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। সার্বিকভাবে দেখেছি যে বাজার পরিস্থিতি ভালো। তিনি আরও বলেন, আমাদের এই মনিটরিং বা অভিযান সতর্কীকরণ। বিশেষ করে কিছু বড় ব্যবসায়ী কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বেশি মুনাফা না করতে পারে সেই বিষয়টি আমরা দেখছি। ঈদকে সামনে রেখে সকলেরই নতুন জামাকাপড় কেনার আগ্রহ থাকে, বিশেষ করে বাচ্চাদের। সহনীয় মূল্যে যেন সকলেই ঈদের কেনাকাটা করতে পারে নিরাপদে ও সাশ্রয়ী মূল্যে সেটা আমরা দেখছি।

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেমন অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, তেমনি পবিত্র ঈদকে সামনে করে বিভিন্ন ধরনের ক্রাইম পার্টি তাদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি করতে পারে। যেমন মলমপার্টি, ছিনতাইপার্টি, অজ্ঞানপার্টি, মোটরসাইকেল চোরচক্রসহ বিভিন্ন ধরনের ছিনতাই চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। তবে এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আগে থেকেই তৎপর। যে কোনো ধরনের অপতৎপরতার খবর পেলে পুলিশ সেখানে দ্রুত হাজির হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং জনস্বার্থে যে কেউ নির্ভরযোগ্য তথ্য দিলে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের নিকট কিছু তালিকা রয়েছে সেই তালিকা ধরে তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তারা কখনো যদি কোন ক্রাইম করে তাহলে আমরা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবো। এছাড়া জেলার সব পশুহাটে পুলিশ মাইকিং করে সচেতন করছে। অপরিচিত ব্যক্তিদের দেয়া কোন কিছু না খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

অভিযান পরিচালনা কালে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু তারেক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভূইয়া, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাদাত হোসেন, সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হুমায়ুন কবির,জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ চুয়াডাঙ্গা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সজল আহম্মেদ, জেলা মার্কেটিং অফিসার শহিদুল ইসলাম, জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা সমবায় নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাহফুজুর রহমান জোয়ার্দ্দার মিজাইল, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আকরাম আলীসহ ব্যবসায়ী নেতারা।

Comments (0)
Add Comment