অবশেষে আজ চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরলেন ভারতে আটকে পড়া ১১ জন বাংলাদেশী

জহির রায়হান সোহাগ: অবশেষে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরেছেন ভারতে আটকে পড়া ১১ জন বাংলাদেশী নাগরিক। আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় দর্শনা চেকপোস্টে পৌঁছান ওই ১১ জন বাংলাদেশী।  ভারত ফেরত ১১ জনের মধ্যে ৩ জন নারী ও ৮ জন পুরুষ রয়েছেন।  গেল রোববার ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশীদের দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের ছাড়পত্র (এনওসি) সংক্রান্ত জটিলতায় গতকাল তারা দেশে ফিরতে পারেননি।  এদিকে, সন্ধ্যায় দর্শনা চেকপোস্টে পৌঁছালে তাদের হেলথ স্ক্রিনিং ও করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয়।  দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. অমিত কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি মেডিকেল টিম তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। তবে তাদের কেউই করোনাভাইরাস শনাক্ত হননি। সেখান থেকে তাদের নির্ধারিত পরিবহনযোগে (মাইক্রোবাস) চুয়াডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নেয়া হয়েছে।  সেখানে তারা ১৪ দিনের বাধ্যতামূলত কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।

দর্শনা ইমিগ্রেশন সূত্র জানিয়েছে, ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশীরা সে দেশের দূতাবাস থেকে অনাপত্তি পত্র (এনওসি) না পাওয়ায় গতকাল দেশে প্রবেশ করতে পারেনি।  আজ সোমবার সকালে থেকে সেখানে অনাপত্তি পত্র (এনওসি) নিতে ভীড় জমান বাংলাদেশীরা।  চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে এমন প্রায় ৩ শতাধিক যাত্রীদের দেশে ফিরয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।  গত রোববার থেকে তাদের দেশে প্রবেশের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়।  আজ সন্ধ্যায় এই চেকপোষ্ট দিয়ে ১১ জন দেশে ফিরেছেন। দর্শনা জয়নগর চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এস আই) আব্দুল আলিম জানান, ভারত থেকে দেশে আসা বাংলাদেশীদের আগমন উপলক্ষে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে দর্শনা ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। ভারতের গেদের চেকপোস্টের ইনচার্জ সনজিদ কুমারের  সাথে কথা হয়েছে।  তিনি জানিয়েছেন, বিকেলে ১১ জন বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী যাত্রী গেদে আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে পৌঁছান। দূতাবাসের ছাড়পত্র থাকায় ইমিগ্রেশনের সকল প্রক্রিয়া শেষে তাদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে।  আজ সন্ধ্যায় তারা দর্শনা চেকপোস্টে এসে পৌঁছান। করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীন জানান, ভারতের কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ৫১ জনের ছাড়পত্রের নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে আজ সন্ধ্যায় দর্শনা চেকপোস্ট দিয়ে ১১ জন দেশে ফিরেছেন। ভারত ফেরত ১১ জনকেই বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।  চেকপোস্ট থেকে তাদের আইসোলেশন সেন্টার বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেয়ার জন্য ৩ টি মাইক্রোবাস ও একটি এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন।  ভারত ফেরতদের নির্ধারিত পরিবহনযোগে চুয়াডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) নেয়া হয়েছে।  সেখানে তারা ১৪ দিনের বাধ্যতামূলত কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।

ভারতের কোলকাতায় মাকে চিকিৎসা করতে নিয়ে গিয়ে দেশে ফিরতে পারছেন না চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী বাজারের বাসিন্দা মোবাশ্বের রহমান।  মোবাইলফোনে কথা হয় তার সাথে।  তিনি জানান, আমার মা ক্যান্সারের রোগী। চিকিৎসার জন্য দেড় মাস আগে মাকে নিয়ে কোলকাতায় এসেছিলাম। চিকিৎসা শেষে এখন দেশে ফিরতে পারছিনা।  আজ সোমবার ভোর ৬ টা থেকে এনওসি নেয়ার জন্য কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে এসেছিলাম। এখানে ৪ শতাধিক বাংলাদেশী লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।  বেলা ২ টার দিকে ছাড়পত্র নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে পেরেছি। তিনি আরও জানান, কোলকাতায় কঠোর লকডাউন চলছে। লকডাউনের কারণে দূতাবাসে যাতায়াতের জন্য কোনো যানবাহন পাওয়া যাচ্ছে না। লকডাউনের মধ্যে ছাড়পত্র (এনওসি) সংগ্রহ করতে সবাইকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।উল্লেখ্য, গত শনিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কিত চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।  সভায় সিদ্ধান্ত হয়, দর্শনা চেকপোস্টে প্রবেশের পর প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদেরকে সেখানেই হেলথ স্ক্রিনিং ও করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। পরীক্ষায় করোনা আক্রান্ত রোগীদেরকে সদর হাসপাতালের আইসোলেশনে নেয়া এবং বাকীদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে। কোয়ারেন্টিন সেন্টার হিসেবে প্রাথমিকভাবে নার্সিং ইনস্টিটিউট ও দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে নির্বাচন করা হয়েছে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নির্ধারিত পরিবহনে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন সেন্টারে যাত্রীদেরকে পৌঁছানো হবে। কোয়ারেন্টিনে অবস্থানকালীন সকলকেই থাকা ও খাওয়ার খরচ বহন করতে হবে। দেশে প্রবেশকারীদের পাসপোর্ট পুলিশ হেফাজতে থাকবে। কোয়ারেন্টিন শেষে সিভিল সার্জনের ছাড়পত্রের পর পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হবে। পুরো প্রক্রিয়া তদারকির জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীনকে প্রধান করে সাত সদস্যের মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 

 

Comments (0)
Add Comment