আলমডাঙ্গায় পায়রা খাতুনের টিউবওয়েলের পানি সর্বরোগের ওষুধ

পানি নিতে হাজারো মানুষের ভিড় : দু’বছর ধরে চলছে বকশিশ বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গায় স্বপ্নে পাওয়া পানি খাওয়াচ্ছেন এক নারী প্রতারক। প্রতি শুক্রবার ও সোমবার হাজারো নারী-পুরুষ তার টিউবওয়েলের পানি নিয়ে যাচ্ছেন রোগ সারানোর উদ্দেশে। বিনিময়ে প্রতারক নারী পায়রা খাতুন করছেন বকশিশ বাণিজ্য। এই পানি পান করে কেউ কোনো উপকার না পেলেও পায়রা খাতুনের পুষে রাখা দালাল শ্রেণির কতিপয় প্রতিনিয়ত উপকারের কথা প্রচার করছেন। ফলে জেলা ছাড়াও অন্য জেলার মানুষও এই পানি নিতে ভিড় জমাচ্ছেন। পায়রা খাতুন উপজেলার পোলতাডাঙ্গা গ্রামের ইকরামুল হক জোয়ার্দ্দারের স্ত্রী। এলাকার সচেতন মহল ওই নারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এলাকা সূত্রে জানা গেছে, বছর দুয়েক আগে কথিত কবিরাজ পায়রা খাতুনের (৩৫) মাথার চুলে জট বাঁধে। এরপর তিনি প্রচার করতে থাকেন তার গায়ে জিন ভর করেছে। পরবর্তীতে বলতে থাকেন, ‘আমি স্বপ্নে দেখেছি আমার বাড়ির টিউবওয়েলের পানি সমস্ত রোগের ওষুধ। যারাই আমার অনুমতি নিয়ে পানি খাবে তাদের যেকোনো রোগ ভালো হয়ে যাবে।’ এরপর দু’একজন করে ওই বাড়ির পানি খাওয়া শুরু করে। এরপরই তার কাছের কয়েকজন দালাল শ্রেণির মানুষ প্রচার করতে থাকে পায়রা খাতুনের বাড়ির পানি খেলে রোগ ভালো হয়ে যাচ্ছে। শুরু হয় পানি নেয়া। প্রতি শুক্রবার ও সোমবার প্রায় এক হাজার নারী-পুরুষ আসে পানি নিতে। তবে পুরুষের সংখ্যা হাতেগোনা। নারীরাই বেশি আসেন পানি নিতে। অনেকে মাইক্রোবাস ও ইজিবাইক ভাড়া করেও ওই পানি নিতে আসেন। ভিড় সামাল দিতে আগের রাতে ড্রামে পানি তুলে রাখেন পায়রা খাতুন ও তার স্বামী। এরপর পায়রা খাতুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বোতল ভরে পানি নিয়ে যায় রোগীরা। এ জন্য বকশিশ হিসেবে নগদ টাকা, চাল-ডালসহ বিভিন্ন উপহার নিয়ে থাকেন পায়রা খাতুন। তবে পায়রা খাতুন বলেছেন ‘আমি জোর করে টাকা নিই না। যাদের রোগ ভালো হয় তারাই খুশি হয়ে কিছু দিয়ে যায়।’ পায়রা খাতুনের স্বামী ইকরামুল হক জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘অবশ্যই মানুষের রোগ ভালো হয়। না হলে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ কেন আসে?’ তবে স্থানীয় বাড়াদী ইউপি সদস্য ইসরাইল হোসেন জানান, ‘শুনেছি বিভিন্ন এলাকার লোকজন পানি নিতে আসে। এই আধুনিক যুগে এসব বিশ্বাস করা ঠিক নয়। তবে পায়রা খাতুন টাকা-পয়সা নেয় কিনা তা আমার জানা নেই।’ এ ব্যাপারে বাড়াদী ইউপি চেয়ারম্যান তবারক হোসেন জানান, ‘বিষয়টি আমার নলেজে আছে। পায়রা খাতুনের টিউবওয়েলের পানিতে রোগ ভালো হয় এটা বিশ্বাস করা মানেই কুসংস্কারকে মেনে নেয়া। তবে পায়রা খাতুনের কাছ থেকে কেউ প্রতারিত হলে অবশ্যই আমরা উপজেলা প্রশাসনকে জানাবো ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নূর বলেন, ‘এটা একটা ব্যাড প্র্যাকটিস। ঘটনাটি আমার জানা ছিল না। এলাকার কেউ যদি এ বিষয়ে আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় তাহলে অবশ্যই পায়রা খাতুনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

Comments (1)
Add Comment
  • আসমাউল

    ওরে ধরে আইনের আওতায় আনা হোক দ্রুত