এনজিও কিস্তির চাপে দিশেহারা নিম্নআয়ের মানুষ : জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় বৃদ্ধাঙ্গুলি

গাংনী প্রতিনিধি: করোনা সংক্রমণরোধে কঠোর বিধিনিষেধ পালনে আয় কমে যাওয়ার মানুষের কথা চিন্তা করে মেহেরপুর জেলায় এনজিওগুলোর কিস্তি আদায়ে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন। গেল ২৪ জুন থেকে শুরু হওয়া নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকলেও তাতে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠান। কিস্তি দেয়ার সামর্থহীনদের ওপর কোনো কোনো ক্ষেত্রে জুলুম চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে কয়েকটি এনজিও কর্মীদের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, ২৪ জুন সকাল থেকে দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপ করে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া। চায়ের দোকান, বাস, মিল কলকারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধের নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক মানুষ কর্মহীন থাকবেন বলে প্রতীয়মান হয় জেলা প্রশাসনের কাছে। ফলে নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকা পর্যন্ত জেলায় কর্মরত সকল এনজিও প্রতিষ্ঠানের কিস্তি আদায় কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়।
জানা গেছে, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে কর্মরত অর্ধশত এনজিও কার্যক্রম রয়েছে মেহেরপুর জেলায়। এর মধ্যে দিশা, আরআরএফ, সিএসএস, আদ্ব-দীন এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক কিস্তি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
গাংনী পোস্টঅফিস সড়কের প্রবেশের পর থেকে বিআর লাইসিয়াম স্কুল অ্যান্ড কলেজের আগের অ্যাড. নুরুল ইসলামের বাড়ির পাশ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি এনজিও অফিস রয়েছে। অফিসগুলো ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এনজিও কর্মীরা। বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই অফিস চালু আছে। সকালে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্র্মীরা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে কিস্তি আদায় করছেন। নিম্ন আয়ের মানুষের বেশির ভাগ আর্থিক কষ্টে থাকা মানুষ কিস্তির চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জানতে চাইলে এনজিও কর্মকর্তারা বলেন, আমরা কিস্তি আদায় করতে চাচ্ছি না। কিন্তু ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তারা কিস্তি আদায় করতে বাধ্য করছেন।
এনজিও কর্মীরা জানান, কিস্তি আদায় করতে গেলে সমিতির সদস্যদের সাথে বাকবিত-া এবং অপ্রতিকর ঘটনাও ঘটছে। অপমান অপদস্থ হয়েও চাকরির স্বার্থে তারা মাঠে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
গাংনী ঈদগাহপাড়ার পাখিভ্যান চালক মনা মিয়া জানান, স্কুল-কলেজ বন্ধ হওয়ার পর থেকেই ভ্যানের ভাড়া কমে গেছে। বিধিনিষেধের মধ্যে চোরপুলিশ খেলে ভ্যান চালিয়ে যেটুকু আয় হচ্ছে তা দিয়ে সংসার খরচ হচ্ছে না। এরপর কিস্তিুর চাপ সামলাতে গিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমি খানম বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেহেরপুর গাংনীর সেই জোড়পুকুরিয়া ও গাড়াডোব গ্রামে করোনা পরীক্ষা বুথ
গাংনী প্রতিনিধি: এক মাসে দুই গ্রামে ৪৪ জন মানুষের মৃত্যু আর বিপুল সংখ্যক মানুষের করোনা উপসর্গ থাকায় গাংনী উপজেলার জোড়পুকুরিয়া ও গাড়াডোব গ্রামে করোনা পরীক্ষার অস্থায়ী বুথ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গতকাল শনিবার সকাল থেকে জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আর গেল পরশু থেকে গাড়াডোব গ্রামে এন্টিজেন পরীক্ষা করানো হচ্ছে।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) আব্দুল সালামের তত্ত্বাবধানে এ পরীক্ষা বুথ স্থাপন করা হয়েছে।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যানেটারি ইন্সপেক্টর মশিউর রহমান টিম নিয়ে সকাল থেকে জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে করোনা পরীক্ষা করছেন। গ্রামের মসজিদগুলোর মাইকে প্রচারণার মধ্যদিয়ে করোনা উপসর্গ থাকা মানুষগুলোকে করোনা পরীক্ষার আহবান জানানো হচ্ছে।
এদিকে গেল পরশু থেকে গাড়াডোব গ্রামে একইভাবে এন্টিজেন পরীক্ষা করানো হচ্ছে। গেল এক মাসে জোড়পুকুরিয়া গ্রামে ২৩ জন ও গাড়াডোব গ্রামে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা, করোনা উপগর্স, বার্ধক্য ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছেন। তবে করোনার প্রভাবে মৃত্যু ও গ্রামের বিপুল সংখ্যক মানুষের উপসর্গ দেখা দিলেও নানা গুজবে ডুবে করোনা পরীক্ষায় অনীহা গ্রামের মানুষের। এ সংবাদ প্রকাশের পর সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে গ্রাম দুটিতে করোনা পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়।

Comments (0)
Add Comment