কালীগঞ্জে গুদামে সার সংকট খালি হাতে ফিরছেন ডিলাররা

সার সংকটের কারণে কৃষকদের উঠেছে মাথায় হাত
শিপলু জামান: বৈরী আবহাওয়া, দীর্ঘ লকডাউনের কারণে আমনের এই ভরা মরসুমে বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) বাফার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ গুদামে তীব্র সারের সংকট দেখা দিয়েছে। টাকা জমা দিয়েও ইউরিয়া সার পাচ্ছেন না ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা জেলার ১২৩ জন ডিলার। প্রতিদিন দুই জেলার ডিলাররা ইউরিয়া সার উত্তোলন করতে এসে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। চাহিদা অনুযায়ী কিছু ডিলার বরাদ্দের সামান্য পরিমাণ সার পাচ্ছেন। সারের এ সংকটের কারণে মাথায় হাত উঠেছে কৃষকদের। আর এই সুযোগে অনেকে বেশি মুনাফা লাভের আশায় সরকারি নির্ধারিত চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অলস সময় পার করছেন গুদামে কর্মরত শ্রমিকরা কালীগঞ্জ শহরের শিবনগর অবস্থিত সারের বাফার গুদাম। যেখানে দেশি-বিদেশি কারখানায় উৎপাদনকৃত ইউরিয়া সার ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃষকদের জন্য মজুদ রাখা হয়। এখান থেকে ডিলাররা সরাসরি সার উত্তোলনের পর খুচরা বিক্রেতাদের মাধ্যমে কৃষকদের হাতে পৌঁছায়। কিন্তু কালীগঞ্জে এই বাফার গুদামটি চলতি আমন মরসুমে প্রায় খালি পড়ে আছে। গুদামের ইনচার্জ মো. শাহাজান বলেন, গুদামে সার মজুদ রাখার জন্য ৩টি ঘর রয়েছে। যার ধারণ ক্ষমতা আট হাজার টন। চাহিদা আছে ১১ হাজার টন; অথচ কোনো কোনো সময় দশ হাজার টন মজুদ থাকে। অধিকাংশ আসে সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে নদী পথে যশোর নয়াপাড়া ঘাটে। এই গুদাম থেকে জেলার মোট ১২৩ জন ডিলার সার উত্তোলন করে। এখন ৩টি ঘরের মধ্যে মাত্র একটিতে ৪শ’ টন সার মজুদ আছে। যশোর নওয়াপাড়া থেকে সার আসছে। যা এখনো গুদামে ঢোকানোর প্রক্রিয়ায়। এ বিষয়ে কথা হয় একাধিক ডিলারের সঙ্গে। তারা জানান, ব্যাংকে টাকা জমাদানের রসিদ দেয়ার পর একদিনের মাথায় খুব সহজে সার উত্তোলন করা যেতো। কিন্তু এবার ১০ দিনের অধিক সময় পার হলেও সার পাওয়া যাচ্ছে না। তারা জানান, একেক অঞ্চলের ডিলারদের বরাদ্দের পরিমাণ ভিন্ন। একেক জন ডিলার সার উত্তোলনের জন্য সর্বনিম্ন ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। টাকা জমা দেয়ার পর দূর-দুরান্ত থেকে আসা ডিলাররা প্রতিদিন সকাল থেকে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ধরণা দিয়ে খালি হাতে ফিরছেন। হাতেগোনা দুই/একজন সার পেলেও বরাদ্দের চার ভাগের এক ভাগও হবে না।
তারা বলেন, গুদামের চারটি ঘরের মধ্যে তিন ঘর তালাবদ্ধ। একটি ঘরে সামান্য পরিমাণে সার মজুদ আছে। সার উত্তোলনের জন্য এসে প্রতিদিন বাড়তি অর্থ ও সময় ব্যয় হচ্ছে। ডিলাররা অভিযোগ করেছেন, কালীগঞ্জ বাফার থেকে ক্যারিং কন্টাকটর সিন্ডিকেট কারনে উচ্চ মূল্যে ট্রাক ভাড়া দিয়ে সার নিতে হয়। আবার অনেকে বাফার ইনচার্জ সাথে সখ্যতা গড়ে নওয়াপাড়া থেকে কালীগঞ্জ বাফার গুদামে না রেখে ডিসপাচ করে নেন । যার কারণে গুদামে পড়ে থাকা সার গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কৃষক পর্যায়ে সারের দাম বেড়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক জানান, প্রায় এক মাসের অধিক সারের কোনো বড় চালান আসেনি। তাদের আয়-উপার্জনও অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। ট্রাকে সার উঠানো এবং নামানোর পরিমাণের ভিত্তিতে তারা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। অতিপ্রয়োজনীয় ইউরিয়া সার সংকটের প্রভাব পড়েছে মাঠ পর্যায়ে। কালীগঞ্জের ভিটশর গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, সার না পেয়ে তারা ক্ষেতে প্রয়োগ করতে পারছেন না। যশোর বাফার গুদামের ইনচার্জ মো. শাহজান আলী বলেন, লকডাউনের পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ার কারণে পণ্য পরিবহনে অসুবিধা হচ্ছে। সে কারণে সাময়িক এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। বড় একটি চালান আসার অপেক্ষায় আছে। এই বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন বলেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

Comments (0)
Add Comment