কুষ্টিয়া পিসিআর ল্যাবে চুয়াডাঙ্গার নমুনা পরীক্ষায় ধীরগতি : রিপোর্ট পেতে বাকি ১৭৮

একটি রিপোর্টের একটিই পজিটিভ : দামুড়হুদা দশমির আরও একজন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত
স্টাফ রিপোর্টার: বর্ষায় এমনিতেই বাড়ে স্বর্দি কাশি জ্বর। এর মধ্যে ভয়ানক ছোঁয়াচে করোনার প্রকোপ। চুয়াডাঙ্গায় এর সংক্রমন বেড়েই চলেছে। ফলে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেয়ার জন্য প্রতিদিনই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে লম্বা লাইন জমছে। নমুনা নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে যেমন কর্তব্যরতদের, তেমনই নমুনা যে হারে প্রেরণ করা হচ্ছে কুষ্টিয়ার পিসিআর ল্যাবে সে হারে পরীক্ষার রিপোর্ট আসছেনা। ফলে নমুনা দিয়েও অনিশ্চিত অপেক্ষার প্রহর গুণতে হচ্ছে উপসর্গে আক্রান্ত নমুনা দাতাদেরসহ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের।
চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার কুষ্টিয়া পরীক্ষাগার থেকে মাত্র ১ জনের রিপোর্ট আসে। তিনি দামুড়হুা উপজেলা শহরের দশমির বাসিন্দা। তার করোনা পজিটিভ হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে বাকি ছিলো ১৭৮ জনের। এতোজনের মধ্যে শুধু একজনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট আসায় অনেকেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেছেন, যখন চক্রবৃদ্ধি হারে করোনা সংক্রমণ হচ্ছে তখন নমুনা পরীক্ষায় নেমে এসেছে ধীরগতি। অবশ্য কুষ্টিয়া পরীক্ষাগারসূত্র বলেছে, বিদেশগামীদের নমুনা পরীক্ষা অগ্রাধিকার দেয়ায় এমনটি হচ্ছে। যদিও চুয়াডাঙ্গার তলনায় পার্শ্ববর্তি অন্য জেলাগুলো নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগ এ পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করেছে ৩ হাজার ৮৮ জনের। রিপোর্ট পেতে বাকি রয়েছে ১৭৮ জনের। জেলায় কোভিড-১৯ রোগী মোট শনাক্ত হয়েছেন ৪শ ৯১ জন। সুস্থ হয়েছেন ২৬৫ জন। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গায় মোট চিকিৎসাধীনের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রয়েছেন ৫৭ জন। হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১৬০জন। দুজনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। তাদের বর্তমান অবস্থা জানা যায়নি। করোনায় চুয়াডাঙ্গায় মৃত্যুর সংখ্যা স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে দাঁড়িয়েছে ৭ জন। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৫ জন। এদের মধ্যে ৩ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ হয়েছে। দুজনের রিপোর্ট শুক্রবার রাত পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের হস্তগত হয়নি। এদের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ফেরিঘাট পাড়ার খাদিজা বেগম (৫৮) তিনি মুদি ব্যবসায়ী বিল্লাল হেসেনের স্ত্রী। বৃহস্পতিবার সকালেই তিনি নমুনা দেন। ওইদিনই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। রাজশাহী নেয়ার পথে নাটোে পৌছুলে মধ্যরাতে গাড়ির মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢুলেপড়েন। শুক্রবার স্বাস্থ্য বিধি মেনে দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। এর আগে আলমডাঙ্গা কলেজপাড়ার মকবুল হোসেন মারা যান বৃহস্পতিবার। তিনি হেলাল উদ্দিনের ছেলে। মকবুল হোসেন ছিলেন কাপড় ব্যবসায়ী। তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টও স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে আসেনি।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রায় প্রতিটি মহল্লায় ছড়িয়েছে ভয়ানক ছোঁয়াছে করোনা। পৌর এলাকার এমন কোন পাড়া নেই যেখানে দু একজন করে করোনা রোগী নেই। অবাক হলেও সত্য যে, করোনা রোগীদের প্রতি সমাজের অনেকেই বাঁকা চোখে তাকাচ্ছেন যেমন, তেমনই রোগীদের মধ্যে কেউ কেউ বিধি মেনে ঘরে না থেকে ঘুরছেন প্রকাশ্যে। ফলে সংক্রমণের হার বাড়ছে। তাছাড়া ঈদ বাজারে ভিড় বেড়েছে। অনেকের স্বাস্থ্য বিধি যেমন মানতে দেখা যাচ্ছে না, তেমনই হাট বাজারে গা ঘেসাঘেষি পরিবেশ সৃষ্টি হলেও ভিড় এড়ানোতে তেমন কারোরই আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। কেনো? সচেনতায় ঘাটতি নাকি করোনাকে কিছু মনেই করছে না? এরকম প্রশ্ন বাজারেরই দোকানিদের মধ্যে কেউ কেউ একে অপরকে করলেও ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বিক্রিতে। আর ক্রেতাদের অধিকাংশেরই ঝোঁক পছন্দের দ্রব্য নেয্যদামে কেনার দিকে। জেলা শহরের প্রায় প্রতিটি বিপনি বিতানেরই প্রায় অভিন্ন চিত্র। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার তিনটি ওয়ার্ড রেডজোন ঘোষণা করে লকডাউন করা হয়েছে।

Comments (0)
Add Comment