ঘরে মায়ের ঝুলন্ত লাশ দেখে ক্ষোভে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: পরিত্যক্ত ঘরের আড়ায় ঝুলছিলো বৃদ্ধ মা রোকেয়া খাতুনের লাশ। এ দৃশ্য দেখে ক্ষোভে স্ত্রী হিরা খাতুন ওরফে জোসনাকে (২৬) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে। গতপরশু শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের রামদিয়া গ্রামে ঘটে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা।
পুুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার হিরা খাতুন তার দুই বছরের সন্তানকে মারধর করেন। এ নিয়ে শাশুড়ি রোকেয়া খাতুনের সঙ্গে তার বাগবিতন্ডা হয়। অভিমানে প্রায় তিনদিন ধরে বউ-শাশুড়ি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন। শুক্রবার রাতে আব্দুর রহমান মা ও স্ত্রীর অভিমান ভাঙান। এ সময় স্ত্রী হিরা খাতুন অসুস্থ হলে তাকে পল্লি চিকিৎসক ডেকে শরীরে স্যালাইন দেয়া হয়। এরপর রাতে মায়ের খোঁজ নিতে যান আব্দুর রহমান। ঘরে মাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে রাত ১টার দিকে বাড়ির পরিত্যক্ত ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়নায় মায়ের লাশ ঝুলতে দেখে চিৎকার দেন তিনি। তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। বৃদ্ধ মায়ের ঝুলন্ত মরদেহ দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে আব্দুর রহমান ক্ষোভে অসুস্থ বউ হিরা খাতুনকে পিটানো শুরু করে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান হিরা খাতুন। তবে স্বামী আব্দুর রহমান দাবি করেন, মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে তার বউ স্ট্রোক আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
নিহত গৃহবধূর মা রাশিদা খাতুন বলেন, চার বছর আগে মেয়ের বিয়ে হয়েছিলো। জামাই খুব ভালো। কিন্তু শাশুড়ি মেয়েকে খুব অত্যাচার করতেন। মেয়ে কীভাবে মারা গেছে, আমি জানি না। ঘটনাস্থলে থাকা হিরা খাতুনের চাচি জেসমিন বলেন, মায়ের লাশ দেখে ক্ষোভে জামাই আমাদের মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। মেয়ের হাতে আঘাতের চিহ্ন ও রক্ত দেখা গেছে।
ঘটনাস্থলে থাকা হিরা খাতুনের চাচি জেসমিন বলেন, বউ শাশুড়ির ঝগড়া চলছিলো। এ নিয়ে অভিমানে রাতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে শাশুড়ি। মায়ের লাশ দেখে ক্ষোভে জামাই আমাদের মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। মেয়ের হাতে আঘাতের চিহ্ন ও রক্ত দেখা গেছে।
নিহত গৃহবধূর স্বামী আব্দুর রহমান বলেন, তিন দিন ধরে বউ-শাশুড়ির ঝগড়া চলছিলো। শুক্রবারে চাচাতো ভাইয়েরা এসে মিটমাট করে দেয়। রাতে বউ অসুস্থ হলে গ্রাম্য ডাক্তার এনে স্যালাইন দেয়া হয়। পরে মাকে ডাকতে গিয়ে ঘরে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করি। একপর্যায়ে বাড়ির পরিত্যক্ত ঘরে মায়ের ঝুলন্ত লাশ পাই। এরপর মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে বউ স্ট্রোক করে মারা যায়।
পান্টি ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে আব্দুর রহমানের মা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এবং তার স্ত্রী শাশুড়ি মৃত্যুর খবর শুনে স্ট্রোক করে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
কুমারখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিব হাসান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দুইটি লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।

 

Comments (0)
Add Comment