ঘূর্ণিঝড় অম্পান : চুয়াডাঙ্গায় দুজনসহ ১২ জেলায় ২৮ জনের মৃত্যু : বিদ্যুতহীন এককোটি গ্রাহক

সারারাত ধরে চলা তা-বে ঘরবাড়িসহ ভেঙে পড়েছে গাছপালা : ফসলের ব্যাপক ক্ষতি : প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ ১১ হাজার কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার: ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে লন্ডভন্ড হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলার জনজীবন। মারা গেছে চুয়াডাঙ্গায় দু জনসহ ৮ জেলায় অন্তত ২৮ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা। সুপার সাইক্লোন ‘আম্পান’ শক্তি কিছুটা হারিয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রূপে বুধবার দুপুরের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে। পরে রাতে এ ঝড় প্রবেশ করে বাংলাদেশে। ঝড়ের মধ্যে প্রবল বাতাসে বহু গাছপালা ভেঙে পড়ে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১২ জেলায় ২২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পর্যন্ত যাদের মৃত্যুর খবর এসেছে তাদের বেশিরভাগই ঝড়ে গাছ বা ঘর চাপা পড়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে যশোরে ১২ জন, পিরোজপুরে ৩ জন, চুয়াডাঙ্গায় ২ জন, বগুড়ায় নৌকা ডুবিতে ২ জন নিখোঁজ, পটুয়াখালীতে দুজন এবং ঝিনাইদহ, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, ভোলা, বরগুনা ও চাঁদপুরে একজন করে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। ফসলের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ। তবে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি নির্মাণ ও ত্রাণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মাঝে দেশে আঘাত হেনেছে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আম্পান। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ। আর ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার ও পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। বুধবার দুপুর আড়াইটার পর থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা ২৮ ঘন্টা বিদ্যুত না থাকায় গতকাল অধিকাংশ মানুষ পানির অভাবে গোসল করতে পারেননি। জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার ও দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন সরেজমিন পরিদর্শন শেষে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।

অপরদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে পৌঁছানো, সড়কে পড়ে থাকা গাছের ফলে আটকে থাকা পণ্যবাহী মালগাড়ি, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স চলাচলের ব্যবস্থা করেন পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। চুয়াডাঙ্গা জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ সদস্য ও কমিউনিটি পুলিশের সদস্যদের সমন্বয়ে মানুষের নিরবিচ্ছিন্ন চলাচল করতে ঝড়ের কবলে ভেঙ্গে যাওয়া গাছপালা তাৎক্ষণিক সড়ক থেকে অপসারণ করা হয়। এ সময় ঝড় পরবর্তী অসহায়ের সাহায্যের প্রস্তাবনাও জানানো হয়।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বুধবার অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফান পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানার পর সন্ধ্যা থেকে বাংলাদেশের উপকূলেও আঘাত হানে। সারারাত ঘূর্ণিঝড়রূপে থেকেই দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তা-ব চালিয়েছে আম্ফান। সারারাত তান্ডবের পর গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার পর শক্তি ক্ষয় হলে এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে প্রাথমিক ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও কৃষি মন্ত্রণালয় সরকারকে ক্ষয়ক্ষতির এ হিসাব দিয়েছে। তবে তারা ক্ষয়ক্ষতির তেমন কোনো বিবরণ দেয়নি। প্রাথমিকভাবে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার তথ্য দিয়েছে।’ পুরো হিসাব পেতে কিছুদিন লাগবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তা-বে সারা দেশে ৪৬ জেলার ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭ একর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগমনের বিষয়টি আগে থেকে জানার কারণে আমরা প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পেরেছিলাম। তাই ক্ষতির পরিমাণটা অনেকাংশে কম হয়েছে। এরপরও দেশের ৪৬ জেলায় ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭ হেক্টর জমির ফসল বিভিন্ন হারে ক্ষতি হয়েছে। এসব জমিতে থাকা বিভিন্ন ফসলের ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়েছে।’ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে দেশের ১৩ জেলার মোট ৮৪টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙেছে, যার দৈর্ঘ্য সাড়ে ৭ কিলোমিটার। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পয়েন্টগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। ইতোপূর্বে দুর্যোগের প্রস্তুতি হিসেবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ৫ হাজার ৫৫৭ কিলোমিটার বাঁধের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু আম্ফানের প্রভাবে দেশের নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় কমপক্ষে ৮-১০ ফুট বেশি উচ্চতায় পানি বেড়েছে, যা বিভিন্ন জেলার বেড়িবাঁধ বা তীররক্ষা বাঁধকে কোথাও কোথাও ভেঙে দিয়েছে বা কোথাও সেই বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি জনপদে প্রবেশ করেছে।’ প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুসারে, আম্ফানের প্রতিক্রিয়া শুরুর আগেই অর্থাৎ বুধবার বিকাল থেকেই বিভিন্ন জেলার বেশির ভাগ স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গতকাল বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ছিঁড়ে পড়া তার মেরামতের কাজ করে যাচ্ছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা। তবে ঠিক কখন বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। প্রায় সব রাস্তার ওপরই গাছ ভেঙে পড়ে যোগাযোগব্যবস্থা অচল হয়ে যায়। স্থানীয় প্রশাসনগুলো এসব গাছ সরিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক করে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তা-বে উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে পাউবো বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে ফসলি জমি, অসংখ্য মাছের ঘের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ভেঙে গেছে পল্লী বিদ্যুতের কয়েকশ’ খুঁটি। আম্ফানের ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া ছিলো। ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের জন্য এ ব্যাপারে সরকারের বরাদ্দ রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের পরই ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু হবে।

অন্যদিকে, দক্ষিণ উপকূলসংলগ্ন সাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে। সন্ধ্যায় জোয়ারের পানি আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ৭ ফুট ওপরে প্রবাহিত হয়েছে। সঙ্গে ছিলো দমকা হাওয়া। এতে তলিয়ে গেছে উপকূলীয় জেলাগুলোর সব কটি উপজেলা ও অর্ধশত চর। প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর ও মাছের ঘের। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাত হানবে আর হু হু করে পানি বাড়তে থাকায় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটায় কয়েক লাখ মানুষ। রাত ১২টার পরে ভাটার টানে পানি নামতে শুরু করে। উপড়ে গেছে বহু গাছপালা। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

চুয়াডাঙ্গায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের হানায় প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ে ঘরবাড়ি-গাছপালা ও ফসলের ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাড়িঘর ও গাছপালা ভেঙে পড়ে ব্যহত হয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আম্পানের তান্ডবে জীবননগরে দুজনের মৃত্যু খবর পাওয়া গেছে। গত বুধবার রাত ১০টা থেকে প্রচন্ডগতিতে আম্পান আঘাত হানে এ জেলায়। রাত বাড়ার সাথে সাথে ঝড়ের গতিবেগ ও বৃষ্টিপাত বাড়তে থাকে। প্রায় তিন ঘণ্টা চলে আম্পানের তান্ডব। আম্পানের কারণে চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, চলতি মরসুমে বোরো ধান, পানবরজ, ভুট্টাক্ষেত, আম ও কলাসহ উঠতি ফসলাদি বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে জেলায় আম ও কলা প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। এখনো ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক সামাদুল হক জানান, জেলায় ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ৮২ কিলোমিটার। বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৪৮ মিলিমিটার। এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে জেলার ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ক্ষতির পরিমাণ কম নয়। ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণে কাজ চলছে। তবে জেলা প্রশাসন পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করায় ক্ষতি অনেকটা কমেছে বলেও জানান তিনি।

খাসকররা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার খাসকররা এলাকায়  ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তা-বে সারারাত দমকা বাতাস ও ঝড়ে দুর্গম গ্রামগুলোতে কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে গাছ। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে জেলার বিভিন্ন অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ভেঙে পড়েছে অনেক গাছপালা। ভেসে গেছে এলাকার পুুকুরের মাছ।

খাসকররা উত্তরপাড়ার গ্রামের মৃত মহিউদ্দিন মল্লিকের ছেলে আজিজুল মল্লিকের প্রায় ২৫ বিঘার বিশাল পুকুরের ১০ লাখ টাকা মাছ ভেসে গেছে মাঠে। সকালে খবর পেয়ে কয়েক গ্রামের মানুষ খেপলা জাল ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে মাছ ধরতে ভিড় জমায়। এখন মৎস্যচাষি আজিজুল মল্লিক সর্বহারা। একমাত্র এই পুকুরটিই তার সম্বল ছিলো। এছাড়াও পুকুরপাড়ে ৭শ’ ফলন্ত কলাগাছ ছিলো যা সবই ভেঙে পড়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে আজিজুল মল্লিকের ১০ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ, নাগদহ ও আইলহাস ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে বাড়িঘর ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ঘূর্ণিঝড় আম্পান এ তান্ডব চালায়। মুন্সিগঞ্জের খুদিয়াখালী গ্রামের সাংবাদিক অনিক সাইফুলের কলাবাগান, আম বাগান ও কমলা লেবুর বাগানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া গ্রামের রাসেল ও মনির উদ্দিন, আসাদুজ্জামানসহ অনেক চাষির বরজ ও কলাবাগান ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে। অপরদিকে মোমিনপুর, জেহালা, নাগদহ, আইলহাস ইউনিয়নের প্রতিটা গ্রামের পাকা আধাপাকা ঘরবাড়ির টিনের চাল উড়ে গেছে। এছাড়া পানবরজ, কলাবাগান, আমবাগানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আসমানখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আলমডাঙ্গার গাংনী ও ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নে কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে। গত বুধবার রাতে বৈশাখী ঝড়ে ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের খোরদ গ্রামের মৃত আব্দুল গণি মালিথার ছেলে রবিউল হকের পানবরজ ও কলাবাগানে আঘাত হানে। এতে ৫ লাখ টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে বকুল হোসেন, ইকরামুল, হাসেম আলী, জয়নাল আবেদীন, আবুসদ্দীন, মানোয়ার হোসেন ও আজিজুল হকের। এদিকে, গাংনী ইউপির ২নং ওয়ার্ড সদস্য আতিয়ার রহমানের পানবরজ ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে।

দামুড়হুদা ব্যুরো জানিয়েছে, দামুড়হুদায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে পুরো এলাকা। মাঠে থাকা ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে পেঁপেবাগান, কলাবাগান, ধানক্ষেত, পানবরজ, সবজিক্ষেত সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নিচু জমিতে থাকা বেশকিছু সবজিক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। গাছপালা পড়ে ছিড়ে গেছে বিদ্যুতের তার। গাছ পড়ে বেশকিছু বসতবাড়ি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ যেনো মরার উপর খাড়ার ঘা। এছাড়া বুধবার দুপুর আড়াইটার পর থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা ২৮ ঘন্টা বিদ্যুত না থাকায় গতকাল অধিকাংশ মানুষ পানির অভাবে গোসল করতে পারেননি। জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার ও দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন সরেজমিন পরিদর্শন শেষে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার বেশীরভাগ সড়কের দুপাশের গাছপালা ভেঙে লন্ডভন্ড অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন যে যার মতো পারছে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। মোটা সাইজের গাছগুলো করাত ভিড়িয়ে কাটা হচ্ছে। দামুড়হুদা কলেজের পেছনে বেশকিছু জমির পাঁকা ধান পানিতে থৈ থৈ করছে। দামুড়হুদা, জুড়ানপুর, নতিপোতা, নাটুদহ, হাউলী, কার্পাসডাঙ্গা, কুড়–লগাছি, পারকৃষ্ণপুর-মদনাসহ প্রতিটি ইউনিয়নে শ’ শ’ বিঘা জমির পেঁপে বাগান এবং কলাবাগান ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে। সবজির ক্ষেতগুলো পানিতে তলিয়ে বিবর্ণরূপ ধারণ করেছে। দামুড়হুদার ডুগডুগি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে চা দোকানি জালাল উদ্দীন বুদোর বসতবাড়ির চালের উপর একটি বড় আম গাছ এবং ডুগডুগি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের পেছনে আব্দুর রশিদের বসতবাড়ির ওপর একটি বড় সাইজের শিশু গাছ ভেঙে পড়ে আছে। ঘরে থাকা লোকজন এ যাত্রায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ রশিদের স্ত্রী পারভীনা খাতুন জানান, রাত সাড়ে ১১ টার দিকে গাছটি ভেঙে ঘরের ওপর পড়ে। এ সময় আমরা স্বামী-স্ত্রী ও ২ সন্তান সবাই ঘরের মধ্যেই ছিলাম। দুই রুমে থাকা ২টা শোকেচ, টিভিসহ আসবাবপত্র ভেঙে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া বড় ওই শিশুগাছের ডালপালা পড়ে দিনমজুর আব্দুল মান্নানের টিনের ছাউনী তছনছ হয়ে গেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তিনি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করলে তিনিও তাৎক্ষণিক ছুটে আসেন ডুগডুগি গ্রামে। সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ক্ষতিগ্রস্থ দুই পরিবারে খাদ্য সামগ্রী ও নগদ ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। দামুড়হুদা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আশরাফ হোসেন ও হাউলী ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দীন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আধা কাঁচা আধা পাকা প্রায় হাজার খানেক বসতঘর বিনষ্ট হয়েছে মর্মে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের নিকট থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া কৃষি অফিস জানিয়েছে, ৫৩৬ হেক্টর ধানক্ষেত এবং পেঁপেবাগান, কলাবাগান, সবজিরক্ষেতসহ মোট ২২৬৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে গাছপালা ভেঙে বিদ্যুতের তার ছিড়ে পড়ায় প্রায় ২৮ ঘন্টা বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ ছিলো। ফলে গতকাল বৃহস্পতিবার পানির অভাবে অনেকেই গোসল করতে পারেননি বলে খবর পাওয়া গেছে।

কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে অনেক কিছু। কার্পাসডাঙ্গাসহ আশপাশ এলাকাজুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। পানি বেড়ে তলিয়ে গেছে ফসলি আবাদ। গতকাল বুধবার রাতে এলাকায় আঘাত হানে আম্পান। হাজারো গাছ ভেঙে গেছে। বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন রয়েছে প্রায় সব এলাকা। এছাড়া ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সকালে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় বড় বড় গাছ ভেঙে পড়ে আছে। আবার মাটির ঘর ভেঙে গেছে। বাজারের টিনের দোকানগুলোর টিন বাতাসে উড়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে যারা আম গাছ কিনেছিলো লাভের আশায় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তাদের মাথায় হাত। একদিকে যেমন করোনা ভাইরাসের কারনে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে তেমনই এই ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গরীব অসহায়েরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

জুড়ানপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তান্ডব জুড়ানপুর ইউনিয়নের সকল গ্রামেই বয়ে গেছে। এতে কাচা আধাপাকা ঘর বাড়ি ভেঙে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। সেই সাথে ব্যাপক ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিতে মাঠের কাচা পাকা ধান, খরমুজ, পটলের মাচা, পেপে বাগান, কলা বাগান, ও গাছপালা মাটিতে মিশে গেছে। গতপরশ বুধবার বিকেল থেকে হালকা বৃষ্টি হলেও রাত ৮টার পর থেকে শুরু হয় তান্ডব তা চলে রাত ১টা পর্যন্ত। চাষিরা জানান, করোনা মহামারিতে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে চাষ করেছি। শ্রমিকের অভাবে বৃষ্টিতে ধান গোছাতে পারিনি। এখন ঝড় বৃষ্টিতে সব নষ্ট হয়ে গেলো। লকডাউন থাকায় খরমুজ কম বেশি বিক্রি করতে পেরেছি। বাকিটা খরমুজের মাচাসহ ঝড়ে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। পেঁপে গাছসহ সকল প্রকার বাগান ভেঙে পড়ায় প্রায় নিঃস্ব বর্তমানে।

জীববনগর ব্যুরো জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বৈদ্যনাথপুরের বালক শামীম (৯) গাছ চাপায় ও পোস্টঅফিসপাড়ার বৃদ্ধা মোমেনা খাতুন (৮৫) ঘর চাপা পড়ে মারা যান। এছাড়াও আহত হয়েছেন বহু মানুষ। প্রায় ৪ ঘন্টা ধরে চলা ঝড়ের তান্ডবে বহু কাঁচা-পাকা বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে গাছ-গাছালি ও বাগানের কলাগাছ। ঝড়ের তান্ডবে গাছের আম ও লিচুর সিংহভাগ ঝরে পড়েছে। ক্ষেতের ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুুকুরের মাছ। বৈদ্যুতিক সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

জানা যায়, ঝড়ের তান্ডব শুরু হলে পোস্টঅফিসপাড়ার মৃত ইউছুফ আলীর স্ত্রী মোমেনা খাতুন চালা চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। বৈদ্যনাথপুরের রেজাউল ইসলামের ছেলে শামীম তাদের টিনের বাড়িতে পরিবারের অন্যদের সাথে বসেছিলো। এ সময় ঘরের সাথে থাকা জাম গাছ ভেঙে পড়লে গাছচাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে। শহরের মুক্তিযোদ্ধাপাড়ার মুস্তাকীম (২০) ও মর্জিনা খাতুনসহ (৪৮) বহু মানুষ ঝড়ের তান্ডবে আহত হয়েছে।

সুবলপুরের মিজানুর রহমান ও মুক্তারপুরের সাইফুল ইসলাম জানান, বাগানের আম ও লিচুর সিংহভাগ ঝরে পড়েছে। আম নেয়ার লোক নেই। এ ঘটনায় তারা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গোয়ালপাড়ার হাফিজুর রহমান জানান, মুষলধারে বৃষ্টির কারণে ক্ষেতের পাকা ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মনোহরপুরের আকিমুল ইসলাম জানান, তার পুকুরের প্রায় ৬০ মণ মাছ পানির ¯্রােতে ভেসে গেছে। পেয়ারাতলার আড়ৎ ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের প্রধান জানান, ঝড়ের তান্ডবে তার নির্মাণাধীন আটো রাইস মিলটি বিধ্বস্ত হয়ে প্রায় ৬০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ভোর থেকে বিকেল অব্দি  সড়কের ওপর ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলো। আম্ফানের তান্ডবে বন্ধ হয়ে গেছে গ্রামীণ, বাংলাালিংক ও রবির মোবাইল নেটওয়ার্ক। ফলে ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ জানার সুযোগ হয়নি এবং সেই সাথে দায়িত্বশীল কারো মতামত নেয়াও সম্ভব যায়নি।

মেহেরপুর অফিস/মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গত বুধবার (২০ মে) রাতে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুপার সাইক্লোন আম্পান মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলার ওপর দিয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করছে। এ ঘটনায় রাত ১০ টার দিকে শুরু হয়ে রাত দেড়টা পর্যন্ত মেহেরপুরে চলে দমকা হাওয়া ও ঝড়ো বৃষ্টি। এ ঝড়ে প্রাণহানির কোনো খবর পাওয়া না গেলেও উঠতি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে মাঠের শত শত বিঘা জমির কলাগাছ ভেঙে গেছে। মাঠের ধান পানির ওপর শুয়ে পড়েছে। ক্ষেতের পাটের মাথা ভেঙে গেছে। অনেক জমির পাট শুয়ে পড়েছে। এছাড়া মাঠের অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এদিকে আম-লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আর কয়েকদিন পরে বাজার উঠার কথা মেহেরপুরের আম-লিচু। গত রাতের ঝড়ে আম-লিচু ঝরে পড়েছে। এতে আম-লিচু চাষিদের মাথায় হাত। এদিকে শত শত কাঁচা ঘর-বাড়ি ভেঙে গেছে। টিনের চাল উড়ে গেছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও অসহায় দরিদ্র মানুষের ঘর-বাড়ির। গাছপালা উপড়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ, টেলিফোনের তার ছিঁড়ে পড়েছে। খুঁটি উপড়ে গেছে। গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১ টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ ছিলো।

মেহেরপুর শহরের আমচাষি আবুল কালাম বলেন, শহরের উপকন্ঠ বামনপাড়াতে তার ১২ বিঘা জমির আম বাগানে এবার প্রচুর আম এসেছিলো। ২৫ মে মেহেরপুরের আম ভাঙা শুরু হবে। লাভের আশায় ছিলাম। কিন্তু গত রাতে ঝড়ের তান্ডব সে আশায় ছাই ফেলেছে।

মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি ৭ বিঘা জমিতে কলা চাষ করেছেন। কিছু কিছু গাছে কাদি রয়েছে আবার কিছু কিছু গাছে মোচা বের হওয়ার সময় এসেছিলো। এ সময় প্রলঙ্করী ঝড়ে গাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এতে তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

মুজিবনগর উপজেলার মানিকনগর গ্রামের চাষি সফিউদ্দিন জানান, এ বছর তিনি ২ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। রাতে ঝড়ের পরে সকালে মাঠে গিয়ে দেখেন ক্ষেতের অধিকাংশ পাট গাছ শুয়ে পড়েছে। কিছু কিছু গাছ দাঁড়িয়ে থাকলেও গাছের মাথা কেটে পড়ে গেছে। পাট নিয়ে তার স্বপ্ন এবছর শেষ হয়ে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা স্বপন কুমার খাঁ বলেন, এই মুহুর্তে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছে না। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে মাঠে পাঠিয়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করার চেষ্টা চলছে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে উপড়ে পড়া একটি শতবর্ষী গাছের চাপায় নাদেরা বেগম (৫৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন নিহত নাদেরার স্বামী বুদোই ম-লসহ কয়েকজন। গতকাল বুধবার রাতে সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, রাতে নাদেরা বেগম ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত দুইটার দিকে ঘরের পাশে শতবর্ষী একটি বটগাছ উপড়ে তাদের ঘরের ওপর পড়ে। এতে নাদেরা বেগম ঘটনাস্থলে মারা যান। আটকা পড়ে আহত হন তার স্বামী। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে গাছ কেটে লাশ ও আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন। নিহত নাদেরার পরিবারকে ২০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

এদিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ঝিনাইদহ জেলায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার ছয়টি উপজেলায় রাতভর তা-ব চলেছে আম্পানের। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, ঝড়ে কলাগাছ, পাটক্ষেত, পানের বরজসহ সবজিক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও নষ্ট হয়েছে আম ও লিচু। বৃষ্টির কারণে তলিয়ে গেছে পুকুর। গাছের ডাল ভেঙে গ্রামীণ সড়কগুলোতে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ভেঙে গেছে কাঁচা, পাকা, আধা পাকা কয়েকশ’ ঘর। এদিকে আম্পান ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে কৃষি বিভাগ কাজ শুরু করেছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী দেয়া হবে।

যশোর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ে ঘরের ওপর গাছ পড়ে যশোরে মা-মেয়েসহ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে যশোরের বিভিন্ন উপজেলায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে যশোরের শার্শা উপজেলায় চারজন, চৌগাছায় দুজন, বাঘারপাড়ার একজন ও মণিরামপুর উপজেলার আছেন পাঁচজন।

পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় সবাই ঘরে অবস্থান করছিলেন। ঝড়ে ঘরের ওপরে গাছ পড়ে ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার চানপুর গ্রামের চায়না বেগম (৪৫) ও তার মেয়ে রাজিয়া খাতুন (১৪), শার্শা উপজেলার সামটা জামতলা গ্রামের মোক্তার আলী (৬৫), মালোপাড়া গ্রামের গোপালচন্দ্র বিশ্বাস (৬৫), গোগা পশ্চিমপাড়ার শাহজাহানের স্ত্রী ময়না খাতুন (৩৫) ও মহিষাকুড়া গ্রামের মিজানুর রহমান (৬০), বাঘারপাড়া উপজেলার বুধুপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী ডলি বেগম (৫০), মণিরামপুর উপজেলার পারখাজুরা গ্রামের খোকন দাস (৭০), তার স্ত্রী বিজন দাসী (৬০), ওয়াজেদ আলী (৫০), তার ছেলে ঈশা (১৫) ও জবেদ আলীর স্ত্রী আছিয়া বেগম (৭০)। যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে যশোরের বিভিন্ন উপজেলার ১২ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ১২ জনের নাম-পরিচয়সহ ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানিয়ে যশোর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।

 

Comments (0)
Add Comment