চুয়াডাঙ্গার বহুল আলোচিত জুবাইর হত্যা মামলার রায় : হাসান ও মুন্তাজের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

পিয়াসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এরা খালাস

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার বহুল আলোচিত জুবাইর মাহমুদ হত্যা মামলার রায়ে দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদ-াদেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোহা. বজলুর রহমান জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় প্রদান করেন। রায়ে জুবাইয়ের বান্ধবী পিয়াসহ ৪ আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। এ মামলার দু আসামি রশিদ পুলিশের ক্রসফায়ারে ও নজু গণপিটুনিতে মারা যাওয়ায় তাদেরকে বিচার থেকে আগেই অব্যাহতি দেয়া হয়।

             দণ্ডিত দু আসামি হলেন চুয়াডাঙ্গা আলুকদিয়া পিতম্বরপুরের গোলাম নবীর ছেলে মোহাম্মদ হাসান ও আলুকদিয়ার মৃত হারান ম-লের ছেলে মুন্তাজ। মামলার মূল অভিযুক্তদের মধ্যে রশিদ আহমেদ পুলিশের ক্রসফায়ারে এবং নজু গণপিটুনিতে মারা যাওয়ায় বিচার থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। এছাড়া পিয়ার পিতা স্বাভাবিকভাবেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। যারা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন তারা হলেন, আসামি আমীর হোসেন, ইমান আলী, নুসরাত জাহান পিয়া ও কবির হোসেন।

জানা গেছে, ঢাকা সাভারের নূরুল হক চৌধুরীর ছেলে জুবাইর মাহমুদ বিপিএটিসি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলো। একই কলেজের ছাত্রী ছিলো চুয়াডাঙ্গা আলুকদিয়া টেইপুরের নজির হোসেনের মেয়ে নূসরাত জাহান পিয়া। জুবাইর ও পিয়ার মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পিয়া তার পিতার সাথে সাভারেই বসবাস করতো। ২০০৯ সালের এপ্রিলের প্রথম দিকে সে তার দাদা বাড়ি আলুকদিয়ার টেইপুর বেড়াতে আসে। ১১ এপ্রিল আসে জুবাইর মাহমুদ। এর পরদনিই জুবাইয়েরর পিতার নিকট মুক্তিপণ দাবি করে বলা হয়, তাকে অপহরণ করা হয়েছে। জুবাইয়ের পিতা নূরুল হক চৌধুরী চুয়াডাঙ্গায় ছুটে আসেন। পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে জুবাইরকে উদ্ধারে দিন রাত ছুটতে থাকেন। দৈনিক মাথাভাঙ্গার পাতায় উঠে আসে জুবাইরের চুয়াডাঙ্গায় আসা এবং তার নিখোঁজ হওয়ার খবর। জুবাইরকে যেমন পাওয়া যায়নি, তেমনই ওই সময় পিয়াও এলাকাছাড়া। রহস্য ঘণিভূত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে পুলিশের বিচক্ষণতায় ধরা পড়ে পিতম্বপুরের হাসান। তারই দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জুবাইর অপহরণের ১৬ দিনের মাথায় আলুকদিয়া-ভালাইপুর সড়কের মধ্যবর্তী স্থানের কবরস্থানের পুরাতন একটি কবর থেকে উদ্ধার করা হয় লাশ। ময়নাতদন্ত শেষে ছেলের গলিত লাশ নিয়ে তার পিতা ছোটেন তাদের পৈতিক বাড়ি রাজবাড়িতে। সেখানেই দাফন করা হয়। জুবাইরের পিতা ৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। জুবাইরের পিতা বাদি হয়ে ৯জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ঘটনার নেপথ্য উন্মোচনে পুলিশি তদন্ত জোরদার হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে খবর পাওয়া যায় পিয়াকে নিয়ে মামলার অন্যতম প্রধান আসামি রশিদ আহমেদ বগুড়ায় অবস্থান করছে। এরই কিছুদিনের মাথায় চুয়াডাঙ্গার বুজরুকগড়গড়ি বকুল মিয়ার ইটভাটার নিকট বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারায় রশিদ। পিয়ার দাদাবাড়ির প্রতিবেশী রশিদ। পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয় পিয়াকে। চলে জিজ্ঞাসাবাদ। ওই সময় বিষয়টি এতোটাই আলোচিত হয়ে উঠে যে, পিয়াকে দেখতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানাসহ জেলা শহরে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। পুলিশি তদন্ত শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সেকেন্দার ৮জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র তথা চার্জশিট পেশ করেন। চলে বিচার প্রক্রিয়া। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২ আদালত স্বাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ ও পরীক্ষা করে আসামির মধ্যে হাসান ও মুন্তাজকে দোষী সাব্যস্ত করে উভয়কে যাবজ্জীবন কারাদ-, ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা আনদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদ-াদেশ দেন। রায়ের পর মামলার বাদী অবশ্য আপিল করবেন বলে মন্তব্য করেছেন। মামলাটি রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন জানান, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় ২ আসামির যাবজ্জীবন কারাদ- ও ৪ আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত। প্রসঙ্গত, পিয়ার পিতা অসুস্থ হয়ে ইতোমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

 

Comments (0)
Add Comment