চুয়াডাঙ্গার বড়সলুয়া গ্রামে কুপির আগুনে ঝলসে গেছে কলেছছাত্রীর শরীর

চিকিৎসার জন্য সহপাঠীরা নিয়ে গেছে ঢাকায় : সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন মানবতার পুলিশ সুপার
নজরুল ইসলাম: বাবা রাজমিস্ত্রি। অভাব অনটনের সংসারে লেখাপড়া চালিয়ে নেয়া প্রায় অসম্ভব। থেমে যাবার পাত্রী নয়; চুয়াডাঙ্গা বড়সলুয়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি আরজান আলীর মেয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনার্স প্রথমবর্ষের ছাত্রী পলি খাতুন। নিজের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে হাতের কাজ হিসেবে বেছে নেয় গোসলকরার গা ডলার ছুবা বানানোর কাজ। ক্রুচ আর সুতোর ভাঁজে ভাঁজে স্বপ্ন দেখতে থাকেন লেখাপড়া শিখে বাবার সংসারের হাল ধরার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস অসাবধানতাবসত কুপির আগুনে শরীরের অধিকাংশ অংশ ঝলসে গেছে তার। আগুনে ঝলসে যাওয়ায় যন্ত্রণায় বিছানায় করছে ছটফট আর আত্মচিৎকার, ঠিক তখনি চিৎকারের শব্দ শুনে এগিয়ে আসে সহপাঠীরা। উন্নত চিকিৎসার জন্য পলিকে নিয়ে গেলো ঢাকায়। পলির চিকিৎসার্থে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার মানবতার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম। সেই সাথে সহযোগিতার হাত বাড়াতে বিত্তবানদের প্রতি উদাত্ত আহবানও রেখেছেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের বড়সলুয়া মুচিপাড়ার আরজান আলী ওরফে প্রীতিম পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। তিন মেয়ে বিলকিচ, পলি ও জলি। বড় মেয়ে বিলকিচ স্বামীর সংসারে। মেজমেয়ে পলি খতুন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনার্স প্রথমবর্ষের ছাত্রী। ছোট মেয়ে জলি স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। আরজানের দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে মেয়েদের লেখাপড়া করানো প্রায় অসম্ভব। বাবা যখন মেয়েকে লেখাপড়া করানোর সামর্থ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন, থেমে থাকার পাত্রী নয় লিপি। নিজের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে হাতের কাজ হিসেবে নাইলন সুতো দিয়ে গোসল করার গা ডলার ছোবড়া বানানোর কাজ শুরু করে। ছোবড়া তৈরি আর বিক্রির টাকায় চলছে তার লেখাপড়া। ক্রুচ কাটা আর সুতো বুননের মধ্যে স্বপ্ন দেখতে থাকে সে। লেখাপড়া শিখে বড় হয়ে কিছু একটা করে সংসারের হাল ধরবে সে। দুঃখ কষ্টের মধ্যে চলছিলো সবকিছুই। দু’সপ্তাহ আগে রাতে ছোবড়া বানানোর সময় সুতোর কাটামুখ কুপির আগুনে জোড়া লাগাতে বসে সে। জোড়া লাগিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে রাখতে যায়। মনের অজান্তে অসাবধানতাবসত গায়ের পোশাকে নিচের অংশে আগুন লেগে যায় তার। যখন টেরপায় তখন শরীরের থেকে পোশাক বিচ্ছিন্ন করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। ততক্ষণে শরীরের অনেকাংশ পুড়ে গেছে তার। রাতেই নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। পরের দিন সকালে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেয় পলির শরীরের অর্ধেকের বেশি পুড়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়া প্রয়োজন। অর্থাভাবে সেদিন ঢাকাতে না নিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে চিকিৎসার অভাবে যন্ত্রণায় বিছানায় ছটফট করতে থাকে। পরে সহপাঠীরা খবর পেয়ে ছুটে আসে পলির বাড়িতে। সহপাঠীরা কিছু অর্থ সংগ্রহ করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পলিকে ঢাকা নেয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকায় পৌঁছে শেখ হাসিনা বানর্ ইউনিট হাসপাতালে ভর্তি করে পলিকে। বর্তমানে পলি বার্ন ইউনিটের ১৭নং বেডে চিকিৎসাধিন রয়েছে বলে পারিবারিকসূত্র জানিয়েছে।
এদিকে বিষয়টি জানতে পেরে চুয়াডাঙ্গা মানবতার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি পলির বর্তমান অবস্থা জানতে দর্শনা থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মাহাব্বুর রহমান কাজল শুক্রবার বিকেলে পলি বাড়িতে যান এবং পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলেন। পলি বর্তমানে কোথায় কি অবস্থায় আছে সে সম্পর্কে তথ্য নিয়ে পুলিশ সুপারকে অবহিত করেন তিনি। শুধু তাই নয় ওসিও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। পলির চিকিৎসার্থে প্রচুর অর্থের প্রয়োজনীতা দেখা দেয়ায় পুলিশ সুপার বিত্তবানদের এগিয়ে আসারও আহবান জানিয়েছেন। তাই আসুন আমি আপনি সকলেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে পলির স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখি।

Comments (0)
Add Comment