চুয়াডাঙ্গায় কমিটি ঘোষণা ছাড়াই ফিরে গেলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা

স্টাফ রিপোর্টার: প্রকাশ্যে কমিটি ঘোষণা ছাড়াই ফিরে গেলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন শেষে কমিটি ঘোষণার কথা ছিলো। সাবজেক্ট কমিটির বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক পদে মতপার্থক্য দেখা দেয়ায় কেন্দ্রীয় নেতারা কমিটি ঘোষণা না করেই ফিরে যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক শওকত আলী বিশ্বাস। তিনি বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নানকে সাবজেক্ট কমিটিতে উপস্থিত ৫৮ জন সদস্যের মধ্যে থেকে ৫২ জন সমর্থন দিলেও কেন্দ্রীয় নেতারা এটি আমলে নেননি। সাবজেক্ট কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সভাপতি হিসেবে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের ব্যাপারে কারো দ্বিমত না থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদে আজাদুল ইসলাম আজাদের বিষয়ে কমিটির অধিকাংশ সদস্যের ‘না’ প্রস্তাব ছিলো।

অপর একটি সূত্রে জানা যায়, সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি আলী আজগার টগর ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল মালেক নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদুল ইসলাম আজাদের নাম প্রস্তাব করেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নানকে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম প্রস্তাব করলে সাবজেক্ট কমিটির ৫৮ জন সদস্যের মধ্যে ৫২ জন সদস্য তা সমর্থন করেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক আরও বলেন, প্রথম অধিবেশন শেষে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দিয়ে আসেন সাবজেক্ট কমিটি প্রথমে সমঝোতার মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের চেষ্টা করবে। তা না হলে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সমবেত হওয়া সাবজেক্ট কমিটির আলোচনায় নতুন কমিটি গঠন বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। সেক্ষেত্রে নতুন কমিটি গঠনের জন্য কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটি নির্বাচন নিশ্চিত করার কথা। কিন্তু সেটি করা হয়নি। এরপর সাবজেক্ট কমিটির উপস্থিত ৫২ সদস্য মুন্সি আলমগীর হান্নানকে সাধারণ সম্পাদক পদে সমর্থন দিলেও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সেই সমর্থনের গুরুত্ব দেননি। এছাড়া কমিটি গঠন বিষয়ে নতুন কমিটির সভাপতি সম্পাদকের নাম দলীয় কার্যালয়ে বা মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কোনো ঘোষণা দেননি। এমনকি সার্কিট হাউজেও কেন্দ্রীয় নেতারা সাংবাদিকদেরকে ডেকে কমিটি ঘোষণা করেননি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ লিখিত বা মৌখিক ঘোষণা ছাড়াই গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা ত্যাগ করেন।

সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হলেও বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিল অধিবেশন ছাড়াই শেষ হয় সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা। বেলা সাড়ে ৩টায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সাবজেক্ট কমিটির আদলে সভা হয়। দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কথা ছিলো দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা শেষে কেন্দ্রীয় নেতারা টাউন ফুটবল মাঠের অনুষ্ঠান মঞ্চে এসে কমিটি ঘোষণা দেবেন। বিগত কাউন্সিলগুলোয় এমনটাই হয়েছে। অথচ এবারের চিত্র উল্টো। কেন্দ্রীয় নেতা কাজী জাফর উল্লাহ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম উপস্থিত সাবজেক্ট কমিটির সদস্যদের সরাসরি জানিয়ে দেন যে নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নির্দেশনা আছে, সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারকে সভাপতি ও আজাদুল ইসলাম আজাদকে সাধারণ সম্পাদক করতে হবে। সভাপতি পদে আগের সভাপতি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কারও দ্বিমত না থাকলেও সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে বাগবিত-া হয়। কেন্দ্রীয় নেতারা সাধারণ সম্পাদক পদে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজাদুল ইসলাম আজাদের নাম ঘোষণা করলে এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন প্রতিবাদ করেন। ছেলুন জোয়ার্দ্দার দাবি করেন, নেত্রী তাকেও একটি গাইডলাইন দিয়েছেন। মুন্সি আলমগীর হান্নান ছাড়া আর কাউকে সাধারণ সম্পাদকের পদ দিলে তিনি এর দায়ভার বহন করবেন না। প্রয়োজনে পদত্যাগ করবেন। ছেলুনের এমন বক্তব্যের পর কেন্দ্রীয় নেতারা বিকেল ৪টার দিকে কার্যালয় ছেড়ে সোজা সার্কিট হাউসে যান এবং সেখান থেকে ঢাকায় ফিরে যান।

এ ব্যাপারে আজাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত নেতারা ৫০ বার উচ্চারণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করে দিয়েছেন। তারপর দুজন মিলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করছেন। অতীতেও তাই হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আসল কথা উনি আমাকে নেবেন না। কে মানলো, আর না মানলো তাতে কোনো যায় আসে না। তবে ওনাকে কেন্দ্রীয় নেতারা বারবার বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন, আমরা আজাদকে চাই।’

অপরদিকে মুন্সি আলমগীর হান্নান বলেন, সাবজেক্ট কমিটির ৫৮ সদস্যের মধ্যে ৫২ জনই তাকে সাধারণ সম্পাদক পদে দেখতে চাইলেও কেন্দ্রীয় নেতারা তাকে বঞ্চিত করেছেন। এখানে তৃণমূলের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি।

Comments (0)
Add Comment