চুয়াডাঙ্গায় করোনায় এক কিশোরীসহ ৬ জনের মৃত্যু : শনাক্ত ৬৯

করোনা ইউনিটে শয্যার তুলনায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি : বেড না পেয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকে
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে প্রতিদিন বেড়েই চলেছে রোগীর সংখ্যা। ফলে ধারণ ক্ষমতার থেকে অধিক রোগী রয়েছেন এই ইউনিটে। অপরদিকে, করোনায় প্রতিদিন নতুন মুখ আক্রান্ত হচ্ছেন। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে নেয়া হচ্ছে হাসপাতালে। তবে করোনা ইউনিটে শয্যা খালি না থাকায় ফিরতে হচ্ছে বাড়িতে। এদিকে অক্সিফ্লোমিটার ও অক্সিজেন পোর্ট পর্যাপ্ত পরিমাণ না থাকায় করোনা রোগীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তবে ইতোমধ্যে হাসপাতালের পুরনো ভবনের সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন, অক্সিফ্লোমিটার ও অক্সিজেন পোর্টের চাহিদা চেয়ে গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, শনিবার চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ১২ বছরের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও পাঁচজন। সুস্থতার সনদ পেয়েছেন ২১৯ জন। এদিন নতুন করে চুয়াডাঙ্গায় ৬৯ জনের শরীরে কোভিড ১৯ শনাক্ত হয়। এছাড়া গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবননগরের এক তরুণ ব্যবসায়ী এবং যশোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবননগরের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তার সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে এর মধ্যে আলমডাঙ্গা বটিয়াপাড়া গ্রামের রাহুল আলীর কিশোরী মেয়ে মায়া খাতুন সম্প্রতি সর্দি কাশি জ্বরে আক্রান্ত হন। গতকাল শনিবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর র‌্যাপিড আন্টিজেন টেস্টে করোনা শনাক্ত হয়। এরপর রেডজোনে নেয়া হলে বিকেল সাড়ে ৬ টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের রেডজোনে একজনসহ হলুদ জোনে আরও ৫জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার চুয়াডাঙ্গায় ৩৩২ নমুনা পরীক্ষা করে ৬৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৮ জন, আলমডাঙ্গায় ২০ জন, দামুড়হুদার ১০ এবং জীবননগরে ১১ জন রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগী সংখ্যা ৫ হাজার ৬শ ৬০ জন। শনিবার সুস্থতার সদন পেয়েছেন ২১৯ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট সুস্থ হলেন ৩ হাজার ৬০৬ জন। এ পর্যন্ত জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১৫০ জনের এবং জেলার বাইরে ১৭ জনের।
শনিবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ নতুন ২৯৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট ল্যাবে প্রেরণ করে। এ নিয়ে মোট নমুনা প্রেরণ করেছেন ২০ হাজার ৬৬৬ জনের। এদিন ৩৩২ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট ফলাফল পাওয়া গেছে ২০ হাজার ৫০২ জনের। জেলায় মোট সক্রিয় রোগীর মধ্যে হাসপাতালে ১০৪ জন, বাড়িতে আছেন ১ হাজার ৭শ ৮৩ জন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, করোনা ইউনিটের রেডজোন এবং হলুদ জোন মিলিয়ে মোট ১৫০ টি শয্যা রয়েছে। বর্তমানে সেখানে ১৭৪ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ৮০ জন রেডজোনে ও হলুদ জোনে রয়েছেন ৯৪ জন। যেখানে ২৪ জন চিকিৎসক এবং নার্স দরকার ৭২ জন, সেখানে আছেন ১০ জন চিকিৎসক ও ৩৫ জন নার্স ডিউটি করছেন। শয্যা ফাঁকা না থাকায় রোগী নিয়ে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
শনিবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা থেকে এক করোনা আক্রান্ত রোগীকে নিয়ে এসেছেন সদর হাসপাতালে। কথা হয় তার স্বজনদের সাথে। তারা জানায়, তিনদিন আগে তার করোনা শনাক্ত হয়। রাত থেকে প্রচুর শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তাই হাসপাতালে ভর্তি করতে এসেছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে রেডজোনে একটি শয্যাও ফাঁকা নেই। বলছেন বাড়িতে নিয়ে যেতে। কিন্তু কখন সিট খালি হবে সেটা বলতে পারছে না। পরে তারা বাড়ি ফিরে যান।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এএসএম ফাতেহ আকরাম বলেন, হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। কোনো শয্যা খালি নেই। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন ১৫শ থেকে ২ হাজার লিটার অক্সিজেন লাগছে। তবে অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি নেই।
তিনি আরও বলেন, সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে শয্যার তুলনাই আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এ জন্য যাদের স্যাচুরেশন ৯৫ এর উপরে তাদেরকে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কারণ ৯৫ এর অধিক স্যাচুরেশন হলে আমরা ওই রোগীকে স্বাভাবিক ও সুস্থ আছে বলে ধরে নিই। আমরা চাই রোগীরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেন। তবে ওই রোগীর স্যাচুরেশন ৯৫ এর বেশি হওয়ায় বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সংকট কাটাতে ইতোমধ্যে চাহিদা চেয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

Comments (0)
Add Comment