স্টাফ রিপোর্টার: পিআর পদ্ধতি নিয়ে যারা গোঁ ধরছেন, তারা সাধারণত নির্বাচন দেখে ভয় পাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। তিনি বলেন, যারা পিআর পদ্ধতি চায় তারা নির্বাচনে ভয় পায়। ভয় পাওয়ার বাস্তব কারণও আছে। অনেক ইসলামী দল আছে, যাদের প্রার্থীরা কখনও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। এর মধ্যে অন্যতম ইসলামী আন্দোলন। আওয়ামী লীগের কাছে এই দলটি যেভাবে নাস্তানাবুদ হয়েছে, বিশেষ করে বরিশালের সবশেষ নির্বাচনে তাদের পীর রক্তাক্ত হওয়ার পর এখন তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের সময় যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলোতেই তারা অংশগ্রহণ করেছে, আওয়ামী লীগকে তারা পেয়ারের সংগঠন মানতো। শনিবার চুয়াডাঙ্গার নিজ বাড়িতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় তিনি বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রসঙ্গে ও চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকে পূনরায় নির্বাচন করার কথাও বলেন। গতকাল শনিবার সকালে চুয়াডাঙ্গার নিজ বাড়িতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। দুদু বলেন, যারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়, তারা যদি মনে করে এটি খুবই জনপ্রিয় বিষয়, তাহলে বিষয়টি তাদের কর্মসূচিতে নিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করে তারপর সিদ্ধান্ত নিক। কেননা এই পদ্ধতি চালুর জন্য সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগবে। পৃথিবীর যেসব দেশে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়েছে, সেসব দেশে তিন বছরের মধ্যে অন্তত ১০ বার সরকার পতন হয়েছে। নেপালই যার বড় দৃষ্টান্ত। একটি দেশের সমৃদ্ধি, উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা বাধাহীনভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সরকারের স্থিতিশীলতা খুব জরুরি। সেটির নিশ্চয়তা পিআর পদ্ধতিতে থাকে না। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অন্যান্য দলের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন দেশে সরকারি দল নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ও যদি কোন রাজনৈতিক দল স্ব উদ্যোগে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, তাহলে এটি হবে তাদের জন্য ব্যর্থতা। বিভিন্ন দলের বিভিন্ন দাবি থাকবে। দাবিগুলো নির্বাচনের কর্মসূচিতে উল্লেখ করে জণগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমই নির্বাচন। যদি সেসব দাবি জনপ্রিয় হয়, তাহলে তারা নির্বাচিত হবে। কিন্তু নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া ঠিক হবে না। গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যাকা- নিয়ে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, বিএনপি আগেই বলে দিয়েছে চাঁদাবাজ, দখলদার, দুষ্কৃতিকারীদের সাথে বিএনপির সাথে সম্পর্ক নাই। হত্যাকান্ডে জড়িতরা যে দলের কর্মী হোক, তাদেরকে আইনের মাধ্যমে শাস্তি পেতে হবে। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আশা করি অন্তর্তীকালীন সরকার আগামী ফ্রেব্রুয়ারি মাসেই নির্বাচন করাবে। নির্বাচনটা অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে হোক এটা বিএনপি চাচ্ছে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রসঙ্গে কৃষকদলের সাবেক এই নেতা বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, বিশেষ করে তখন যখন সরকারটি গঠিত হয়েছে ২০২৪ পরবর্তী সময়ে বিএনপি ও ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে। অনেকেই মনে করছেন, অন্তবর্তী সরকার হিসেবে এই সময়টি দেশের জন্য গৌরবের হলেও সরকার এখনো তার অবস্থান দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। এই সময়ে জনগণের প্রত্যাশা স্পষ্টÑএকটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক, এবং সার্বজনীন জাতীয় নির্বাচন। বিশেষ করে ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করেছে, তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি বৈধ ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার গঠন জরুরি।
আগামী সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রার্থী হওয়ার বিষয়েও সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, আমি চুয়াডাঙ্গার সন্তান, ছাত্রদলের শীর্ষপদে কাজ করেছি, কৃষকদলের আহবায়ক হিসেবে দলকে সুসংগঠনিত করেছি, এই আসন থেকেই দু’বার এমপি ছিলাম। ভবিষ্যতে নির্বাচন করতে হলে আমি এই আসন থেকেই করব, দেশের অন্য কোথাও না। তিনি আরো বলেন বেগম জিয়াসহ জাতীয় নেতারা অতীতেও তারা তাদের নিজ জেলা থেকে নির্বাচন করেছেন, আমিও তার বাইরে কেউ না। তাই আমি চুয়াডাঙ্গা-১ আসন থেকেই আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হবো। আওয়ামী লীগের অতীত ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপির এই শীর্ষনেতা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কলকাতায় একটি পার্টি অফিস খুলেছে, যদিও সাইনবোর্ড ব্যবহার করেনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশে গিয়ে পার্টি অফিস খোলা রাজনৈতিক দৈন্যতার পরিচয়। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের দল হয়ে এই ধরনের কাজ দেশের মানুষের কাছে অগ্রহণযোগ্য। তিনি আরও বলেন, ১৫-১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ভারতের প্রতি দাসসুলভ মনোভাব দেখিয়ে এসেছে। তারা ভারতের রাজনীতিকে নিজের রাজনীতি মনে করে। দেশীয় রাজনীতি ছেড়ে বিদেশে গিয়ে যদি রাজনীতি করতে হয়, সেটা একটি ব্যর্থতার পরিচয়। এখন যারা আওয়ামী লীগের কর্মী ওর ছোটখাটো নেতারা দেশে আছে, তারা মানুষের সঙ্গে থাকতে চেষ্টা করছে, কিন্তু নেতৃত্বের ৮০ শতাংশই আজ বাইরে পালিয়ে গিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ১৬ বছর যেভাবে খুনগুম করেছে তা দেশের মানুষ দেখেছে। তারা স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং দেশের মানুষ তাদেরকে উৎক্ষাত করেছে। আমি মনে করি তারা কখনোই আর নির্বাচন করতে পারবে না বা দেশে আসতে পারবে না। এসময় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন, আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ সাইফুল ইসলাম, জেহালা ইউনিয়নের সাবেক জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আসিরুল ইসলাম সেলিম, আইনজীবি সমিতির চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি শামিম রেজা ডালিম, চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আশরাফ বিশ্বাস মিল্টু, সহ-সাধারণ সম্পাদক পিনু মুন্সী, জেলা যুবদল সদস্য অমিত হাসান রবিন, যুবদল নেতা ফজলু হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মখলেচুজ্জামান মখলেচ, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুনজরুল জাহিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী আশরাফ রনি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনিচুর রহমান রিবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তৌফাতুর রিংকু, , প্রকাশনা সম্পাদক জুয়েল রানা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ওয়াহেচ আলামিন, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আবু নোমান, সহকারী কোষাধ্যক্ষ শাকিল আহমেদ শুভ, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আতিকুর রহমান বিদ্যুৎ, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা সাইফুল ইসলাম জীবন, রাহানুল কবির বাপ্পি, শেরেগুল ও কাজল, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এখলাচ মুন রায়হান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাঁধন বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মেহেদী হাসান সাজু, সদর থানা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক আল বেলাল, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক বাপ্পা, পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আতিকুর রহমান বাচ্চু জাতীয় গণতান্ত্রীক দলের চুয়াডাঙ্গা জেলা সভাপতি রানা হামিদ, সিনিয়র সহ সভাপতি আরিফুল ইসলাম রনি, সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ আলী, জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্র পরিষদের চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শাখার সভাপতি সাজিদুর রহমান সুজন, সহ-সভাপতি নয়ন, সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ শিবলু, সহ-সাধারণ সম্পাদক আতিকুর হক নেওয়াজ, সাংগঠনিক সম্পাদক তুহিন জোয়ার্দ্দার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল আমিন শুভ, চুয়াডাঙ্গা পৌর শাখার সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, সিনিয়র সহ-সভাপতি সুমন, সহ-সাধারণ সম্পাদক ইন্নাল হোসেন ও বাদশা আলী, সহ-প্রচার সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম ও সহ-দপ্তর সম্পাদক ইমরান আলী, আলমডাঙ্গা উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ন-আহবায়ক সামিউল হাসান সানী দলীয় নেতাকর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময় শেষে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বেলা সাড়ে তিনটায় বেনাপোল এক্সেেপ্রস ট্রেনে ঢাকার উদ্দেশ্যে চুয়াডাঙ্গা ত্যাগ করেন।