চুয়াডাঙ্গায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় রেকর্ড ৮ জনের মৃত্যু : সিভিল সার্জন বলেছেন একজন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত রোগী একের পর এক মারা গেলেও সিভিল সার্জন কৌশলে তা আড়াল করছেন। গতকাল সোমবার হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ৮ জন মারা গেলেও রাতে সিভিল সার্জন বলেছেন, চুয়াডাঙ্গায় সোমবার একজন মারা গেছেন। যে একজনের বলা বলা হচ্ছে তিনি গত রোববার সদর হাসপাতালের রেডজোনে মারা গেছেন অর্থাৎ একদিন পর জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ ওই রোগীর ব্যাপারে জানালো। একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড ৮ জনের মৃত্যু দেখলো জেলাবাসী। এদিন উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা যায়নি।
এদিকে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলেও নমুনা টেস্টের আইডির সাথে না মিললে চলে যাচ্ছে উপসর্গের খাতায়। অপরদিকে করোনা নমুনা পরীক্ষার টাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর থেকে এক শ্রেণির কর্মচারী চিকিৎসা সেবাদানে নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্যবিভাগ গতকাল সোমবার নতুন ১৮৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছে। এ নিয়ে জেলায় মোট নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৯শ ১৫ জনের। ১৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে সোমবার। এনিয়ে মোট ২২ হাজার ৬শ ২৯ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ১৯৫ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে ২৬ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১২৯ জন। সোমবার আরও ৫৫ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ৪ হাজার ১শ ৬১ জন। বর্তমানে সক্রিয় রোগীর মধ্যে হাসপাতালে রয়েছেন ৯০ জন, বাড়িতে রয়েছেন ১হাজার ৬শ’ ৯৫ জন। নতুন যে ২৬ জন সোমবার শনাক্ত হয়েছেন তার মধ্যে সদর উপজেলার ৯ জন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ৫ জন, দামুড়হুদা উপজেলার ৪ জন ও জীবননগর উপজেলার ৮ জন। সিভিল সার্জন গতরাতে যে তথ্য দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, এদিন চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা ১৮৩ জন। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গাতে ১৬৫ জন, চুয়াডাঙ্গার বাইরে ১৮ জন। গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে যে ৮ জন মারা গেছেন তারা হলেন- চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার রায়সা গ্রামের ৭৮ বছর বয়সী বৃদ্ধা বাহারুন্নেছাকে গত ২০ জুলাই সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে নমুনা পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ হলে নেয়া হয় হাসপাতালের রেডজোনে। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে মারা যান তিনি। আলমডাঙ্গা উপজেলার যাদবপুরের সাইফুল ইসলাম নামের ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ সর্দি, কাশি ও জ্বরে ভুগছিলেন। গত ২৩ জুলাই তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নেয়া হয়। ওই দিন র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে নমুনা পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ হলে নেয়া হয় হাসপাতালের রেডজোনে। গতকাল সোমবার ভোর ৪টার দিকে মারা যান তিনি। দামুড়হুদা উপজেলার কলাবাড়ি গ্রামের ৪৪ বছর বয়সী আব্দুস সামাদ গত ১৮ জুলাই কোভিড-১৯ পজিটিভ আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে গত ২২ জুলাই সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের রেডজোনে ভর্তি করা হয়। গতকাল সোমবার ভোর পৌনে ৫ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। আলমডাঙ্গা উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের ৬৯ বছর বয়সী দাউদ হোসেন কয়েকদিন যাবত জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। তার অবস্থার অবনতি হলে গত ৬ জুলাই সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই দিন র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে নমুনা পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ হলে নেয়া হয় হাসপাতালের রেডজোনে। গত রোববার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে মারা যান তিনি। দামুড়হুদা উপজেলার নতুন বাস্তবপুর গ্রামের সকিনা বেগম করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ জুলাই সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের হলুদজোনে ভর্তি করা হয়। ওইদিন র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে নমুনা পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ হলে নেয়া হয় হাসপাতালের রেডজোনে। গতকাল সোমবার বিকেল সোয়া ৬ টার দিকে ৬০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়। আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা গ্রামের মসতারা বেগম বেশ কিছুদিন যাবত জ্বর, ঠান্ডায় ভুগছিলেন। তার অবস্থার অবনতি হলে গত ২৪ জুলাই সকালে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই দিন কর্তব্যরত চিকিৎসক র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে নমুনা পরীক্ষা করলে করোনা পজিটিভ হলে নেয়া হয় হাসপাতালের রেডজোনে। গত সোমবার বিকেল ৬ টার দিকে ৪৫ বছর বয়সের এই নারীর মৃত্যু হয়। আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর গ্রামের হাবিব (৫৫) গত ১৫ জুলাই কোভিড-১৯ পজিটিভ আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে গত ১৮ জুলাই সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের রেডজোনে ভর্তি করা হয়। গতকাল সোমবার রাত পৌনে ৮ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ঈদগাপাড়ার কুতুব উদ্দিন কয়েকদিন যাবত সর্দি,কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হলে গত ৩০ জুলাই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটের হলুদ জোনে ভর্তি করা হয় তাকে । পরদিন ৩১ জুলাই র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে নমুনা পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ হলে নেয়া হয় হাসপাতালের রেডজোনে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১ দিকে মারা যান তিনি। এদিকে সোমবার হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ৮ জন মারা গেলেও রাতে সিভিল সার্জন বলেছেন, চুয়াডাঙ্গায় সোমবার একজন মারা গেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলেও একদিন পর নমুনা টেস্টের আইডির সাথে না মিললে চলে যাচ্ছে উপসর্গের খাতায়। অর্থাৎ গতকাল সোমবার যে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের নমুনা টেস্টের আইডিগুলো আজ মঙ্গলবার অনলাইনের মাধ্যেমে মিলাবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। যদি অনলাইনে তাদের আইডি না মেলে তাহলে সেই ব্যক্তির রিপোর্টকে উপসর্গ হিসেবেই দেখাবে স্বাস্থ্য বিভাগ। অর্থাৎ এই রিপোর্ট একদিন পর স্বাস্থ্য বিভাগের খাতায় উঠবে। যা ইতোপূর্বে হয়ে আসছে। যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন তাদের আইডির সাথে অনলাইনে না মিললে উপসর্গের খাতায় নাম ঊঠছে, তাহলে তাদের করোনা কিভাবে পজিটিভ হলো এই প্রশ্ন এখন স্বাস্থ্য সচেতন মহলের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন, হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পরদিন সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে তাদের নমুনা টেস্টের আইডি চেক করে। যদি নমুনা টেস্টের আইডির সাথে না মেলে তাহলে সেই ব্যক্তির রিপোর্টকে উপসর্গ হিসেবেই দেখানো হচ্ছে। এটা আমিও জানিনা কিভাবে কি করা হচ্ছে। এই বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নাই। প্রতিবেদককে সিভিল সার্জনের নিকট বিস্তারিত জেনে নিতে বলেন তিনি।

Comments (0)
Add Comment