চুয়াডাঙ্গায় ফেরার পথে ফরিদপুরে দুর্ঘটনা : দাদা-নানি ও ফুপা নিহত : মা ছোট বোনসহ ৫ স্বজন গুরুতর আহত

স্টাফ রিপোর্টার: নরসিংদী থেকে চুয়াডাঙ্গায় ফেরার পথে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় চুয়াডাঙ্গার বৃদ্ধ বিয়াই ও বিয়াইনসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। নাতনির বউভাত অনুষ্ঠান শেষে ফেরার সময় ফরিদপুরের মধুখালী আড়পাড়ায় ট্রাকের সঙ্গে যাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই দুজন ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন প্রাণ হারান। এ দুর্ঘটনায় চুয়াডাঙ্গার আরও পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছেন। গত শনিবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন চুয়াডাঙ্গা রেলপাড়ার মোমেনা খাতুন, আলমডাঙ্গার ব-বিল গ্রামের মুন্সি মোশারফ হোসেন ও মোশাররফ হোসেনের জামাই একই উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের আসাদুল হক। মোমেনা খাতুন ও মুন্সি মোশারফ হোসেনের লাশ তাদের নিজনিজ গ্রামে গতকাল রোববার সন্ধ্যার পর দাফন করা হয়। আসাদুলের লাশ আজ দাফন করা হবে।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানায়, আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার ব-বিল গ্রামের মুন্সি মোশারফ হোসেনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ৭-৮ মাস আগে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার স্ত্রী আছিয়া খাতুন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স। তাদের বড় মেয়ে স্মৃতি খাতুনের বিয়ে গত বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা বণিক সমিতির কমিউনিটি সেন্টারে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন হয়। বরের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। সেখানে গত শনিবারের বউভাত অনুষ্ঠানে মাইক্রোবাসযোগে চুয়াডাঙ্গা থেকে ১০-১২ জন যান। এদের মধ্যে ছিলেন কনের মা, দাদা, নানি, ছোট বোন, মামা, ফুপাসহ নিকটজনরা। বউভাত অনুষ্ঠান শেষ করে তারা বিকেলে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশে রওনা দেন। রাত দেড়টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুরের মধুখালীর আড়পাড়া এলাকায় পৌঁছালে ট্রাকের সঙ্গে তাদের মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়। ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশের করিমপুর থানার এসআই আবদুর রহিম জানান, মধুখালীর আড়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকটবর্তী মহাসড়কের গতিরোধকের কাছে সংঘর্ষের ঘটনায় মাইক্রোবাসটির দুই যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিহতরা হলেন, কনের দাদা আলমডাঙ্গার ব-বিল গ্রামের মুন্সি মোশারফ হোসেন ওরফে মাবুদ মুন্সি (৭০) ও চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের রেলপাড়ার মোকাররম হোসেন ওরফে মন্টু সর্দারের স্ত্রী কনের নানি আমেনা খাতুন (৬৫)। গুরুতর আহত হন পাঁচজন। এরা হলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের দাউদ মল্লিকের ছেলে কনের ফুপা আসাদুল হক (৩৫), মা চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আছিয়া খাতুন (৫০), ছোট বোন প্রীতি খাতুনসহ (১৬) নিকটাত্মীয় মিনারুল ইসলাম (৪৫), খায়রুল ইসলাম (৪৫) ও আলফাতুন (২৭)। মিনারুলকে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও অন্যদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিকটাত্মীয় ছানোয়ার মুন্সি জানান, রোববার সন্ধ্যায় আসাদুল হকের অবস্থা মুমূর্ষু হয়ে উঠলে নিকটজনরা তাকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। মানিকগঞ্জ এলাকায় পৌঁছালে রাত ৮টার দিকে তিনি মারা যান। অন্যরা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাস ও  ট্রাকটিকে জব্দ করেছে পুলিশ। তবে  ট্রাকের ড্রাইভার পালিয়ে গেছে। ময়নাতদন্তসহ যাবতীয় দাফতরিক নিয়মকানুন শেষে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় নিহত দুজনের লাশ আলমডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গার নিজ নিজ গ্রামে দাফন সম্পন্ন হয়। আসাদুল হকের লাশ রাতেই নিজগ্রাম এনায়েতপুরে নেয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে আজ সোমবার তার দাফন সম্পন্ন হবে। এদিকে, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ রিয়াজুল ইসলাম টোটন গতকাল রোববার সন্ধ্যায় রেলপাড়ার নিহত মোমেনা খাতুনের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমাবেদনা জানান।

 

Comments (0)
Add Comment