চুয়াডাঙ্গায় বিষাক্ত মদপানে ৬ জনের মৃত্যুর পরে আরো দুইজনের মৃত্যুর গুঞ্জন: চিকিৎসাধীন আরোও চারজন

স্টাফ রিপোর্টার:চুয়াডাঙ্গা জেলায় বিষাক্ত মদপানে প্রাণহানির ঘটনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আটজনে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের কাথুলী গ্রামের হায়াত আলী (৫০) ও গাইদঘাট রেলপাড়ার মুকুল (৩০) নামে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও চারজন।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে হায়াত আলীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিষাক্ত মদপানে তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। স্থানীয়রা জানান, হায়াত আলী দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত ছিলেন।

অন্যদিকে, গাইদঘাট এলাকার মুকুলও নিয়মিত মাদক সেবন করতেন বলে স্থানীয়দের দাবি। রবিবার রাত ১১টার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পরিবার ও এলাকাবাসীর আপত্তির মুখে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও লাশ দাফন করা হয়।

বৃহস্পতিবার রাতে ডিঙ্গেদহ বাজার এলাকায় একাধিক ব্যক্তি একত্রে মদ পান করেন। এরপর তারা একে একে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
শনিবার (১১ অক্টোবর) প্রথমে দুইজন এবং রোববার আরও চারজনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে চারজনের মরদেহ পরিবারের সদস্যরা গোপনে দাফন করেছেন।

মৃত ব্যক্তিরা হলেন— সদর উপজেলার নফরকান্তি গ্রামের খেদের আলী (৪০), খেজুরা গ্রামের সেলিম (৪০), পিরোজখালী গ্রামের লালটু ওরফে রিপু (৩০), শংকরচন্দ্র গ্রামের শহীদ (৪৫), ডিঙ্গেদহ গ্রামের সামির (৫৫) ও সরদার লালটু (৫২

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বর্তমানে আরও চারজন অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে একজনকে সোমবার উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়া রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সোমবার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।
সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ জানান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টক্সিকোলজি বিভাগ বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এমনকি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়াও তারা বহন করতে প্রস্তুত।

তিনি বলেন, “যারা এখনো গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তারা দ্রুত সদর হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। না হলে জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা ও সহায়তা দেবে।”

এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোকের পাশাপাশি তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ডিঙ্গেদহ বাজারে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে মদ বিক্রি চলছে, কিন্তু প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন,
“বছরের পর বছর ধরে এখানে মদ বিক্রি হচ্ছে— কেউ কিছু বলে না। এখন আটজনের প্রাণ গেল, তাও কি প্রশাসন নড়বে না?”

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান জানান,
“গতকাল পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত ছিলাম, আজ কাথুলীর হায়াত আলীর মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। গাইদঘাটের মুকুলের দাফনের বিষয়েও আমরা খোঁজ নিচ্ছি।”

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ও অ্যালকোহলের উৎস অনুসন্ধানে তদন্ত চলছে। প্রয়োজনে অন্যান্য মরদেহও উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের আওতায় আনা হবে।