স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিষাক্ত অ্যালকোহল/স্পিরিট পান করে ৬ জন ব্যক্তির মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত মাস্টারমাইন্ডসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে ১১৭ বোতল বিষাক্ত ও মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যালকোহল/স্পিরিট উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১০ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ তারিখে চুয়াডাঙ্গা সদর থানাধীন ডিঙ্গেদহ বাজারস্থ একটি আড়তের পিছনে লাল্টু মিয়া (৪৮), শহীদ (৪৫), সেলিম (৩৮), লাল্টু (৪২), খেদের আলী (৫৫) এবং ছমির হোসেন (৫৫) সহ ৬ জন ব্যক্তি অ্যালকোহল/স্পিরিট জাতীয় নেশাদ্রব্য পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে ও তারিখে এঁরা সকলে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন।
এই ঘটনায় নিহত লাল্টু মিয়ার ভাই বাদী হয়ে ১৩ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি মামলা (মামলা নং-১৪, ধারা-৩০৪-ক পেনাল কোড) দায়ের করেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলার পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, সদর থানা, সাইবার ইনভেস্টিগেশন সেল এবং ডিবি চুয়াডাঙ্গার একাধিক টিম ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন এবং আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান শুরু করে।
অভিযানের অংশ হিসেবে, গত ১৫ অক্টোবর তারিখে পুলিশ মোঃ জুমাত আলী (৪৬) নামে একজনকে চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেফতার করে। এরপর, আজ ১৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে মামলার অন্যতম প্রধান আসামী মোঃ ফারুক আহমেদ এ্যালকো ফারুক (৪০)-কে ঝিনাইদহ জেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল (সিসিআইসি) টিম গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারের সময় আসামী ফারুক আহমেদের হেফাজত থেকে ১১৭ (একশত সতের) বোতল মেয়াদ উত্তীর্ণ অ্যালকোহল/স্পিরিট উদ্ধার করা হয়। অবৈধভাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ বিষাক্ত পদার্থ নিজ দখলে রাখায় তার বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ সদর থানায় পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে আসামী ফারুক আহমেদ এ্যালকো ফারুক স্বীকার করেছে যে, সে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে (লাইসেন্স বিহীন) হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার নামে মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যালকোহল/স্পিরিট বিক্রয় করে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করছে। সে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন এলাকার হোমিও দোকান ও মাদকসেবীদের নিকট এই বিষাক্ত পদার্থ সরবরাহ করত।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আসামী ফারুক আহমেদ এ্যালকো ফারুক-এর সরবরাহকৃত এই মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যালকোহল/স্পিরিট পান করার ফলেই ৬ জন ভিকটিম বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ জানিয়েছে, জনস্বার্থে এ ধরনের অপরাধ দমনে তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগেও জেলা গোয়েন্দা শাখা, চুয়াডাঙ্গা অবৈধভাবে হোমিও চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যালকোহল/স্পিরিট সরবরাহকালে ফারুক আহমেদ এ্যালকো ফারুককে হাতেনাতে গ্রেফতার করে মামলা দায়ের করেছিল।