চুয়াডাঙ্গায় ভারত ফেরত তিন করোনা রোগীর রেফার্ড : আতঙ্ক

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তিন ভারত ফেরত রোগীর রেফার করার ঘটনায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত বুধবার তাদের রেফার করা হলেও বিষয়টি জানানো হয়নি কর্তৃপক্ষকে। এমনকি ঘটনাটি জানতেন না স্বয়ং সিভিল সার্জন, আরএমও এবং করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সভাপতিও। ফলে তারা কিভাবে নিজ নিজ এলাকায় গেলেন তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। কেননা তাদের সংস্পর্শে গিয়ে আরও অনেকে করোনা আক্রান্ত হতে পারেন। ছড়িয়ে যেতে পারে ভাইরাসটি। গত বুধবার ভারত ফেরত তিন রোগীকে নিজ জেলা মেহেরপুর ও রাজশাহীতে রেফার করেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মারভিন অনিক চৌধুরী। ঢাকায় ট্রেনিংয়ে থাকা আরএমও ডা. ফাতেহ আকরামের নির্দেশ পেয়ে রেফার করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীকে রেফার্ডের আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সিভিল সার্জন, আরএমও এবং কোভিড-১৯ জেলা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সভাপতিকে (জেলা প্রশাসক) অবগত করার কথা থাকলেও মানা হয়নি এসব নিয়মনীতি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কোভিড-১৯ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত জেলা পর্যায়ের কমিটির করণীয় সম্পর্কিত সভায় হাসপাতালে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন এসব অনিয়মের কথা তুলে ধরেন।
ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, বুধবার বিকেলে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে তিনজন করোনা আক্রান্ত রোগীকে রেফার্ড করা হয়েছে। সন্ধ্যার আগেই তারা হাসপাতাল থেকে চলে গেছে। তবে রেফার্ড এর আগে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। পরে ৭টার দিকে স্টাফদের কাছে বিষয়টি জানতে পারি। এরপর ডা. মারভিন অনিক চৌধুরীর কাছে মোবাইল করলে তখন তিনি বিস্তারিত আমাকে বলেন। ডা. রবিন আরও বলেন, আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কম ব্যবহার করি। রাত সাড়ে ৭টার দিকে ওই চিকিৎসকের রেফার্ড রোগীদের তথ্য দেখতে পাই। সিভিল সার্জন করোনা আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ট্রেনিংয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। আমি ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে আমাকে কিংবা ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জনকে রেফার্ডের আগে জানানো উচিত ছিল। ওই রোগীগুলো কিভাবে গেলো সেটা বড় বিষয়। কারণ কারোর সংস্পর্শ হলে তারা করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়াও যে হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়ে থাকে সেই জেলার সিভিল সার্জনকে আমরা অবগত করেই রোগী পাঠায়।
এ বিষয়ে ডা. মারভিন অনিক চৌধুরী বলেন, সব নিয়মনীতি মেনেই রোগীদের রেফার্ড করেছি। ঢাকায় ট্রেনিংয়ে থাকা আরএমও ডা. ফাতেহ আকরাম মোবাইলে আমাকে ওই তিন রোগীকে রেফার্ডের জন্য নির্দেশ দেন। মূলত এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় রেফার্ড করা হয়েছে। আমি তার (আরএমও) কথামতো নিয়মনীতি মেনে এবং রেফার্ড করার আগে ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন এবং ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী) ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন স্যারকে মোবাইলের মাধ্যমে জানিয়েছি। এর মধ্যে দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও একজনকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। তারা সন্ধ্যার আগেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রাইভেট কার ভাড়া করে চলে যায় বলে জেনেছি।
চুয়াডাঙ্গা ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন বলেন, কখন রেফার্ড করেছে আমি তা জানি না। তবে রাত ৭টার দিকে মোবাইলে ডা. মারভিন অনিক চৌধুরী রেফার্ডের বিষয়ে জানান। চুয়াডাঙ্গা ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ঘটনাটি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে হবে বলে তিনি জানান।

Comments (0)
Add Comment