চুয়াডাঙ্গা শহরের দু’প্রান্তের দুই অভাগিনীর করুণ ছবি : সন্তানের অত্যাচারে বাড়িছাড়া ‘মা’

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা শহরের দক্ষিণ হাসপাতালপাড়ার সুলতানা রাজিয়া ও সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার আহিনূর বেগম। তাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক বা চেনাজানা না থাকলেও একই শহরে বসবাস করা ওই দুজনই ‘মা’। দুুজনের পরিণতিও মিলে হয়েছে এক। নিজেদের বাড়ি-ঘর সব থাকলেও তাদের যায়গা হয়নি সেখানে। সন্তানদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করেও দিয়েছে ছেলে। পৃথক দুটি ঘটনায় সন্তানদের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক মামলাও করেছেন অভাগিনী দুই মা।

সুলতানা রাজিয়া চুয়াডাঙ্গা শহরের দক্ষিণ হাসপাতাল পাড়ার মৃত হারুন অর রশিদের স্ত্রী। ছেলে সুলতান আহমেদ প্রায়শই তার মাকে মারধর করেন। ঘরের জিনিসপত্রও জোর করে অন্যত্র বিক্রি দেন। মা সুলতানা রাজিয়াকে মারধর করে ঘরে থাকা প্রায় তিন লাখ টাকা মূল্যের জিনিসপত্র অন্যত্র বিক্রি করে দেন সুলতান। এ ঘটনায় গত ১১ অক্টোবর ছেলে সুলতান আহমেদের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন সুলতানা রাজিয়া। ওই মামলায় আসামি সুলতান আহমেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশ দেন আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাজেদুর রহমান। গত ১৮ অক্টোবর পুলিশ সুলতান আহমেদকে গ্রেফতার করে। পরদিন আদালত থেকে সুলতান আহমেদ জামিনে মুক্ত হন। জামিনে মুক্ত হওয়ার তিনদিন পর বাড়ির ভেতরে থাকা আনুমানিক এক লাখ টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরণের ফলজ গাছ কেটে বিক্রি করে দেন সুলতান আহমেদ। এ বিষয়েও গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

মামলা প্রসঙ্গে সুলতান আহমেদ বলেন, আমি মায়ের ওপর অত্যাচার করি ঠিক না। মা বাড়ির জমি অন্য সন্তানদের নামে লিখে দিয়েছেন। আমি থাকবো কোথায়? এজন্য আমি ওই বাড়িতে উঠেছি। এ ব্যাপারে সুলতান আহমেদের বোন লাইলা বানু বলেন, আমার মায়ের তিন পুত্রসন্তান। এর মধ্যে মা সুলতান আহমেদকে জমি দেননি বলে তাকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন। জমি দিয়েছেন অন্য দুই সন্তানকে। মা কারো প্রতি অন্যায় করেননি। বরং আমার ভাই মায়ের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেয়ার পরও জমি দাবি করছেন। তার নিজের নামে আলাদা বাড়িও রয়েছে।

এদিকে, অপর এক ‘মা’ চুয়াডাঙ্গা শহরের সাদেক আলী মল্লিক পাড়ার হাশেম আলীর স্ত্রী আহিনূর বেগম। গত ২১ অক্টোবর বুধবার তার ছেলে শাহিন শেখ ও পুত্রবধূ ময়না খাতুনের নামে চুয়াডাঙ্গা আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় উল্লেখ করা করা হয়েছে, ছেলে শাহিন শেখ মাদকাসক্ত। তার নেশার টাকার জোগান দিতে না পেরে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে এ মাকে। শুধু বাড়িই ছাড়তে হয়নি, ছেলের হাতে মারও খেতে হয়েছে তাকে। চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারায় মায়ের ওপর ক্ষুব্ধ হন ছেলে শাহিন শেখ। একপর্যায়ে মা আহিনূর বেগমকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন শাহিন। ঘরে থাকা মায়ের ৫০ হাজার টাকার সাংসারিক জিনিসপত্র বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। এ মামলাতেও শাহিন শেখের বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, যদি সত্যিই এটি হয়ে থাকে, তাহলে সেটা চরম অন্যায়। আর এ অন্যায়কারীকে কখনোই ছাড় দেয়া সম্ভব না। শুক্রবার এ ধরণের একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশি তদন্তের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Comments (0)
Add Comment