চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বহির্বিভাগে রোগীদের জিম্মি করে চাওয়া হচ্ছে টাকা : উত্তেজনা

স্টাফ রিপোর্টার: চোর ও দালালের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনরা। একদিকে দালালরা রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে; আর অন্যদিকে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা। কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না তাদেরকে। গতকাল হাসপাতালের বহিঃবিভাগের চিকিৎসক কনসাল্টেন্ট অর্থপেডিক ডা. আব্দুর রহমানের নিকট চিকিৎসা নিতে আসা বেশ কয়েকজনের নিকট আগে চিকিৎসা পায়িয়ে দেয়ার কথা বলে টাকা দাবি করে চিহ্নিত দালাল জুয়েল। এতেই রোগী ও স্বজনদের সাথে জুয়েলের তর্কবিতর্ক হলে হাসপাতালেই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশে খবর দিলেও পুলিশ আসেনি।
এদিকে রোগী ভাগিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে গেলেও তাদের দালাল হিসেবে আইনের আওতায় নেয়া সম্ভব হয় না। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুপারিশে জরুরি বিভাগে কাজের সুযোগ পাওয়া স্বেচ্ছাসেবকরাই বেশি বেপরোয়া।
এদিকে গতকাল সোমবার সকালে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আলমডাঙ্গা উপজেলার কুলপালা গ্রামের আজিজুর রহমানের স্ত্রী কহিনুর বেগম বলেন, পড়ে গিয়ে বুকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ডা. আব্দুর রহমানের নিকট চিকিৎসা নিতে এসেছি। এখানে ডাক্তারের রুমের সামনে থাকা (গেটম্যান) জুয়েল ৫শ টাকা দাবি করে বলেন, এখানে ডাক্তার দেখাতে হলে টাকা দিয়ে দেখাতে হবে। সরকারি হাসপাতালে টিকেট কেটে ডাক্তার দেখাবো, অতিরিক্ত টাকা কেন দেবো? এছাড়াও শুরু আমার সাথেই না, এখানে আসা সব রোগীদের সাথে দুর্দ্ব্যবহার করছে।
সদর উপজেলার ভান্ডারদোহা গ্রামের আকুব্বরের স্ত্রী হাসুরা খাতুন বলেন, ভাঙা পা নিয়ে ডাক্তার দেখানোর জন্য ডাক্তারের চেম্বারের আসলে ঙুয়েল আমার নিকট ১শ টাকা দাবি করে বলে, টাকা দিলে আগে দেখিয়ে দেবো এবং এখানে দেখাতে হলে টাকা দিয়ে দেখাতে হবে। আমার সাথে সে খারাপ ব্যবহার ও করেছে।
অপর দিকে আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে রাইহান বলেন, আমি ডা. আব্দুর রহমানের কাছে এসেছি। এ সময় জুয়েল ওষুধের কার্টুন নিয়ে যাওয়ার সময় একজন বৃদ্ধ নারীকে ধাক্কা দেয় ইচ্ছেকৃতভাবে। আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও হাসপাতাল থেকে বের হলেই আমাকে মারধর করবে বলেও হুমকি দেয় জুয়েল।
তিনি আরও বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে আসা প্রায় সব রোগীর নিকট টাকা চাচ্ছে জুয়েল। আমি সাথে সাথে সদর হাসপাতালের আরএমও এবং নিয়োজিত পুলিশকে বিষয়টি জানায়। সরকারি হাসপাতালের স্টাফরা আসার আগেই জুয়েল পালিয়ে যায়। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি। কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না দুঃখ প্রকাশ করেছেন রোগীদের অনেকেই। এতে হাসপাতালে চোর-দালালের উৎপাত বাড়তেই থাকবে বলে আশঙ্কা তাদের।
এদিকে গত বছরের (১ নভেম্বর) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কুষ্টিয়া সার্কেলের অভিযানে হাসপাতাল থেকে অবৈধভাবে সরকারি ওষুধ নেয়ার অভিযোগে জুয়েল রানাকে আটক করে। পরে তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক মাসের কারাদ-ও দেয়া হয়। জেল থেকে এসে আবারো হাসপাতালে দৌরাত্ম শুরু করে। কদিন আগেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আবারও সতর্ক করে জুয়েল রানাকে। কোন লাভ হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে টাকা ছাড়া চিকিৎসা মেলে না চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। চিকিৎসা প্রদানের আগেই রোগীর স্বজনদের সাথে করা হয় চুক্তি। আশঙ্কাজনক বা সঙ্কটাপন্ন রোগীদের কিছুটা ছাড় দেয়া হলেও কোনোভাবেই নিস্তার নেই বিষপান করা রোগীদের। বাদ পড়েন না ছোটখাটো কাটাছেঁড়া বা হাত-পা ভাঙা চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীরা। প্রথমে চিকিৎসার মালামাল কেনা বাবদ এবং পরে বকশিসের নাম করে দাবি করা হয় মোটাঅঙ্কের টাকা। দাবিকৃত টাকা না দিলে রোগী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে অনেকটা জোর করেই টাকা হাতিয়ে নেন সেচ্ছাসেবকরা। এছাড়া রোগী ভাগিয়ে বিভিন্ন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে স্বয়ং স্বেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধেও। এমনকি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষাও করেন তারা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বর্তমান চিত্র এমন হলেও তা দীর্ঘদিনের নয়। প্রতিদিন এমন অহরহর অভিযোগ জমা পড়লেও রাত পোয়ালেই অভিযোগগুলো অজানা কারণে চাপা পড়ে যায় বলে ভুক্তোভুগীদের অভিযোগ।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এএসএম ফাতেহ আকরাম বলেন, গতকাল সকালে বহিঃবিভাগ থেকে এক রোগী টাকা নেয়ার বিষয়টি জানায়। আমি সাথে সাথে আমাদের স্টাফদেরকে পাঠালে জুয়েল পালিয়ে যায়। জুয়েল হাসপাতালের কেউ না। এর আগেও তাকে সতর্ক করা হয়েছে। আগামীকাল থেকে দালালদের হাসপাতালে দেখা মাত্রই পুলিশে দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সেচ্ছাসেবকদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের পাহাড়। খুব তাড়াতাড়ি সেচ্ছাসেবকদের ঢেলে সাজানোসহ শক্ত ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ বলে জানান তিনি।

Comments (0)
Add Comment