স্টাফ রিপোর্টার: মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভারত সরকারের দেয়া আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স দুটি অযত্ন-অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ও পৌরসভায়। প্রয়োজনীয় লোকবল ও অপ্রতুল যন্ত্রপাতির কারণে এক বছরেও অ্যাম্বুলেন্স চালু করা সম্ভব হয়নি। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স চালানো ব্যয়বহুল হওয়ায় উদ্যোগটি মুখ থুবড়ে পড়েছে। দামি অ্যাম্বুলেন্স দুটি খোলা আকাশের নিচে ও গ্যারেজ বন্দি রয়েছে। রোগি বহনের মত পরিস্থিতি নেই। সাধারণ মানুষ আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পৌরসভা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে অ্যাম্বুলেন্স যেন তাদের একটি বোঝা। স্থানীয়রা বলেন, দামি অ্যাম্বুলেন্স দুটি চালু হলে স্বাস্থ্য সেবায় কিছুটা গতি আসবে। যা চালানোর ব্যবস্থা নেই তা নিয়ে ঘর বোঝাই করে রাখার দরকার নেই খেলনার মত। জেলার মানুষের কাজে না লাগলে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার দরকার দ্রুত সময়ে। বিএমএ সভাপতি বলেন, প্রয়োজন না থাকলে অন্যত্র দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হোক। তানাহলে যে জেলায় মেডিকেল কলেজ আছে সেখানে পাঠানো হোক। ২০২১ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা ও সদর হাসপাতাল একটি করে অত্যাধুনিক আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ পায়। ২০২১ সালের ২৭ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে একটি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেয়। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা পৌরসভাকে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্স দেয়। অ্যাম্বুলেন্স দুটি ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে আসেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অ্যাম্বুলেন্স আনার পর যেখানে রাখা হয় ঠিক সেভাবে সেখানেই পড়ে রয়েছে। সচল রাখতে শুরুতে স্টাট দেয়া হলেও এখন সম্ভব হচ্ছেনা। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার অ্যাম্বুলেন্সটির ব্যাটারি বসে যাওয়ার কারণে স্টাট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। একই অবস্থা সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সটিরও। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে করোনাকালিন সময়ে ভারত সরকার বাংলাদেশে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স উপহার দেয়। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স চুয়াডাঙ্গার দুটি প্রতিষ্ঠান পায়। বর্তমানে অ্যাম্বুলেন্স দুটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সটি সিভিল সার্জন অফিসের সামনের রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে। আর পৌরসভারটি গাড়ির গ্যারেজে বন্দি অবস্থায় রাখা আছে। দুটি অ্যাম্বুলেন্স দীর্ঘদিন স্টাট না দেয়ার কারণে অচল হয়ে যাচ্ছে। প্রশিক্ষিত ও প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকা ও ব্যয় বহন অসম্ভ হওয়ায় সেবা অত্যাধুনিক এ সেবা কার্যক্রমটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। অ্যাম্বুলেন্স পরিচালনায় দক্ষ জনবল সংকট, রোগি পরিবহন ব্যায় বহুল হওয়ায় মুখ থুবড়ে পড়েছে কার্যক্রম। জীবনরক্ষায় অসুস্থ্য রোগিদের বহনকারী অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স দুটি আজও চালু হয়নি। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অর্ধেক রয়েছে। ৪০-৫০ হাজার টাকার মত ভাড়া চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত রোগি নিতে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার অ্যাম্বুলেন্সটি ভারতীয় সহকারী হাই-কমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাটী আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার একজন কর্মকর্তা জানান এই অ্যাম্বুলেন্সটি গ্রহণ করতে একটি অনুষ্ঠান করা হয়। যেখানে প্রায় ৫০ হাজার টাকারও অধিক খরচ হয়েছে। উদ্বোধন শেষে পৌরসভার গাড়ির গ্যারেজে সেই থেকে বন্দি রাখা হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সটি। বন্দিদশায় থেকে মরিচা পড়ছে, মাকশা-পোকামাকড়ের নিরাপদ আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সের চারটি চাকায় হাওয়া না থাকায় চাকা চারটি বসে গেছে। দেখার মত লোক না থাকায় সজিনা গাছ ছায়া দিচ্ছে মাঝে মাঝে। আর নিজের মত করে আগলে রাখার চেষ্টা করছে। আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স থাকা সত্বেও কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় চুয়াডাঙ্গার ১৩ লাখ সাধারণ মানুষ এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, লোকবলের অভাবে হাসপাতাল চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। রোগিদের সেবা দিতেই তারা হিমসিম খাচ্ছে। অতিরিক্ত লোক দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের সেবা কেমন করে দেবে। তাই, অ্যাম্বুলেন্স দেখে রাখতে হলে নিয়মিত একটি লোক দিতে হবে। লোকবলের অভাবে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে জোড়াতালি দিয়ে। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আগে প্রয়োজনীয় লোকবল দিয়ে স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করা হোক। তারপর অন্য কোন চিন্তা। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান চাঁদ বলেন, ভারত সরকারের দেয়া অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগি বহনে সেবা প্রত্যাশিদের ঢাকায় যাতায়াতে ৪০-৫০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এত টাকা খরচ করে কারও পক্ষে রোগি ঢাকায় নেয়া সম্ভব হবেনা। পৌরসভার পক্ষে লাখ লাখ টাকা ভুর্তিকি দেয়াও সম্ভব নয়। তাই সাধারণ মানুষকে এই সেবা দেয়াও সম্ভব নয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক সাকো বলেন, গাড়ি রাখার ছাউনি না থাকায় বাইরে পড়ে আছে অ্যাম্বুলেন্সটি। এ ভাবে গাড়িটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গাড়িটি গ্যারেজে রাখতে পারলে ভাল হত। বিএমএ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মার্টিন হিরোক চৌধুরি জানান, রোগি বহনের জন্য সদর হাসপাতালে একটি অ্যাম্বুলেন্স দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত, অযত্ন ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। এখানে কাজে না লাগলে অন্য জেলায় পাঠিয়ে দেয়া হোক। অন্য কোনো মেডিকেল কলেজে পাঠিয়ে দেয়া হোক। অথবা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করা হোক। তারপরও যেন অ্যাম্বুলেন্সটি চালু করা যায়। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক বলেন, সাধারণ অ্যাম্বুলেন্সের চেয়ে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সের খরচ তিন গুণ বেশি। এ পর্যন্ত কেউ ভাড়া নিতে আসেনি। অ্যাম্বুলেন্সে যন্ত্রপাতি অনেক কম রয়েছে। তা দিয়ে চালানো সম্ভব নয়।