চুয়াডাঙ্গার দুটি পৌর নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলো ছিলো যেমন

দুই পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীর ভোট বর্জন

স্টাফ রিপোর্টার: ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতিতে অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশেই ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছিলো চুয়াডাঙ্গার দুটি পৌরসভায়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাও বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। কিন্তু ভোট শুরুর মাত্র এক ঘণ্টার মাথায় সকাল ৯টায় জীবননগর ও দুপুর ১২টার পর আলমডাঙ্গা পৌরসভায় পুরো ভোট প্রক্রিয়া আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এ সময় মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, তাদের কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকটাই অসহায় অবস্থায় দেখা যায়। এদিকে কেন্দ্র দখল, পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া ও জোর করে নৌকা প্রতীকে ভোট নেয়ার অভিযোগে জীবননগর পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহজাহান কবির ও আলমডাঙ্গা পৌরসভার মীর মহিউদ্দিন ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। দুটি পৌরসভায় দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী অনেক অভিযোগ করলেও ভোট গ্রহণের শেষ সময় পর্যন্ত তারা মাঠেই ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, আলমডাঙ্গা পৌরসভার ১৫টি কেন্দ্রের সব ক’টিতে সকাল থেকেই ভোটারদের উপস্থিতি বেশ ভালো ছিলো। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। নারী ভোটারদের সঙ্গে শিশুরাও দলে বেঁধে এসেছিলো ভোটের উৎসব দেখতে। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রতিটি কেন্দ্রেই ছিলো ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়। এরপর ক্রমশ কমতে থাকে। দুপুর ১২টায় নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকেরা অনেকটা একযোগে পৌর এলাকার বেশির ভাগ কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করে। এ সময় সাধারণ ভোটারদের অনেকেই কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে পড়েন। এমনকি বেশ কয়েকজন টেলিভিশন সাংবাদিক আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে সরাসরি খবর পরিবেশনের জন্য প্রস্তুতি নিলেও তারা দ্রুত ওই কেন্দ্র থেকেও বেরিয়ে আসেন। এই কেন্দ্রের সামনে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

মীর মহিউদ্দীনের নির্বাচন বর্জন

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জেলা জাসদের সভাপতি সবেদ আলীর ভাষ্যমতে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ চলে। এরপর এজেন্টদের বের করে দেয়া, জোর ও মারধর করে নৌকায় ভোট নিয়ে নেয়া চলতে থাকে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘হঠাৎ করেই দেখি কেন্দ্রগুলোতে ম্যাজিস্ট্রেট নেই, পুলিশের ভূমিকা নেই। প্রকাশ্যে মোবাইল ফোন প্রতীকের এজেন্টদের গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয়। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি। এই নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’ দুপুরে নিজ বাড়িতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির প্রার্থী মীর মহিউদ্দিন। তিনি অভিযোগ করেন, সকাল ১০টার পর সব কটি কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের বের করে দেয়া হয়। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। এ সময় পাশে থাকা মীর মহিউদ্দিনের বড় মেয়ে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ আদনিন নাহার অভিযোগ করেন, তিনিসহ পরিবারের মোট ৩৫ জন ভোটার ভোট দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ছাড়া বাকি ৩৪ জনের কেউ ভোট দিতে পারেননি। নৌকার ব্যাজ বুকে পরা কয়েকজন নারী এসে হুমকি-ধমকি দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছেন। আদনিন বলেন, ‘ প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি তার অপারগতা প্রকাশ করেন।’ তবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা তারেক আহমেদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হয়েছে। প্রার্থীদের কেউই তার কাছে অভিযোগ করেননি।

শাহজাহান কবিরের নির্বাচন বর্জন

অপরদিকে, জীবননগর পৌরসভায় কেন্দ্রগুলো প্রথম থেকেই আওয়ামী লীগের কর্মীরা নিয়ন্ত্রণে নেন। প্রথম থেকেই ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। মাত্র একটি কেন্দ্রে একজন এজেন্ট যাওয়ার ১০ মিনিট পর নৌকার লোকজন তাকে বের করে দেন। সকাল সাড়ে নয়টায় উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান কবির। লিখিত বক্তব্যে তিনি করেন, ধানের শীষের এজেন্টকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে না দেয়ায় প্রশাসনের কাছে জানালে কর্মকর্তারা বলেন, ‘ওপরের নির্দেশ আছে, নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি কেন্দ্রে জোর করে নৌকায় সিল মারতে আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন পরস্পরের সহযোগিতা করেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের জানানো সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তাই এই প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করলাম।’
জীবননগর পৌরসভা নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মুনিম লিংকন অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, জীবননগর পৌরসভায় এবার ভোটের উৎসব হয়েছে। ভোটের অনিয়ম নিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি।

Comments (0)
Add Comment