জানাজানি হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাপাত্তা : ঝুলে আছে নির্মাণ কাজ

চুয়াডাঙ্গায় পাথরের বদলে ইটের খোয়া দিয়ে ভবন ঢালাই দেয়ার অভিযোগ

খাইরুল ইসলাম: চুয়াডাঙ্গায় পাথরের বদলে ইটের খোয়া দিয়ে ভবন ঢালাই দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনিয়মের বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় ভবন নির্মাণ কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পালিয়ে যায়। ফলে ঝুলে আছে ভবন নির্মাণ কাজ। সাড়ে ৪ বছর আগে বন্ধ হয় জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের ভবন নির্মাণ কাজ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি নানা সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন দাখিল করে প্রায় দুই বছর আগে। জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের ভবন নির্মাণ না হওয়ায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি দুর্নীতি করে পালিয়ে যাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পুরাতন হাসপাতালপাড়ায় ২০১৮ সালের মার্চ মাসে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের ৪তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২য়তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়। ৩য়তলার পিলারগুলোর ঢালাই শেষ হওয়ার পর ছাদের শাটারিং করার সময় ভবন নির্মাণে অনিয়নের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও স্থানীয়রা জানতে পারেন। পাথরের বদলে ইটের খোঁয়া দিয়ে ঢালাই কার্যসম্পাদন করা হচ্ছিলো। ইটের খোঁয়া দিয়ে ঢালাইয়ের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ না করেই রাতের আধারে পালিয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ভবন নির্মাণ কাজ।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসসূত্রে জানা যায়, ভবন নির্মাণের মন্ত্রণালয়ের মূল কার্যাদেশে পাথর দিয়ে ঢালাইয়ের কথা থাকলেও ইটের খোঁয়া দিয়ে ঢালাই কাজ চলছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ের মূল কার্যাদেশের আদেশ থেকে পাথর দিয়ে ঢালাই দেয়া অংশের কাজটুকু সরিয়ে ফেলে। ওই স্থানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত করে ইটের খোঁয়া দিয়ে ঢালাইয়ের আদেশের কাগজ।

৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ তলা বিশিষ্ট জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের ভবন নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিরাজগঞ্জের মেসার্স পিয়াস কনস্ট্রাকশন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের শুরুতে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেছে। ভবনে গাড়ি গ্যারেজ, হলরুম, জেলা ও সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের ব্যবস্থা ছিল। দুই পাশে সিঁড়ি ও লিফটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিলো ভবনে।

এলজিইডি, গণপূর্ত ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী দিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। কমিটি নানা সুপারিশ দিয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে। তদন্ত কমিটির সুপারিশে ছিল চার তলা ভবন নির্মাণ না করে ৩য়তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হলে কোনো সমস্য হবে না।

চুয়াডাঙ্গা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের উপ-পরিচালক এবিএম শরিফুল হক বলেন, আমি অল্প দিন চুয়াডাঙ্গায় যোগদান করেছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা উন্নয়ন কমিটি ও আমাদের বিভাগীয় মিটিংয়ে উপস্থাপন করেছি।

চুয়াডাঙ্গা এলজিইডি’র সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ সানা জানান, তদন্ত কমিটিতে আমরা তিনজন ছিলাম। প্রতিবেদন দাখিল করেছি। আমরা ভবন নির্মাণের জন্য সুপারিশ করেছি। ভেবেছি এতদিনে কাজ শেষ হয়ে গেছে।

চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদের বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মূল কার্যাদেশ অনুসারে কাজ করেনি। তারা কার্যাদেশের কাগজ পাল্টে পাথরের জায়গায় ইটের খোয়া ব্যবহারের কাগজ লাগায়। পুনরায় ভবন নির্মাণের আদেশ আসলে কাজ শুরু হবে। আশা করি অল্প দিনেই আদেশ চলে আসবে।

কাজটি তদারকির দায়িত্বে থাকা পিয়াস কনস্ট্রকশনের ঠিকাদার আব্দুস সালামের পার্টনার আনোয়ার হোসেন পাথরের বদলে ইটের খোয়া ব্যবহার ও কাজ বন্ধের বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে তিনি কাজ চালু করার বিষয়ে বলেন জিনিসপত্রের দাম উর্ধ্বগতি হওয়ায় কাজটি করা সম্ভব হচ্ছে না।

Comments (0)
Add Comment