জীবননগর সরকারি খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ভালো চালের সাথে নিম্নমানের চাল ভেজাল করার অভিযোগ

জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলা সরকারি খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে খাদ্য গুদামে রক্ষিত ভালোমানের চালের সাথে একেবারে খাবার অনুপযোগী নি¤œমানের চান ভেজাল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বাজার থেকে নিম্নমানের চাল কিনে এনে ভালোমানের চালের সাথে দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল করে আসছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে খাবার অনুপযোগী নিম্নমানের এসব ভেজাল চাল ভিজিএফ, ভিজিডিসহ সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সুবিধাভোগী মানুষকে দেয়া হতো। অভিযোগ রয়েছে সুবিধাভোগী মানুষরা নিম্নমানের এ চাল খেতে না পেরে গো-খাদ্য হিসেবে অন্য যায়গায় বিক্রি করে দেন। প্রতিদিনের মতো গতকাল সোমবার সকালেও ভালো চালের সাথে নিম্নমানের চাল ভেজাল করার সময় বিষয়টি সাংবাদিকদের চোখে ধরা পড়ে।
একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলা খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা হিসেবে কাওসার হোসেন ও অফিস সহকারী রাকিব হোসেন যোগদানের পর থেকে নানা কৌশলে নৈশপ্রহরী মাসুদ আলম এবং শ্রমিক সর্দার রমজান আলীর মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছিলেন। খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা কাওসার হোসেন ও অফিস সহকারী রাকিব হোসেন দুর্নীতির মাধ্যমে তালিকাভুক্ত রাইচমিল মালিকদের নিকট হতে নি¤œমানের চাল কিনে তা সুবিধাভোগীদের মাঝে সরবরাহ করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রাইচমিল মালিক বলেন, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তাকে প্রতি কেজি ভালোমানের চালের অনুকুলে এক টাকা এবং খাওয়ার অনুপযোগী নি¤œমানের চালের অনুকুলে ৬-৭ টাকা হারে উৎকোচ দিতে হয়। উৎকোচ না দিলে তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে চাল নিতে চান না। আরও অভিযোগ রয়েছে, বাজার থেকে নিম্নমানের চাল কেনার পর খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কাওসার হোসেনের নির্দেশে ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত গুদামের শ্রমিক সর্দার রমজান হোসেনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন শ্রমিক খাদ্যগুদামের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে ভালো চালের সাথে ওই নিম্নমানের চাল ভেজাল করতেন। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে অপকর্ম চলতে থাকলেও সোমবার সকালে বিষয়টি সাংবাদিকদের চোখে পড়ে। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খাদ্য গুদাম কর্মকতা কাওসার হোসেন বলেন, ভিজিএফের চাল তৈরী করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাইচমিল মালিক বলেন, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা কাওসার হোসেন নিয়মিত অফিস না করে অধিকাংশ সময় বাইরে অবস্থান করেন এবং নৈশপ্রহরী মাসুদ রানা স্থানীয় হওয়ায় মিলমালিকদের নিকট থেকে উৎকোচের টাকা আদায় করে থাকেন। মাসুদ রানা নৈশপ্রহরী হলেও অফিস এলাকায় কর্মকর্তার বেশে চলাচল করে থাকেন। এলাকায় জনশ্রুতি আছে, মাসুদ রানা বর্তমানে কোটি টাকার বেশী সম্পদের মালিক।
ইউনিয়ন পরিষদের এক সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এবার ঈদুল ফিতরের আগে ভিজিএফের জন্য খাদ্য গুদাম থেকে একেবারে নিম্নমানের চাল দিয়েছিলো। যা খাবার অনুপযোগী ছিলো। এ কারণে ওই চাল ফেরত দেয়া হয়েছিলো।
জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে, ঈদের বিশেষ ভিজিএফ, ভিজিডি, ওএমএস, টিআর, জিআরসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে যে চাল সরবরাহ করা হয় তা একেবারে নিম্নমানের এবং খাওয়ার অনুপযোগী। এসমস্ত চাল বেশিরভাগ গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। এছাড়া ওজনে চাল কম দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব ব্যাপারে একাধিকবার খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্ত কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
একাধিক অভিযোগের ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা কাওসার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভালো চালের সাথে নিম্নমানের চাল ভেজাল করার অভিযোগ ঠিক না। ভিজিডির চাল সরবরাহের জন্য চাল গড় করে রিপ্যাক করা হচ্ছিলো।
তবে, সাংবাদিকদের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা সাংবাদিকদেরকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। আর এ সুযোগে চাল ভেজাল করার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা কৌশলে দ্রুত খাদ্য গুদাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।

 

Comments (0)
Add Comment